Daily News BD Online

জন্ম নেয়া জমজ সন্তানের একজন মৃত, কয়েক ঘন্টা পর হৃদরোগে মায়ের মৃত্যু


চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধিঃ


স্ত্রীর গর্ভে জমজ সন্তান রেখে চার মাসে আগে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ গেছে স্কুলশিক্ষক আবুল কালাম আজাদের (৪৯)। জমজ দুই সন্তানের মধ্যে একজন ছেলে, আরেকজন মেয়ে। তবে গর্ভে থাকা অবস্থায় মারা যায় ছেলে। জমজ সন্তান প্রসব করার পর মৃত সন্তান জন্মের এমন খবরে সদ্য জন্ম নেয়া মেয়েকে রেখে হার্ট অ্যাটাকে প্রাণ গেছে গৃহবধূ শরিফা খাতুনের (৪৩)।

মঙ্গলবার (১৬ মে) রাত ১০টার দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরের ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল রোডের সিটি ক্লিনিকে নিহত হয় শরিফা খাতুন। নিহত শরিফা খাতুন সদর উপজেলার সুন্দরপুর ইউনিয়নের রামকৃষ্ণপুর ছাবানিয়া গ্রামের মৃত আবুল কালাম আজাদের স্ত্রী। গত ৪ মাস আগে ০৬ জানুয়ারী রাজধানী ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন, সুন্দরপুর ইউনিয়নের বাগচর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ।

জানা যায়, বুধবার (১৭ মে) সকালে ছাবানিয়া গোরস্থানে শরিফা খাতুনের দাফন সম্পন্ন হয়। এর আগে মঙ্গলবার (১৬ মে) সন্ধ্যায় তার মৃত অবস্থায় জন্ম নেয়া ছেলের দাফন করা হয়। এদিকে, বর্তমানে মৃত শরিফা খাতুনের মেয়ে সুস্থ রয়েছে।

নিহতের পরিবার, স্বজন, প্রতিবেশী ও ক্লিনিক সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার (১৬ মে) সন্তান সম্ভবা শরিফা খাতুনের আল্ট্রাসনোগ্রাম করলে দেখা যায় গর্ভে থাকা ছেলে সন্তান মৃত রয়েছে। তাই দ্রুত অপারেশন করার পরামর্শ দেয় চিকিৎসকরা। মঙ্গলবার দুপুরে সিটি ক্লিনিক অপারেশন সম্পন্ন হয়। এসময় মৃত ছেলে ও জীবিত মেয়ে জন্ম হয়। জন্মের কয়েক ঘন্টা পর মৃত সন্তানের জন্ম দেয়ার খবরে হার্ট অ্যাটাক করে রাত ১০টার দিকে ক্লিনিকেই নিহত হয় শরিফা খাতুন।

মৃত শরিফা খাতুনের দেবর মুনজুর আলী গণমাধ্যমে  বলেন, গত ৪ মাস আগে স্কুলে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে বড় ভাই স্কুলশিক্ষক আবুল কালাম আজাদ। এরপর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালের চিকিৎসকরা রাজশাহী নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। রাজশাহীতে বেশ কিছুদিন চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় উন্নতি না হলে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ০৬ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন বড় ভাই। তার মৃত্যুর চার মাস পর ভাবি দুই সন্তানের জন্ম দেয়৷ তাদের মধ্যে একজন মৃত। সন্তান জন্ম দেয়ার কয়েক ঘণ্টা পরে ভাবিও দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছে।

নিহত আবুল কালাম আজাদের ছোট ভাই মনিরুল ইসলাম জানান, এর আগেও আরেকবার ভাবীর পেটে বাচ্চা মারা যায়। এরপর থেকে বাচ্চা নেয়ার জন্য বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা নেয়৷ এমনকি দীর্ঘদিন ভারতীয় চিকিৎসা নিয়েছে৷ গতকাল ক্লিনিকে আল্ট্রাসনোগ্রাম করতে গিয়ে একটি বাচ্চা মৃত দেখলে চিকিৎসকরা জানান, তিনদিন আগেই গর্ভে থাকা শিশু মারা গেছে।

মৃত শরিফা খাতুনের ভাগনি হালিমা খাতুন গণমাধ্যমে বলেন, আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টে একজন শিশু গর্ভে মারা যাওয়ার খবর পেয়ে চিকিৎসকরা তাড়াহুড়ো করে সিজার করতে বলেন। রাতে মামানী অনেক ছটপট শুরু করে। পুরো শরীর অনেক ব্যথা বলছিল। নার্সদের এই অবস্থার কথা জানালে, তারা অপারেশনের রোগীর এমনটা স্বাভাবিকভাবে হয় বলে জানায়। এরপরই সীধান্ত নেয়া হয়, মামানীকে রাজশাহী নিয়ে যাওয়া হবে। তার আগেই ক্লিনিকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

বোনের মৃত্যুকে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ বা চিকিৎসকদের কোন গাফেলতি নেই বলে জানান কিংবা গাফেলতি থাকলেও তা হয়তো আমরা বুঝতে পারিনি, নিহত শরিফা খাতুনের ভাই মো. মাহফুজ বলেন এসব। তিনি জানান, মৃত সন্তান জন্ম দেয়ার খবরেই আমার বোনের হার্ট অ্যাটাক হয়েছে বলে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ জানায়, পরে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর পর রাত আনুমানিক ১২টার দিকে মরদেহ বাসায় নিয়ে আসা হয়। এর আগে সন্ধ্যার দিকে মৃত ভাগনের দাফন হয়েছে।

সিটি ক্লিনিকের ম্যানেজার মাহমুদুল হাসান গণমাধ্যমকে বলেন, আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টে জমজ সন্তানের একজন মৃত থাকায় তাৎক্ষণিকভাবেই অপারেশন ব্যবস্থা করা হয়। সন্তান জন্ম দেয়ার কয়েক ঘণ্টা পরেই হার্ট অ্যাটাকে মায়ের মৃত্যু হয়েছে। পরে পরিবারের নিকট মরদেহ হস্তান্তর করা হয়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন