Daily News BD Online

গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের উপর হামলা লুটপাট: খোলা আকাশের নিচে বসবাস মুক্তিযোদ্ধা পরিবার


সঞ্জয় সাহা, গাইবান্ধা প্রতিনিধি:

গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ীতে বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজার রহমান নামের এক মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের উপর সন্ত্রাসী কর্তৃক হামলা লুটপাট ও বসতবাড়ী ভাংচুরের অভিযোগ উঠেছে। এ  ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে কোন প্রকার আইনি সহায়তা না পেয়ে বুধবার সংবাদ সম্মেলন করেছেন ভুক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধা পরিবারটি।

জানা গেছে-  গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী উপজেলার পৌর শহরের নুনীয়াগাড়ী এলাকায়  বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজার রহমান এর বসতবাড়ী ভাংচুর হওয়া ধংসস্তুপের সামনে পরিবারের লোকজন এই সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারটির পক্ষে তার মেয়ে শ্যামলী আক্তার সাংবাদিকেদের জানান, পূর্ব পরিকল্পিতভাবে আমাদেরকে উচ্ছেদ করার লক্ষে পলাশবাড়ীর পৌর মেয়র ঘোড়াঘাট রোড হতে এস এম হাইস্কুল এর প্রাচীরের পাশ দিয়ে চান প্রফেসরের বাড়ির দিকের রাস্তাটি প্রসস্ত করার কথা বলে ১নং খতিয়ান ভুক্ত সরকারি রাস্তার জমি থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক বরাবর একটি আবেদন করেন। পরবর্তিতে ঐ আবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে পৌর কতৃপক্ষ এবং পলাশবাড়ী উপজেলার দ্বায়ীত্বরত সার্ভেয়ার ইব্রাহিম খলিল সহ এলাকার গন্যমান্য ব্যাক্তি বর্গের উপস্থিতিতে ১নং খতিয়ান ভুক্ত রাস্তার দুই ধারের ঘোড়াঘাট রোড হতে এস এম হাইস্কুল এর প্রাচীরের পাশ পর্যন্ত জমি পরিমাপ করে গত ৭ই ফেব্রুয়ারী ২০২৩ ইং তারিখে পলাশবাড়ী পৌরসভার উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো: মেহেরাব হোসেন জনি, সহকারী প্রকৌশলী মো: মর্তুজা এলাহী, পলাশবাড়ী উপজেলার দ্বায়ীত্বরত সার্ভেয়ার জনাব ইব্রাহিম খলিল ও পৌর মেয়র গোলাম সারোয়ার সহ মোট ৪ জনের যৌথ স্বাক্ষরিত একটি সার্ভে রিপোর্ট জেলা প্রশাসক বরাবর দাখিল করেন পৌর মেয়র। পৌরসভার সার্ভে রিপোটের উপর ভিত্তি করে গত ৫ এপ্রিল  ২০২৩ ইং তারিখে ১৫ জন অবৈধ দখলদারের নাম উল্লেখ করে জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করেন পলাশবাড়ী ইউনিয়ন ভুমি সহকারী ডি এম মোমিনুল হক।
সার্ভে রিপোর্টে ও ইউনিয়ন ভুমি সহকারির পাঠানো অবৈধ দখলদারের তালিকা ধরে গত ২৪ মে ২৩ ইং তারিখে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে গাইবান্ধা সহকারি কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ( এনডিসি ) জুয়েল মিয়ার নেতৃত্বে ১নং খতিয়ান ভুক্ত সরকারি রাস্তার জমিতে থাকা ১৫ অবৈধ দখলদারদেরকে উচ্ছেদে একটি উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হয়। উচ্ছেদ অভিযানে সার্ভে রিপোট অনুযায়ী ১নং খতিয়ানভুক্ত সরকারি রাস্তার জায়গায় যে অংশটি পড়ে শুধুমাত্র সেই অংশটিই ভাঙ্গার পর উচ্ছেদ অভিযান সমাপ্ত হয়।



অভিযান পরিচালনা শেষে দ্বায়িত্বরত  ম্যাজিস্ট্রেট ( এনডিসি ) জুয়েল মিয়া মুক্তিযোদ্ধা পরিবারটিকে অবশিষ্ট যে ঘরগুলো উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনাকালে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেসব ঘরগুলো পুনরায় মেরামত করে বাসযোগ্য করতে বলে অভিযান স্থান ত্যাগ করেন ভুক্তভোগি পরিবারটি।

অন্যদিকে  মুক্তিযোদ্ধা কন্যা শ্যামলী আক্তারের ছেলে লিয়ন ইসলাম সাংবাদিকদেরকে জানান গত  ২৮ মে ২৩ ইং তারিখ রাত্রে তার মা  বিশেষ কাজে ঢাকা যায়। আর এই খবর পেয়ে পর দিন ২৯ মে ২৩ ইং তারিখ সকাল ১০টার দিকে হঠাৎ করে মাহামুদুল ও মিঠুর নেতৃর্ত্বে প্রায় শতাধিক লোকের একটি দল সন্ত্রাসী কায়দায় এসে আমাদের ফুলের দোকানের ভিতরে ঢুকে আমাকে মারধর করে বের করে দিয়ে আমাদের ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান সহ বসতবাড়ির দেয়াল বড় বড় হাতুরি দিয়ে ভাঙতে  থাকে। এমতাঅবস্থায় বাড়িতে থাকা আমার খালামনি সাহানুর সহ অন্যরা বাধা দিতে আসলে আমার খালামনি সহ বাড়িতে থাকা অন্য সকল সদস্যদেরকে মারধর করে জোর পূর্বক টেনে হেছরে পাশ্ববর্তি একটি স্কুলের ঘরে নিয়ে গিয়ে আটকিয়ে রাখে। পরে আমাদের কাছে থাকা সবার মোবাইল ফোনগুলো কেরে নেয় সন্ত্রাসীরা। পরে আমরা আটক থাকা অবস্থায় পৌর মেয়র গোলাম সরোয়ার বিপ্লব এর নেতৃত্বে একটি বুলডোজার এনে মূহর্তের মধ্যে আমাদের বসতবাড়ী সহ সকল স্থাপনা মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়। লিয়ন আরো বলেন ভাংচুর শেষে আমাদেরকে মোবাইল ফোনগুলো ফেরত দিলেও ভাংচুর করার সময় আমার বোন লিয়া ভাংগার কিছু অংশ ভিডিও করার কারনে তার মোবাইল ফোনটি মেয়র নিয়ে যায় পরে মেয়রকে ফোন দিলে তিনি ফোনটি পরে দিবে বলে জানায়। তবে এ বিষয়ে জানতে পলাশবাড়ী পৌর মেয়রের কাছে সংবাদমাধ্যমকর্মী একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এদিকে নতুন করে মেয়রের পুনরায় মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের বসতবাড়ি ভাংচুরে জেলা প্রশাসন এবং উপজেলা প্রশাসনের কোন প্রকার নির্দেশনা রয়েছে কিনা জানতে পলাশবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুজ্জামান নয়নের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি জানান যে এরকম কোন নির্দেশনার ব্যাপারে আমার জানা নেই। এটি মেয়র কেন ভেঙ্গেছে এটি আমার জানা নাই।
এ বিয়য়ে ঐ দিনের ১নং খতিয়ান ভুক্ত রাস্তার জমি থেকে অবৈধ উচ্ছেদ পরিচালনাকারী  সহকারি কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ( এনডিসি ) জুয়েল মিয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান আমার কাছে জেলা প্রশাসন শুধুমাত্র ১নং খতিয়ান রাস্তার জমি থেকে যেটুকু অবৈধ স্থাপনা ভাঙ্গার অনুমতি ছিল সেটুকু ভেঙ্গেছি এবং সেটুকু সম্পুর্ন ভাঙ্গার পর অভিযান সমাপ্ত করেছি ।
বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধা ওই পরিবারটি খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন। সংবাদ সম্মেলনে পরিবারটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করে দাবি করেন যে, তাদের ক্ষতিপুরণ সহ অপরাধীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কামনা করেন।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন