‘কালিদাস বাবু’র নাম বদলে করা হয়েছে ‘লাল মিয়া’ পুকুর !
১৯০৭ সালে তৎকালীন জমিদাররা দুই একর ৫ শতক জায়গার ওপর পুকুরটি খনন করেন। নামকরণ করেন-‘কালিদাস ট্যাংক’। সেইটি দখল করে নামকরণ করা হয়েছে ‘লাল মিয়া’ পুকুর !
ফরহাদ খান, নড়াইল :
‘বিউটিফিকেশন’ বা সৌন্দর্যবর্ধনের নামে নড়াইল জেলা পরিষদের পুকুর দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বদলে ফেলা হয়েছে পুকুরটির নামকরণও। ‘কালিদাস বাবু’র নাম বদলে করা হয়েছে ‘লাল মিয়া’ পুকুর ! দখলসহ নামকরণ বদলে ফেলার অভিযোগ উঠেছে নড়াইল পৌরসভার মেয়র আঞ্জুমান আরার বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগী জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুবাস চন্দ্র বোস এ তথ্য জানিয়ে বলেন, ‘কালিদাস ট্যাংক’ পুকুরটি দখলমুক্ত করার জন্য ইতোমাধ্যে পৌর কর্তৃপক্ষকে উকিল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। তবুও মাটিকাটা মেশিন দিয়ে পুকুরটির বিভিন্ন অংশে ‘বিউটিফিকেশন’ কাজ করা হচ্ছে।
তিনি আরো জানান, এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
এদিকে, কালিদাস ট্যাংক পুকুরটি দখলের বিষয়ে গত ৮ মে দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সুবাস চন্দ্র বোস। এ সময় উপস্থিত ছিলেন-জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডক্টর লুৎফর রহমান, জেলা পরিষদ সদস্য খোকন কুমার সাহাসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সুবাস চন্দ্র বোস বলেন, ১৯০৭ সালে তৎকালীন জমিদাররা দুই একর ৫ শতক জায়গার ওপর পুকুরটি খনন করেন। নামকরণ করা হয়-‘কালিদাস ট্যাংক’। পরবর্তীতে পুকুরটি জেলা পরিষদের অধীন হয়। এসব কাগজপত্র ও তথ্য-প্রমাণাদি জেলা পরিষদের কাছে রয়েছে। তবে আইনের তোয়াক্কা না করেই নড়াইল পৌর মেয়র বিউটিফিকেশনের নামে পুকুরটি দখল করেছেন। এছাড়া ‘কালিদাস ট্যাংক’ নামকরণ বদলে গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর ‘লাল মিয়া পুকুর বিউটিফিকেশন’ নাম দিয়েছেন। নড়াইল পৌর মেয়র নামকরণ বদলে ফেলার অধিকার রাখেন কিনা? বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মামলা দায়েরসহ আইনগত ভাবে বিষয়টি মোকাবেলা করা হবে বলে জানান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নড়াইল পৌর ভবনের পেছনে ‘কালিদাস ট্যাংক’ পুকুরটির অবস্থান। এখানে ‘বিউটিফিকেশন’ বা সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের নামে ৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকার বেশি বরাদ্দ হয়েছে। গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর এ কাজের উদ্বোধন করা হয়।
তবে পুকুর দখলের অভিযোগ অস্বীকার করে নড়াইল পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আঞ্জুমান আরা বলেন, জমির (পুকুর) কাগজপত্র আমাদের কাছে আছে। খাজনাও নিয়মিত দিয়ে আসছি। ওনি (জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান) যে অভিযোগ করেছেন, তা ঠিক নয়। পুকুরটি গভীরকরণ, হাঁটাপথ, বসার ব্যবস্থা, আলোকসজ্জাসহ বিভিন্ন ধরণের সৌন্দর্যবর্ধন করা হবে।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশফাকুল হক চৌধুরী বলেন, স্থানীয় সরকার বিভাগ বিষয়টি তদন্ত করেছে। ইতোমধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি মন্ত্রণালয়ই সমাধান করবে।