মহাদেবপুর (নওগাঁ) কৃষি বিভাগের প্রদর্শনী খেতে ব্লাস্ট রোগের আক্রমণ ঠেকাতে কীটনাশক প্রয়োগ করছেন নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার ফাজিলপুর গ্রামের বোরো চাষি শম্ভু চরণ |
নওগাঁর জেলার মহাদেবপুর উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় ফলন্ত বোরো ধানের খেতে একের পর এক হানা দিয়ে চলেছে নেক ব্লাস্ট বা ধানের গলাপচা রোগ। ফলে এবার ফলন বিপর্যয়ের আশংকা দেখা দিয়েছে। এমনকি চাষিদের সঠিক পদ্ধতিতে ফসল চাষে উদ্বুদ্ধ করতে স্থাপিত প্রদর্শনী খেতেও ব্লাস্ট রোগ দেখা দিয়েছে। কিন্তু স্থানীয় কৃষি বিভাগের কাছে এ সংক্রান্ত কোন তথ্যই নেই। চাষীরা বলছেন, একের পর এক জাতের কীটনাশক প্রয়োগ করেও এর প্রতিকার মিলছেনা। কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কর্মতৎপরতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
উত্তরাঞ্চলের শস্যভান্ডার খ্যাত এই উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে এবার ২৮ হাজার ৪১০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছিল। আবাদ করা হয়েছে ২৮ হাজার ৩০০ হেক্টরে। এরমধ্যে উন্নত ফলনশীল উফশী জাতের ২৭ হাজার ২২০ হেক্টর ও হাইব্রীড জাতের এক হাজার ৮০ হেক্টর। এবার চারাগাছ খুব ভালো হয়েছে। ইতিমধ্যেই মাঠে মাঠে ধানে দুধ দেখা দিয়েছে। সবাই ধারণা করেছিলেন এই উপজেলায় এবার বোরোর বাম্পার ফলন হবে। কৃষি বিভাগ এবার এখানে এক লক্ষ ৯০ হাজার ৩৬২ মেট্রিক টন ধান উদপাদন হবে বলে আশা করছিল। কিন্তু ব্লাস্ট রোগের আক্রমণে এই পরিমাণ অর্ধেকে নেমে আসতে পারে বলে চাষিরা আশংকা প্রকাশ করেছেন।
উপজেলার খাজুর গ্রামের বোরো চাষি সাংবাদিক লিয়াকত আলী বাবলু জানান, তিনি এবার ৮ বিঘা জমিতে বোরো ধান লাগিয়েছেন। এরমধ্যে দেড় বিঘা জমিতে ব্লাস্ট রোগ দেখা দিয়েছে। আক্রান্ত খেতের ধান প্রথমে হালকা হলুদ বর্ণ ধারণ করছে। দু-তিন দিনের মধ্যে ধান গাছ মরে যাচ্ছে। তারেদ, পাওয়ার জিংক, ট্রুপার প্রভৃতি নামের কীটনাশক ব্যবহার করেছেন। কিন্তু তাতেও সুফল মিলেনি। তার অভিযোগ, ভেজাল কীটনাশকে হাট বাজার সয়লাব হয়ে গেছে। দফায় দফায় বিভিন্ন কোম্পানির কীটনাশক প্রয়োগ করেও কাজ হচ্ছে না। পাকার আগ মূহুর্তে এভাবে ধানখেত নষ্ট হওয়ায় শঙ্কিত তিনি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, গত মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে প্রতিকূল আবহাওয়া, মেঘাচ্ছন্ন আকাশ, ঘন ঘন বৃষ্টিপাত, রাতে তাপমাত্রা কম ও দিনে ভ্যাপসা গরম হওয়ায় উপজেলার মাঠে মাঠে বোরো ধানগাছে কম-বেশি ছত্রাকের আক্রমণ দেখা দিয়েছে। এতে খেতের ধান আস্তে আস্তে সোনালী ও খয়েরি রঙ ধারণ করে শুকিয়ে ধান চিটা হয়ে যাচ্ছে।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের ফাজিলপুর ব্রাকের মোড় পাড়ায় রয়েছে কৃষি বিভাগের বোরো ধান বীজ উদপাদনের প্রদর্শনী খেত। ১৫ বিঘা পরিমাণ প্রদর্শনী খেতের মধ্যে ৬ বিঘা চাষ করেন ওইগ্রামের শম্ভু চরণ। সরেজমিনে সেখানে গিয়ে দেখা গেল তিনি সেই জমিতে কীটনাশক স্প্রে করছেন। তিনি জানালেন, এই প্রদর্শনী খেতের মাঝে মাঝেই ব্লাস্ট রোগ দেখা দিয়েছে। এর জন্য কৃষি বিভাগ বিনামূল্যে যে কীটনাশক সরবরাহ করেছে তা প্রয়োজনের তুলনায় এক আনারও কম। আরো পনর আনা পরিমাণ বিভিন্ন জাতের কীটনাশক বাজার থেকে কিনে প্রয়োগ করেছেন। নেকব্লাস্ট রোগ থেকে খেত রক্ষায় প্রতিষেধক হিসেবে সিনজেনটা কোম্পানির ফিলিয়া, বায়ার ক্রপসাইন্স এর নাটিভো, আটো ক্রপ কেয়ারের ট্রুপার, এসিআইয়ের ব্লাসটিনসহ বেশকিছু কোম্পানির কীটনাশক ও তরল বিষ ব্যবহার করেছেন। এখন প্রয়োগ করছেন পটাশ। কিন্তু কীটনাশকগুলো ভেজাল হওয়ায় কোনো সুফল মিলছে না। এতে এই প্রদর্শনী খেত তৈরির মূল লক্ষ্যই ব্যাহত হচ্ছে। এখানে আর আশাতীত ফলন হবেনা বলে তিনি মনে করেন।
এই প্রদর্শনী খেতটি দেখভালের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মামুন হোসেন এখানে ব্লাস্টের আক্রমণের বিষয়টি জানেন না বলে জানান। জানতে চাইলে, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোমরেজ আলীও একই কথা জানান। এই উপজেলায় এখন পর্যন্ত কত হেক্টর জমিতে ব্লাস্টের আক্রমণ হয়েছে তাও তিনি জানাতে পারেননি। তিনি বলেন, দিনে মেঘাচ্ছন্ন আকাশ ও ভ্যাপসা গরম, রাতে ঠান্ডা ও কুয়াশারা কারণে খেতে নেকব্লাস্ট রোগের প্রাদুর্ভাব হয়। কিন্তু এই উপজেলায় এ রোগ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এজন্য চাষিদের ধানখেতে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি মজুদ রাখা এবং সঠিকমাত্রায় কীটনাশক প্রয়োগের পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।