খান নাজমুল হুসাইন, সাতক্ষীরা প্রতিনিধিঃ
সাতক্ষীরা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালের পরিচালক ও সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের আর, এম, ও ডাঃ ফয়সাল আহমেদ এর কর্তব্য অবহেলার কারণে এক রুগীর মৃত্যু হয়েছে। জানা গেছে, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বল্লী ইউনিয়নের মুচড়া গ্রামের আব্দুল মজিদ সরদারের ছেলে আশরাফুজ্জামান (৩০) হটাৎ প্রথমে পেট ব্যাথা ও পরে খিচুনি হওয়ায় তাকে গত ০১/০৫/২৩ ইং তারিখ বিকালে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রুগীর চিকিৎসা তত্বাবধানে ছিলেন হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ ফয়সাল আহমেদ। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার একপর্যায় গতকাল ০৩/০৫/২৩ ইং তারিখ বেলা ১২.৩০ মিনিট সময় আশরাফুজ্জামান আবারো অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ সময় রুগীর পাশে কোন ডাক্তার না থাকায় চিকিৎসা অবহেলায় আশরাফুজ্জামানের মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ করেন মৃতের স্বজনরা। তারা অভিযোগ করে বলেন, আশরাফুজ্জামান তার শ্বশুর বাড়ি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঝাউডাঙ্গা গ্রামের আমানুল্লাহ এর বাড়িতে ছিলেন। হটাৎ আশরাফুজ্জামানের প্রথমে পেটে ব্যাথা পরে খিচুনি শুরু হয়৷ আশরাফুজ্জামানের চিকিৎসার জন্য গত ইং ০১/০৫/২৩ তারিখ সাতক্ষীরা শহরস্থ হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দীর্ঘ তিন দিন হাসপাতালে ডাঃ ফয়সাল আহমেদ এর তত্বাবধানে চিকিৎসার এক পর্যায় গতকাল বুধবার সে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ সময় কোন ডাক্তার রুগীর পাশে না থাকায় চিকিৎসা অভাবে এবং ডাঃ ফয়সাল আহমেদ এর দায়িত্বে অবহেলার কারণে আশরাফুজ্জামান মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। মৃতের স্বজনরা আরও বলেন, আশরাফুজ্জান মারা যাওয়ার পর হার্ট ফাউন্ডেশন এর কর্তৃপক্ষের অবহেলা এবং দায়ভার এড়িয়ে যাওয়ার অভিপ্রায়ে কৌশলে ডাঃ ফয়সাল আহমেদ এর নির্দেশে হাসপাতালের দায়িত্বরত ম্যানেজার দেবব্রত রুগীর স্বজনদের লাইফ সার্পোটের জন্য সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করার জন্য তাড়াহুড়ো করেন। তখন রুগীর স্বজনেরা বেলা ১২.৩০ মিনিট সময় দেখেন শরিফুজ্জামানের নিথর দেহ পড়ে আছে। এ নিয়ে প্রথমে মৃত আশরাফুজ্জামান এর স্বজনেরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে বাগবিতণ্ডা শুরু হয়। এক পর্যায় তারা সাতক্ষীরা সদর থানায় হার্ট ফাউন্ডেশন এর পরিচালক ও সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের আর, এম, ও ফয়সাল আহমেদ এর বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার কারণে আশরাফুজ্জামানের মৃত্যু হওয়ায় একটি মামলা দায়ের করার প্রস্তুতি নেন। অবস্থা বেগতিক দেখে ডাঃ ফয়সাল আহমেদ তড়িঘড়ি করে নিজের অপকর্ম ঢাকতে কথিত কিছু সাংবাদিকদের কে সাথে নিয়ে তাদের মধ্যস্থতায় রুগীর স্বজনদের সাথে প্রায় ২ ঘন্টা যাবৎ বৈঠক করেন। বৈঠকের এক পর্যায় মোটা অংকের বিনিময়ে মৃতের স্বজনদের মিমাংসা হয় বলে বিশ্বস্ত সুত্রে জানা গেছে। এদিকে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বল্লী ইউনিয়নের ০৩ নং ওয়ার্ড এর মেম্বর মনিরুল ইসলাম অপুর উপস্তিতিতে সাতক্ষীরা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ বরাবর লাশের বিনা ময়নাতদন্তে লাশ নেওয়ার জন্য একটি আবেদন করেন মৃতের আপন ভাই আজারউজ্জামান বাবু। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সাতক্ষীরা সদর থানা পুলিশ আশরাফুজ্জামানের লাশ তার স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেন। এ বিষয় সাতক্ষীরা হার্ট ফাউন্ডেশন এর দায়িত্বরত ম্যানেজার দেবব্রত উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, চিকিৎসা নিতে আসা আশরাফুজ্জামানের লাইফ সার্পোটের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। তিনি বলেন, আমাদের হাসপাতালে লাইফ সার্পোট ব্যবস্থা না থাকায় সে কারণে আমরা সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করার জন্য বলি। কিন্ত রুগীর স্বজনদের গড়িমসির কারণে আশরাফুজ্জামানের মৃত্যু হয়। এ বিষয় সাতক্ষীরা হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালের পরিচালক ও সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের আর, এম, ও ডাঃ ফয়সাল আহমেদ এর সাথে মুঠো ফোনে আলাপকালে তিনি বলেন, আমার প্রেসক্রিপশনে আশরাফুজ্জামান কে ভর্তি নেওয়া হয়। গতকাল বুধবার আমি হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালের আমি ছিলাম না। তিনি বলেন, ঐ দিন আমি সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করছিলাম। আপনার দায়িত্ব অবহেলার কারণে রুগীর মৃত্যু হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, একদমই না, আশরাফুজ্জান কে লাইফ সার্পোট দেওয়া হয়েছিল। এ ছাড়া তখন অন্য মেডিকেল ডাক্তাররা ছিলেন। হার্ট ফাউন্ডেশনে লাইফ সার্পোটের কোন ব্যবস্থা ছিলো না বলে অভিযোগ করেছেন রুগীর স্বজনরা। এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা রুগীকে ভেন্টিলেটর দিয়ে রাখছিলাম। এ ঘটনায় সুশীল সমাজ হার্ট ফাউন্ডেশন এর পরিচালক ও সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের আর, এম,ও ডাঃ ফয়সাল আহমেদ এর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
Tags
বাংলাদেশ