Daily News BD Online

ফুলবাড়ীতে মেয়র কর্তৃক প্রধান শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভসহ মানববন্ধন


আমিনুল ইসলাম, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি:

দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে পৌর মেয়র মাহমুদ আলম লিটন ও তার সহযোগি শোয়েব পাপ্পু কর্তৃক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তোজাম্মেল হোসেনকে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে বিক্ষোভসহ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে ফুলবাড়ী গোলাম মোস্তফা (জিএম) পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
মেয়র যতক্ষণ না প্রধান শিক্ষকের কাছে ক্ষমা চাইবেন ততক্ষণ পাঠগ্রহণ বর্জন করে বিদ্যালয় চত্বরে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া ঘোষণা শিক্ষার্থীদের।
মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) সকাল ১০ টায় বিদ্যালয় থেকে এক বিক্ষোভ মিছিল বের করে শিক্ষার্থীরা। পুলিশি বাঁধায় পড়ে বিক্ষোভ মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়। পরে বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে ব্যানার, প্লাকার্ডসহ ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন বিদ্যালয়ের অধ্যায়ণরত শিক্ষার্থীরা।
মানববনন্ধন কর্মসূচি চলাকালে বিদ্যালয়ের ১০ শ্রেণির শিক্ষার্থী সিহাব সংগ্রাম, ৯ম  শ্রেণির শিক্ষার্থী মারিফুল ইসলাম, ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থী রোমানা, ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী জাকারিয়া, ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থী ইসরাত, রুবাইয়া খাতুন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘শিক্ষক একজন গুরু। গুরুর সাথে অশোভনীয় আচরণ কারোই কাম্য নয়। ফুলবাড়ী পৌর মেয়র মাহমুদ আলম লিটন ও তার সহযোগি শোয়েব পাপ্পু গত ১৮ এপ্রিল বিদ্যালয়ে প্রধানমন্ত্রীর চাল বিতরণকালে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তোজাম্মেল হোসেনকে লাঞ্ছিত করেন। তার পাঞ্জাবি-পায়জামা খুলে নেয়ার হুমকি প্রদান করা হয়েছে।’
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. তোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘ফুলবাড়ী পৌর মেয়র আমাকে মুঠোফোনে জানান যে, প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ভিজিএফের চাল ১৮ এপ্রিল বিতরণ করা হবে স্কুলে। আমি তখন আমার পিয়নকে দিয়ে হলরুম খুলে দেই। যেহেতু আসন্ন এসএসসি পরীক্ষা উপলক্ষে বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষগুলো পরীক্ষা জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। তাই শ্রেণিকক্ষগুলো খুলে দেয়া হয়নি। আমি মেয়রকে আমার অফিস কক্ষে বসতে বলে আমি দিনাজপুর রওনা হই মিটিং এর উদ্দেশ্যে। দুপুর আড়াইটা ফিরে এসে দেখি সব শ্রেণিকক্ষ খোলা হয়েছে আমার অনুমতি ছাড়াই। তখন আমি আমার অফিস স্টাফ রাব্বী ও মহসিনকে বকাবকি করি। এসময় মেয়র মাহমুদ আলম লিটন ও তার সহযোগি শোয়েব পাপ্পু আমার ওপর মারমুখি হন। আমাকে অকথ্যভাষায় গালিগালাজ করেন। আর তার সহযোগী শোয়েব পাপ্পু যে অশ্লীল ভাষায় আমাকে গালাগালি করে তা মুখে আনা যাবে না। আমি প্রতিবাদ করতে গেলেই আমাকে মার খেতে হতো। বিষয়টি বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতিকে জানানো হয়েছে।’
শিক্ষার্থীদের মানববন্ধনের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা যে মানববন্ধন করবে, সেটি আমার জানা ছিল না। সোমবার (২৪ এপ্রিল) রাতে এক শিক্ষার্থীর মাধ্যমে জানতে পারি তারা এ ঘটনার প্রতিবাদে মানববন্ধন করবে।’
এব্যাপারে শোয়েব পাপ্পু বলেন, প্রধান শিক্ষককে কোনোভাবেই লাঞ্ছিত করা হয়নি বা কোনো প্রকার অশালীন ভাষায় কথাও বলা হয়নি।


প্রধান শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার কথা অস্বীকার করে ফুলবাড়ী পৌরসভার মেয়র মাহমুদ আলম লিটন বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার হিসেবে পৌরএলাকার ৪ হাজার ৬২১ জন অসহায় দুস্থের মাঝে বিতরণের জন্য ১৮ এপ্রিল জিএম স্কুলে বিতরণ করা হয়। এর জন্য আগের দিন প্রধান শিক্ষকের সাথে মুঠোফোনে অবগত করা হয়েছে। তখন প্রধান শিক্ষক বলেন, এসএসসি পরীক্ষার জন্য সিট প্ল্যান করা হয়েছে। সেজন্য রুমে বিতরণ করা যাবে না আপনি হলরুম খুলে দিচ্ছি সেখানে বিতরণ করেন। ১৮ এপ্রিল আমি সেভাবেই হলরুমে কার্যক্রম শুরু করি। তখন প্রধান শিক্ষক আমার সাথে দেখা করে দিনাজপুর চলে যান। প্রখর রোদের মধ্যে চাল বিতরণকালে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন আমি বিদ্যালয় ঘুরে দেখি ওই শ্রেণিকক্ষগুলোতে কিছু শিক্ষক প্রাইভেট পড়াচ্ছেন। তখন শ্রেণি কক্ষে ঢুকে দেখি কোনোপ্রকার সীট প্ল্যান করা হয়নি। তখন আমি পিয়নকে বলি শ্রেণিকক্ষগুলো খুলে দিতে। তখন তারা খুলে দেন। আমিসহ (মেয়র) দুইজন পুলিশ একটি গাছের নিচে বেঞ্চ নিয়ে বসেছিলাম। পরে আড়াইটায় প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে আসেন। তিনি এসে চিৎকার চেচামেচি শুরু করে দেন। তখন আমি প্রধান শিক্ষককে বলি যে শ্রেণিকক্ষগুলো আমি খুলিয়েছি। প্রচন্ড গরমের কারণে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছিল তাই। তখন প্রধান শিক্ষক আমাকে বলেন আপনি কে? সেসময় আমার সাথে থাকা শুভাকাঙ্খিরা বলেন আপনি মেয়র সাহেবকে চেনেন না উনি কে। তখন তাদেরকেও বলেন আপনি কে? আমি আমার স্টাফের সাথে কথা বলছি। এর একপর্যায়ে বাকবিতন্ডা শুরু হয় উভয়ের মধ্যে। সেখানে কোনোপ্রকার অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ করা হয়নি। প্রধান শিক্ষক নিজের গা বাঁচানো জন্য বিভিন্ন ধরণের কথা বলছেন। তিনিই (প্রধান শিক্ষক) সেদিনের পুরো পরিস্থিতির জন্য দায়ী। উপরোন্ত তিনি প্রধানমন্ত্রীর চাল বিতরণে অসহযোগিতা করেছে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ ওয়াসিকুল ইসলাম বলেন, ‘এমন বিষয়টি তার জানা নেই এবং এ বিষয়ে কেউ তাকে জানায়নি। অভিযোগ পেলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মিল্টন বলেন, ‘বিষয়টি সম্মানজনক সুহারার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হবে।’##


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন