Daily News BD Online

অবৈধ লাইন, বৈধ রফাদফা !


শাহাদাত হোসেন মানিক, স্টাফ রিপোর্টার :


  • সংযোগ বিচ্ছিন্নের তিন দিনের মাথায় দেয়া হয় পুনঃসংযোগ
  • অবৈধ সংযোগ দিতে জমা দেয়া হয়নি রাইজার ও অভিযোগপত্র
  • তথ্য দিন ব্যবস্থা নেব- ব্যবস্থাপনা পরিচালক, তিতাস


বিশেষ অভিযানে বিচ্ছিন্ন করা হয় অবৈধ গ্যাস সংযোগ। খুলে নেয়া হয় সংযোগের রাইজার। কিন্তু রহস্যজনক কারণে অবৈধ সেই সংযোগটিই ফের লাগানো হয়। এর সব কিছুই রফাদফা হয়েছে দালালের মাধ্যমে। রাজধানীর উত্তরা এলাকায় ঘটেছে এমন ঘটনা। দালাল এবং তিতাস গ্যাসের স্থানীয় কর্মকর্তার এমন দফারফায় সহসাই মিলছে অবৈধ গ্যাস সংযোগ। আর তাই অনেকেই বলছেন অবৈধ গ্যাস সংযোগে দালালই ভরসা।

অভিযোগ রয়েছে, রাজধানী উত্তরার ৫ নং সেক্টরের ১/বি রোডের বাসায় নয়টি গ্যাসলাইন সংযোগ বিচ্ছিন্নের পরও অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে পুনঃসংযোগ দিয়েছেন তিতাস গ্যাসের ৮ নম্বর জোন অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো. শরিফুল ইসলাম। অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্নের তিন দিনের মাথায় বিশাল অঙ্কের অবৈধ লেনদেনের বিনিময়ে সংযোগ দেয়া হয় বলে জানায় সূত্র। তাছাড়া গ্যাস সংযোগটি বিচ্ছিন্নের পর অফিসে রাইজারসহ অভিযোগপত্র জমা দেয়ার নিয়ম থাকলেও আদৌ তা দেয়া হয়নি। অফিসে অভিযোগপত্র এবং রাইজার জমা না দিয়ে অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে পুনঃসংযোগ দিয়ে দেয়। আর এ কারণেই অফিসে রাইজারসহ অভিযোগপত্র জমা দেয়নি বলে সূত্রের দাবি। এ বিষয়ে ভিডিও ফুটেজ ও অডিও রেকর্ড সংরক্ষণে আছে।

জানা গেছে, গত ৩০ মার্চ রাজধানী উত্তরার ৫ নং সেক্টরের ১/বি রোডের নয় তলাবিশিষ্ট ১ নাম্বার বাসায় গ্যাসলাইন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে তিতাস কর্তৃপক্ষ। এ অভিযানের নেতৃত্বে মো. শরিফুল ইসলাম।

সূত্রের দাবি, অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্নের মাত্র তিন দিনের মাথায় দালাল সোহাগ জোয়ারদার তিতাসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো. শরিফুল ইসলামের সঙ্গে রফাদফা শেষে বাড়ির মালিকের কাছ থেকে অবৈধ অর্থ নিয়ে পুনঃসংযোগ দেয়ার ব্যবস্থা করে।
এ বিষয়ে শরিফুল ইসলামের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘আমার এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য নেই। আপনি ডিজি’র সাথে কথা বলেন।’

জানতে চাইলে তিতাসের ৮ নম্বর জোন অফিসের মহাপরিচালক (ডিজি) গোলাম ফারুক বলেন, ‘শরিফুল ইসলাম যে অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছেন সে বিষয়ে অফিসে কোনো অভিযোগপত্র জমা দেননি। তাছাড়া এ বিষয়টি নিয়ে আমরা অবগত নই।’
তিনি বলেন, নিয়ম আছে অবৈধ গ্যাস সংযোগ কাটা হলে জরিমানা করতে হবে। আর তিনি যে এখান থেকে টাকা নিয়ে সংযোগ দিয়েছেন এটা বড় অপরাধ।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তিনি (শরিফুল ইসলাম) আমার কথা বলবে কেন? আমি কি কিছু জানি নাকি। তিনি কেন আমার সঙ্গে কথা বলবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ঠিকাদার বলেন, শরিফুল ইসলাম সাহেব সেখানে রফাদফা করবে দেখেই অফিসে অভিযোগপত্র জমা দেয়নি। আমিও ইএসএস বিভাগ ও রাজস্ব বিভাগে গিয়ে অভিযোগপত্রটি খুঁজে দেখলাম। ৩০ মার্চ উত্তরা পাঁচ নম্বর সেক্টরের অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কোনো অভিযোগপত্র নেই। এ নিয়ে ইএসএস বিভাগে মিজানুর রহমান স্যারেও অনেক চেষ্টা করে অভিযোগপত্র খুঁজে পায়নি। অর্থাৎ এ বিষয়ে কোনো অভিযোগপত্রই জমা দেয়া হয়নি। হয়তো তিনি অভিযোগপত্র লেখেননি অথবা লিখেও চালাকি করে তার কাছে রেখেছেন।

জানা গেছে, আবাসিক বা বাণিজ্যিক যে কোনো ধরনের গ্যাস সংযোগ অবৈধ শনাক্ত হলে সেই গ্রাহককে ১২ মাসের (এক বছর) সমপরিমাণ বিল জরিমানা হিসেবে দিতে হয়। এ বিল তৈরি করা হয় ব্যবহৃত চুলার ওপর ভিত্তি করে। পাশাপাশি গ্রাহককে শনাক্তকরণের তারিখ থেকে সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণের তারিখ পর্যন্ত গ্রাহকের স্থাপিত গ্যাস সরঞ্জামের বিপরীতে ফ্ল্যাট রেটে গ্যাস বিল আদায় করা হয়। অবৈধ গ্যাসের অপব্যবহার রোধ, সুষম বণ্টন নিশ্চিত, গ্যাসের লোড সমন্বয় এবং সর্বোপরি রাজস্ব আয় বাড়ানোসহ বিভিন্ন পরিকল্পনায় প্রণয়ন করা হবে গ্যাস বিপণন বিধিমালা, ২০১৯। এরই মধ্যে এ নীতিমালার খসড়া তৈরি করা হয়েছে। খসড়া নীতিমালায় এসব বিধি রাখা হয়েছে। বর্তমানে খসড়া নীতিমালাটি পর্যালোচনা পর্যায়ে রয়েছে। চূড়ান্ত করার পর এটি গ্যাস আইন বাস্তবায়নে সহায়ক হিসেবে ব্যবহৃত হবে।

সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, সম্পূর্ণ চোরাইভাবে বাইপাস লাইন, মিটার ট্যাম্পারিং, খাতায় নাম-ঠিকানা না তুলেই অবৈধ গ্যাস সংযোগ ইত্যাদি নানা কৌশলে গ্যাস চুরি-লোপাটের ঘটনা অবলীলায় ঘটে চলছে। মাঝে মধ্যে সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে অভিযান চালানো হয়। কিন্তু, সংঘবদ্ধ গ্যাস-চোর-লুটেরাদের নানা ধরনের তদবিরের কারণে এসব অভিযান খুব একটা কাজে আসে না।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান, মার্কেট, বাসাবাড়ি, হাউজিং কমপ্লেক্স, বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র ও সিএনজি স্টেশনগুলোয় চোরাই গ্যাসের লাখ লাখ অবৈধ সংযোগ দিয়ে এবং অনেক জায়গায় অনুমোদনের অতিরিক্ত গ্যাস সরবরাহ করে এসব দুর্নীতিবাজ চক্র প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

পেট্রোবাংলা সূত্র জানায়, শুধু রাজধানীতেই এ রকম অবৈধ ও অনৈতিক সংযোগের সংখ্যা লাখ ছাড়িয়ে যাবে। এসব চোরাই-অবৈধ সংযোগ থেকে সরকার এক টাকাও রাজস্ব পাচ্ছে না। অথচ প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকা ভাগবাঁটোয়ারা করে খাচ্ছে লুটেরা চক্র।

জানতে চাইলে তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী মো. হারুনুর রশীদ মোল্লাহ বলেন, আপনাদের কাছে যা তথ্য আছে আমাকে দিন, আমি ব্যবস্থা নেব।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন