ডালিম কুমার দাস টিটু : লক্ষ্মীপুর জেলা শহরের ঝুমর সিনেমা হল থেকে মজিদ মাষ্টার বাড়ির দরজা পর্যন্ত এই রাস্তাটি নির্মাণের জন্য রাস্তাটিকে প্রাথমিকভাবে খোঁড়া হলেও দেড় থেকে দুই বছর অতিবাহিত হলেও রাস্তাটির কাজ অনিশ্চয়তার মধ্যে আছে বলে মনে করেন শংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ। বর্তমানে রাস্তাটি এখন মরন ফাঁদে রুপ নিয়েছে । জেলা শহরের পৌরসভা হওয়ায় এই রাস্তাটি দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার ছোট বড় অনেক যানবাহন চলাচল করে । রাস্তাটির পাশে রয়েছে সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন অফিস স্কুল মাদ্রাসা এবং হাসাপাতালসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ,রয়েছে জেলাপ্রশাসক ও পুলিশ সুপারের বাসভবন । একটি ডেলিভারি রোগি নিয়ে যাওয়ার সময় হাসপাতালে পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাস্তায় রোগির পরিস্থিতি চরমে পৌঁছে যায়। এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত রাস্তাটি নির্মান করে দূর্ভোগ থেকে মুক্তি চায় পথচারী চালক এবং এলাকাবাসী। একটি জেলার প্রাণ জেলা শহর । যেখানে থাকে পুরো জেলার সকল কর্মকান্ড । সেখানে লক্ষ্মীপুর জেলা শহরের পৌরসভার ঝুমুর হল থেকে মনা মাষ্টার বাড়ীর দরজা প্রায় দুই কিলোমিটার রাস্তা যেন মরন ফাঁদ । এই রাস্তাটি নির্মাণের জন্য টেন্ডারের মাধ্যমে স্কিান্দার মির্জা শামিম নামে এক ঠিকাদারকে দেওয়া হয়। কিন্তু রাস্তাটি শুরু করার পর থেমে যায় । ২০১৯ সালে টেন্ডার হওয়া এই রাস্তাটি ২০২১ সালে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ২০২২ সালে এসে রাস্তাটির কাজ শুরু করতেই অনীহা আর বাহানা দেখাতে শুরু করলো ঠিকাদার মির্জা শামিম স্কিন্দার। তার এই থেমে যাওয়া লক্ষ্মীপুর এর সাধারণ মানুষের ভোগান্তির আর অন্ত নেই । নাম প্রকাশে একাধিক ব্যাক্তি বলেন, লক্ষ্মীপুর সড়ক বিভাগ ও ঠিকাদারের গাফিলতির কারনে রাস্তাটি বেহাল অবস্থায় আছে । তবে বিষয়টি জানতে ঠিকাদারের মুঠো ফোনে বার বার ফোন করলেও তিনি কোন সাড়া দেননি । এই রাস্তাটি নির্মাণে ধীরগতির কারনে পথচারী,চালক , স্কুলের ছাত্রছাত্রী অসুস্থ রোগী এবং রাস্তার পাশের ব্যাবসায়ীদের দূর্ভোগ চরম আকারে পৌঁছে গেছে। এই রাস্তাটির পাশে রয়েছে জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপারের বাসভবন (ডিসি কলোনী) রয়েছে কয়েকটি হাসপাতাল,স্কুল মাদ্রাসা ,বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ,শহর পুলিশ ফাঁিড়সহ অনেক প্রতিষ্ঠান । প্রতিদিন রামগতি থেকে লক্ষ্মীপুর ঢাকা ,চট্টগ্রামগামী বাস রামগতিসহ মাইজদি সোনাপুর রুটে চলাচল করে। এছাড়াও পৌর-শহরের ওপর হওয়ায় ছোট বড় বিভিন্ন যানবাহন চলাচল কবেছরের পর বছর পার হয়ে গেলেও রাস্তাটি নির্মাণে যেন কেউ এগিয়ে আসছেনা। রাস্তাটির এমন পরিস্থিতি যেন অতিষ্ট জনগন মেনে নিতে পারছেনা ।এদিকে বাড়ছে বিভিন্ন রকম বায়ুবাহিত রোগ । রাস্তার পাশের বিভিন্ন খাবার দোকান থাকায় রাস্তার ধুলো সেই খাবারে গিয়ে পড়ে । সেই খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে সাধারণ মানুষ । জেলা শহরের রাস্তা হওয়া সত্বেও পৌরসভার পক্ষ থেকে পানি ছিটানোর জন্য নেওয়া হয়না কোন ধরণের ব্যবস্থা । প্রতিদিনই দূর্ঘটনার শীকার হয় পথচারীরা। এতে করে চরম ভোগান্তির শীকার সাধারণ মানুষ। এমন পরিস্থিতির জন্য দায়ি কে ? সড়ক বিভাগ নাকি ঠিকাদার ? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যাক্তি বলেন, স্কিন্দার মির্জা শামিম কাজটি শুরু করলেও হঠাৎ সব কিছুর দাম বাড়াতে কাজটি বন্ধ করে রেখেছেন তিনি। আবার কেউ কেউ বলছেন ড্রেন নির্মাণের কারনে রাস্তাটি সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে । কিন্তু আসল তথ্য কি? সে বিষয়টি অজানাই রয়ে গেলো সাধারণ জনগনের মাঝে । আবার এই রাস্তাটির পাশে প্রশাসনের সর্বোচ্চ কর্মকর্তাদের বাসভবন হওয়া সত্বেও তারা কেন বিষয়টি নিয়ে চুপ করে আছেন সাধারণ জনগনের মাঝে জানার একটি কৌতুহল কাজ করে । তবে বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে চাচ্ছেননা সড়ক বিভাগের কেউ । এমনকি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কারো সাথে যোগাযোগ করতে গেলেও অদেখাই থেকে যায় তারা । অনেকে বলছেন ঠিকাদার প্রভাবশালী হওয়ার কারনে রাস্তাটির এমন বেহালদশা। এমন পরিস্থিতিতে এই রাস্তাটি দ্রুত নির্মাণের দাবি এলাকাবাসীর । সড়ক বিভাগের তথ্য মতে, রাাস্তাটি নির্মাণে মোট বরাদ্দ দেয়া হয় ৩২ কোটি টাকা । ইতিমধ্যে ড্রেনের কাজ এবং একটি কালভার্টের কাজ চলমান । এই পর্যন্ত ঠিকাদারকে প্যামেন্ট দেয়া হয় ৩-৫ কোটি টাকা । এছাড়াও ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ধরা হয় ৩০০ কোটি টাকা । ইতিমধ্যে ভূমি অধিগ্রহণ বাস্তবায়নের জন্য জেলাপ্রশাসক অফিসে ২৬৫ কোটি টাকা পাঠিয়ে দিয়েছে বলে জানান , লক্ষ্মীপুর সড়ক বিভাগ কর্তৃপক্ষ। এমন পরিস্থিতিতে কবে হবে এই রাস্তা তার কোন নিশ্চয়তা দিতে পারছেননা সড়ক বিভাগ । যদিও সড়ক বিভাগ ভূমি অধিগ্রহণের দোহাই ও ঠিকাদারের গাফিলতিকে দায়ি করছেন ।
স্থানীয়রা বলেন, প্রতিদিনিই দূর্ঘটনার শীকার হতে হয় আমাদের, ধুলোবালুর কারনে শ্বাসকষ্ট হয়, ঠিকমত দোকানদারি করা যায়না জামাকাপড় নষ্ট হয়ে যায় আমাদের প্রচুর সমস্যা হচ্ছে আমাদের। তাদের দাবি পৌরসভার রাস্তা হওয়া সত্বেও এই রাস্তাটি চরাঞ্চলের রাস্তার মতই নিন্মমানের করে তৈরি করা হচ্ছে। রাস্তাটি দিয়ে চলতে তাদের অনেক সমস্যা হয় । দ্রুত রাস্তাটি নির্মাণের দাবি জানান তারা।সড়ক বিভাগের এসডি মোজাম্মেল হক বলেন, যদিও কাজটি ২০২১ সালে শেষ হওয়ার কথা কিন্তু ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতার কারনে কাজটি বন্ধ হয়ে আছে । এখন এটা নিয়ে আমরাও সমস্যাই আছি। ঠিকাদার যেকোন সময় কাজ রেখে চলে যেতে পারে বলে মনে করেন তিনি । কারন জিনিস পত্রের দাম বাড়ার অযুহাত দেখিয়ে হয়তো তিনি চলে যাবেন । তবে তিনি বলেন, কাজটি ২০২৩ এর জুন পর্যন্ত এক্সটেনশন করা হয়েছে । ২০২৪ এর জুন পর্যন্ত আরো একবছর এক্সটেনশন করার কথা রয়েছে।
তবে এ বিষয়ে ঠিকাদারপক্ষ বলছেন পালিয়ে যাওয়ার কথা ঠিক নয় আমাদেরকে জমি বুঝিয়ে দিলে ৩ মাসের কধ্যে কাজ শেষ করবো । তবে রোডসের ৫ কোটি টাকা প্রাথমিক ভাবে প্যামেন্ট দেওয়ার কথা অস্বিকার করেন এই ঠিকাদার।
সড়ক বিভাগর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (এসডি) মোজাম্মেল হক দায় শিকার করে বলেন , বিষয়টা নিয়ে আমরাও সমস্যায় আছি । যে কোন মুহুর্তে ঠিকাদার পালিয়ে যেতে পারে । আমাদের চাপের কারনে এখনো সে যায়না । ঠিকাদার এবং ভূমি অধিগ্রহনের কারনে কাজটি জুলে আছে বলে তিনি জানালেন । লক্ষ্মীপুর সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম বলেন, শুরুতে কাজটি ধীরগতি হলেও বর্তমানে কাজটি স্বাভাবিকভাবে চলমান । তবে তিনি পৌরসভার বিভিন্নরকম কাজ এবং ভূমি অধিগ্রহনের বিষয়টিকে তুলে ধরলেন। ২০১৯ সালে শুরু হওয়া এই কাজটি ৫ বছরের মাথায়ও বলতে পারছেননা কবে শেষ হবে । জনগনের মাঝে সস্তি ফিরিয়ে দিতে দ্রুত রাস্তাটি নির্মাণের দাবি স্থানীয়দের ।
Tags
বাংলাদেশ