- যুবসমাজসহ ছাত্র ছাত্রী হুমকির মুখে
জাকির হোসেন, নিয়ামতপুর (নওগাঁ) :
নওগাঁর নিয়ামতপুরে অবাধে ভারত থেকে চোরাই পথে আনা অবৈধ মোবাইল ফোন সেট বিক্রি হচ্ছে। উপজেলার সদরে, শিবপুর বাজার, ছাতড়া বাজার এবং বরেন্দ্র বাজারে গড়ে উঠেছে এসব অবৈধ চোরাই মেবাইল বিক্রির শক্তিশালী সিন্ডিকেট। প্রশাসনের নজরদারী এড়িয়ে কিভাবে এসব ফোন জনসম্মুখে বিক্রি করছেন তারা, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সচেতন মহল।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারতীয় সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে সহজেই মোবাইল ফোনগুলো নিয়ে আসছে চোরাকারবারিরা। সেখান থেকে হাতবদল হয়ে সেসব ফোন উপজেলার বিভিন্ন বাজারে ছড়িয়ে পড়ছে। চোরাই পথে আসা এসব মোবাইল বিক্রি করে আসছে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা। এতে করে গড়ে তুলছে টাকার পাহাড় আর এলাকায় আধিপত্য। ফলে মোটা অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। স্হানীয় প্রশাসন কোন প্রকার ব্যবস্হা গ্রহণ না করায় চোরাই মেবাইল বিক্রির পরিমাণ বেড়েই চলেছে। জেলা ডিবি পুলিশের অভিযানে এসব ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন সময় ধরা খেলেও আইনের ফাঁকফোকরে বের হয়ে এসে ফোন বিক্রির পরিমাণ আরও বেড়েই চলেছে।
উপজেলা সদরের বিভিন্ন শোরুমের মোবাইল বিক্রেতার সাথে কথা বলে জানা গেছে, চোরাই পথে আসা মোবাইলগুলো অর্ধেক দামে বিক্রির ফলে বেশিরভাগ মানুষ ওই ফোনগুলো কেনার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। ফলে সরকার যেমন রাজস্ব হারাচ্ছে তেমনি দামী ব্যান্ডের কোম্পানিগুলোও মুখ থুবড়ে পড়েছে।
কাজী এন্টারপ্রাইজের সুমন বলেন, কম দামে চোরাই ফোন পাওয়ায় শোরুমে মোবাইল বিক্রির পরিমাণ একেবারেই কমে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে মোবাইল সেট বিক্রি বন্ধ হয়ে যাবে।
মা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মুক্তার হোসেন বলেন, আমরা তাদের কাছে নিরুপায় হয়ে গেছি। মোবাইল ফোনের ডিসপ্লে সাজানো থাকলেও কাস্টমার নেই। এতে ব্যবসায় মন্দা দেখা দিয়েছে।
সচেতন মহলের গন্যমান্য ব্যক্তিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, স্কুল ও কলেজ ছাত্রছাত্রীরা এসব চোরাই মেবাইল কিনতে ভীড় করছে। হাতের কাছে সুলভ মূল্যে মোবাইল সেট পাওয়ায় ওয়েব গেম খেলতে অভিভাবকদের প্রতি মোবাইল কেনার বায়না ধরছে ছাত্রছাত্রীরা। কিনে না দিলে অনেক সময় ঘটছে দূর্ঘটনা। তাছাড়া মোবাইলে গোটা পৃথিবী হাতের মুঠোয় থাকায় ঘটছে নানা অপরাধ।
নিয়ামতপুর সরকারি বহুমুখী মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর কবির বলেন, স্বল্প মূল্যে মোবাইল কিনতে পাওয়ায় স্কুলের ছাত্র ছাত্রীদের সকলের হাতে হাতে এখন মোবাইল। আর এ কারন ছাত্র ছাত্রীরা লেখাপড়ায় আগ্রাহ হারাচ্ছে। এমনকি তারা মোবাইলে বিভিন্ন ক্রাইমে জড়িয়ে পড়ছে। আমার মনে হয় সীমান্তবর্তী এলাকায় প্রশাসনের তদারকি বাড়ানোর পাশাপাশি স্হানীয় পর্যায়ে বিক্রেতাদের চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা নিলে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।
মোবাইল কিনতে আসা সাড়া গ্রামের মাসুদ রানা জানান, ওয়ান প্লাস ফোন কেনার জন্য উপজেলা সদরে এসেছি। ফোনের প্রকৃত মূল্য ৩০ হাজার হলেও ২০ হাজার টাকা দাম মিটিয়েছেন বলে জানান তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চোরাই মেবাইল বিক্রেতা বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ থেকে তারা এসব মোবাইল নিয়ে আসেন। মোবাইল প্রতি ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা লাভ হলেই বিক্রি করেন চোরাই মেবাইল সেট। অনেকে আবার আমাদের কাছ থেকে মোবাইল কিনে নিয়ে গিয়ে বেশি দামে বিক্রি করেন।
নিয়ামতপুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা তৎপর রয়েছি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্হা গ্রহণ করা হবে।