Daily News BD Online

হাওরে ব্লাস্ট রোগে মারত্মক ক্ষতি ৭০ শতাংশ ধানে চিটা


আব্দুল হামিদ জেলা প্রতিনিধি :
ভরা বোরো মৌসুমে এবার কৃষকদের কপাল পুড়েছে। খরা ও ব্লাস্ট রোগের কবলে পড়ে বোরো ধান উৎপাদনে মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে।

দেশের বৃহত্তম হাওর হাকালুকি, কাউয়াদীঘি ও হাইল হাওরসহ মৌলভীবাজার জেলার ছোট বড় হাওরগুলোতে বোরো মৌসুমের ব্রি ২৮ ও ২৯ জাতের ধানের উপর ব্লাস্ট রোগ অনাকাঙ্খিত আঘাত হানে। এতে মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় কৃষকদের কাংঙ্খিত ২৮ ও ২৯ ধান।

বিভিন্ন এলাকার কৃষক থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী চিটায় জেলা জুড়ে আবাদকৃত ব্রি ২৮ ও ২৯ জাতের ধানের প্রায় ৭০ শতাংশ জমির ধান নষ্ট হয়েছে। তবে, কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, ৬০ হাজার ৫৭ হেক্টর বোরো জমির মধ্যে পুরো জেলায় ১শ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে জমিতে ফেলে আসা ধান ও কৃষকদের সাথে আলাপচারিতায় কৃষি বিভাগের সাথে তেমন কোন মিল খুজে পাওয়া যায়নি। কৃষকরা জানিয়েছেন, প্রত্যেক এলকায় প্রায় ৭০ শতাংশ জমির ধান নষ্ট হয়েছে এবার।

কাউয়াদীঘি হাওর ঘুরে দেখা যায়, ব্রি ২৮ ও ২৯ জাত ধানের অধিকাংশ জমির ফসল নষ্ট হওয়াতে কৃষকেরা ধান না কেটে বাড়িতে চলে গেছেন। মঙ্গলবার দিন ব্যাপী মৌলভীবাজার সদর ও রাজনগর উপজেলার অন্তর্ভুক্ত কাউয়াদীঘি হাওরে গেলে কান্নাবিজড়িত কন্ঠে এমনটা জানান হাওর পাড়ের কৃষকেরা। তাদের অভিযোগ সংশ্লিষ্ট কৃষি কর্মকর্তাদের তদারকির অভাবে তারা এমন ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

কাউয়াদীঘি হাওরের উত্তর অংশের রাজনগর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের শাহাপুর গ্রাম এলাকায় গেলে, আলাপচারিতা হয় কৃষক আফিজ মিয়া’র সাথে। তিনি বলেন, অন্যের জমি এনে ৫ কিয়ার ব্রি ২৮ জাতের ধান রোপণ করেছিলাম। “মরকি আর খরা এসে পুরো জমির ফসল জ্বালিয়ে দিলো”। ৫ কিয়ার জমি থেকে ৪/৫মন ধান পেয়েছি।

একই গ্রামের কৃষক ইব্রাহীম মিয়া বলেন, ২৫ কিয়ার জমি চাষাবাদ করেন। সব মিলিয়ে ১৫ থেকে ২০ মন ধান পাবো। ভালো ফসল হলে আড়াই থেকে ৩ লাখ টাকার ধান গোলায় তুলতে পারতাম।

একই গ্রামের কাউয়াদীঘি হাওর এলাকার রেমান মিয়া বলেন, মনে বহু আশা নিয়ে বোরো চাষাবাদ করেছি। ২ কিয়ার জমি থেকে মাত্র ৩মন ধান পেয়েছি। “এখন কামলা খরচ কিভাবে দেবো ভেবে পাচ্ছি না”।

হাওর পাড়ের সুমন মিয়া,জাফর মিয়া ও সুরমান আলী বলেন, বর্গা নিয়ে ১৭ কিয়ার জমি চাষাবাদ করেছি। ৮ কিয়ার জমির ধান জ¦লে ছাঁই হয়েছে। সব মিলিয়ে ৩৪ মন ধান পেয়েছি। তারা জানান, অধিকাংশ জমিতে কাচি লাগাইনি এখনো। ধান মরে যাবার কারণে ফেলে এসেছি। তারা আরও বলেন, পুরো ফসল হলে প্রায় দেড়শো মন ধান পেতাম। তবে, হাইব্রিট জাতের ফলন কিছুটা ভালো হয়েছে।

মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সামছুদ্দিন আহমদ বুধবার বিকেলে বলেন, জেলার হাওর অঞ্চলে ধানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে উঁচু এলাকায় ফলন ভালো হয়েছে।

তিনি বলেন, এবার হাওর অঞ্চলের ১শ হেক্টর জমি নষ্ট হয়েছে। জেলা জুড়ে ৬০ হাজার ৫৭ হেক্টর জমি আবাদ হয়েছে। এবার ফসলের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৩৫ হাজার মেট্রিক টন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন