আব্দুল আলিম, সাপাহার নওগাঁ প্রতিনিধি :
নদীমাতৃক দেশ বাংলাদেশ। ভারতের ফারাক্কা ও গজল ডোবার বাঁধ ছাড়াও উজানে তৈরি করা ৪০ (চল্লিশ) ড্যাম ও ব্যারাজ পানির গতি পরিবর্তন করায় পানির অভাবে বাংলাদেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা নদী বিলীন হতে চলেছে। নদী হারিয়ে প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হতে চলেছে। বদলে যাচ্ছে ভূ-প্রকৃতি।প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট প্রতিকূলতা ও পরিবর্তনের কারণে এ দেশে দিনের পর দিন নাব্যতা হারিয়ে নদীগুলো হারাচ্ছে অস্তিত্ব।
নওগাঁর সাপাহার উপজেলা সীমান্তবর্তী এক সময়ের খরস্রোতা পুনর্ভবা নদী এখন শুকিয়ে খেলার মাঠে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন বিকালে ওই সীমান্ত এলাকার ছেলেরা শুকনো এই নদীগর্ভে নেমে বালির চরে ফুটবল খেলছে।
সরেজমিনে গত বুধবার বিকেলে নদী দেখতে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।
বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্ত:সীমান্ত নদী পুনর্ভবা ,এটি বাংলাদেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের দিনাজপুর জেলা এবং পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার একটি নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ২২৩কিলোমিটার ও গড় প্রস্ত ১০২মিটার, পুনর্ভবা নদীর প্রাচীন উৎস ব্রম্মনপুর বরেন্দ্র ভূমি।
অতিতে নদীটি তীব্র খরস্রোতা ও প্রায় সারাবছর নদীতে পানি প্রবহমান ছিল সে সময় নদী পাড়ের মানুষ ওই নদীর পানি দিয়ে মাঠে নানা রকমের ফসল উৎপাদন করত এবং চৈত্র বৈশাখ মাসে নদীর পানি কমে যাওয়ায় প্রতিবছর সীমন্ত এলাকার মানুষ ওই নদী হতে বিভিন্ন ধরণের প্রাকৃতিক মাছ শিকার করে থাকত। কালের বিবর্তনে সব কিছুই হারিয়ে গিয়ে বর্তমানে নদীটি দেখলে মনেই হবেনা যে এটি একটি খরস্রোতা নদী যেন বর্ষ কালে পানি নি:ষ্কাশনের একটি খালে পরিণত হয়েছে।
সাপাহার উপজেলার সীমান্তবর্তী উত্তর পাতাড়ী গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তিদের কাছে জানতে চাইলে তারা জানান যে, পাকিস্থান শাসনামল বা তারও পূর্ববর্তী সময়ে নদীটি সারাবছর প্রবাহমন থাকত সে সময় রাস্তাঘাটের উন্নয়ন না থাকায় এই নদীর বুকে নৌকা যোগে মানুষ বিভিন্ন হাটবাজারে গিয়ে তারা পণ্য ক্রয় বিক্রয় করত, তাছাড়া ও নৌকা সাজিয়ে বিয়ে ও আত্মীয স্বজনের বাড়ি বেড়াতে যাওয়া হতো। ভারত বাংলা বিভক্তের সময় ইন্দ্রা,মুজিব চুক্তি মোতাবেক এই নদীটি উভয় দেশের আন্ত:সীমানা চুক্তি হয়েছে। চুক্তি মোতাবেক নদীর মাঝখানে উভয় দেশের সীমানা, যখন যে অঞ্চল যে দিকে ভেঙ্গে নদীগর্ভে বিলিন হবে তখন সে অঞ্চল সেদেশের ভূখন্ড বলে বিবেচিত হবে এবং নদীর মাঝখানে সীমান্ত পিলার বলে ধরা হবে।
ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পুনর্ভবা নদীটি সাপাহার উপজেলার উত্তর পাতাড়ী গ্রামের কাবলীরঘাটে নেমে বাংলাদেশের আন্ত:সীমানা নদী হয়ে কলমুডাঙ্গা, পোরশার নিতপুর চাঁপাই নবাবগঞ্জের রোকনপুর হয়ে মহানন্দা নদীর মোহনায় মিলত হয়ে পদ্মা নদীতে পড়েছে।
এক কালের খরস্রোতা এই নদীটি এখন তার অতীত ঐতিহ্য ও সৌন্দর্যের গৌরব হারিয়ে শুকনো খাল ও খেলার মাঠে পরিণত হয়েছে। এলাকাবাসী শিক্ষিত সমাজ সহ সকল স্তরের মানুষের প্রানের দাবি নদীটি সরকারীভাবে নদীশাসন ও ড্রেজিং বা খনন করা হলে নদীটি আবারো তার পুরনো ঐতিহ্য ফিরে পাবে এবং পানির প্রবাহ ঠিক থাকলে নদীর পাড়ের লোকজন হাজার হাজার হেক্টর জমিতে সেচের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন করতে পারবে। যার ফলে এলাকাবাসীর আয়ের পথ উম্মচিত হবে এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে ।