মোঃ হাবিব মিয়া, নিকলী (কিশোরগঞ্জ) :
কিশোরগঞ্জের নিকলী হাওর ভ্রমণপিপাসুদের জন্য সৌন্দর্যের বিপুল পসরা সাজিয়ে বসে আছে হাওর। বর্ষার হাওর এখন যেন কূলহীন সাগর। চারদিকে বিশাল পানিরাশি। এ পানিরাশির বুকে বিচ্ছিন্ন গ্রামগুলোর একেকটাকে ছোট দ্বীপের মতো লাগে। দূর থেকে মনে হয়, কচুরিপানা হয়ে যেন পানিতে ভাসছে গ্রামগুলো। হাওরজুড়ে গলা ডুবিয়ে থাকে হিজল গাছের সারি। এই সৌন্দর্য মন কাড়ে যে কারও। পানির নিচ থেকে জেগে ওঠা করচের বন, হাঁসের ডিমের মতো সাদা ফল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা বরুন গাছ, কিংবা গাঙ্গেয় মিঠা পানিতে শুশুকের লাফ-ঝাঁপ দেখলে বিনোদিত না হয়ে পারা যায় না।
শুকনো মৌসুমে হাওর মানে মাইলের পর মাইল ফসলি জমি, ধূলোউড়া মেঠোপথ, রূপালি নদী। বর্ষায় এই পোলি নদীগুলোই ফুঁসে উঠে। দুই তীর ছাপিয়ে প্লাবিত করে ফসলি মাঠ। এই প্লাবিত মাঠই বর্ষার হাওর। প্রতি বর্ষাতেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ ঘুরতে আসে এই হাওরে। হাওর অধ্যুষিত অন্যতম একটি জেলা কিশোরগঞ্জ তার মধ্যে রয়েছে নিকলী হাওর।
বর্ষা মৌসুমে কিশোরগঞ্জের নিকলী হাওর থেকে যেতে পারে ইটনা মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম। নিকলীতে রয়েছে আরো বেশ কয়েকটা বেড়িবাঁধ। নির্মিত হচ্ছে উপজেলাগুলোর সংযোগ সড়ক। এসব বেড়িবাঁধ বা সড়কে দাঁড়িয়ে সামনের দিকে তাকালে ৩০-৩৫ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো গ্রাম চোখে পড়ে না। বাঁধ বা সড়কে দাঁড়িয়ে হাওর দেখা সাগর দেখার মতোই উপভোগ্য। এসব স্থানে বর্ষায় শত শত পর্যটক এসে ভিড় জমান।
হাওরে বর্ষা থাকে বছরের প্রায় ছয় মাস। পানি আসতে শুরু করে বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ থেকে। শেষ হয় আশ্বিন-কার্তিকে। এই পুরো সময় জুড়েই হাওরে পর্যটকদের ভিড় থাকে। তবে ঈদের সময় ভিড় বেশি বাড়ে। বেড়িবাঁধ ও উঁচু সড়ক ছাড়াও হাওরে পর্যটকদের দেখার মতো বেশ কিছু মনোরম জায়গা রয়েছে।
কিশোরগঞ্জে বেশ কয়েকটি রুটে হাওরে যাওয়া যায়। তবে সহজ হলো সায়েদাবাদ বা গোলাপবাগ থেকে বাসে অথবা কমলাপুর থেকে ট্রেনে সরাসরি কিশোরগঞ্জ শহরে। স্টেশনে নেমে সিএনজি বা অটো রিক্সায় সরাসরি চলে আসবেন নিকলী হাওর চন্তি নদীর ঘাট থেকে সোজা নৌকায়। এরপর শুরু হবে ধুকপুক ধুকপুকমানে ইঞ্জিনের শব্দ। এই শব্দের ওপরেই থাকতে হবে চব্বিশ ঘন্টার মতো। প্রথমে বিরক্তিকর মনে হলেও পরে কানের সাথে মানিয়ে যাবে।
নৌকায় উঠেই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন আগে কোথায় যাবেন। তবে প্রথমে মিঠামইনে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের দহলিজে একটু হাজিরা দিয়ে গেলেই ভালো। এরপর সোজা দিল্লির আখড়া। দিল্লির আখড়া পরিদর্শন শেষে পরের সময়টা কাটাতে পারেন একেবারেই পরিকল্পনা ছাড়া। সব কিছুই নির্ভর করবে পরিস্থিতি ও আবহাওয়ার ওপর। তবে সময়গুলো কাটবে হাওরের ভাসা পানিতেই। আপনি চাইলে দিনে দিনে হাওর ঘুরে জেলা শহরে ফিরতে পারবেন। তবে দিল্লির আখড়ায় গেলে ফিরতে রাত হয়ে যাবে। এ পরিস্থিতিতে বৃষ্টি না হলে ট্রলারের ছাদেই রাত কাটিয়ে দিতে পারেন।
তাছাড়া ট্রলারের ভেতরে তো ঘুমানোর ব্যবস্থা তো আছেই। ইচ্ছে করলে হাওর উপজেলাগুলোর ডাকবাংলোতেও রাত কাটানো যাবে। এরপর ভোরে ভাসমান তাবু নিয়ে ধুকপুক করতে করতে নৌকার নাক ঘুরিয়ে দিতে পারেন হাওর উপজেলা ইটনা, কিম্বা অষ্টগ্রামের দিকে।
Tags
বাংলাদেশ