Daily News BD Online

সোহেল হত্যাকারী খুনি পারভিন আক্তারের ফাঁসি চায় এলাকাবাসী


শাহাদাত হোসেন মানিক :

গাজীপুরে বহুল আলোচিত চাঞ্চল্যকর সোহেল হত্যা মামলার প্রধান আসামী পারভীন আক্তারের ফাঁসির দাবিতে এলাকাবাসী সোচ্চার হতে শুরু করেছে। শেষমেশ এ হত্যা মামলা কোন দিকে গড়াবে তা জানতে অধির অপেক্ষায় রয়েছে সোহেলের স্বজনরা সহ এলাকাবাসী।

হত্যার শিকার সোহেল মহানগরীর কাশিমপুর মেট্রোপলিটন থানা এলাকার পলাশ হাউজিং এর বাসীন্দা। বালু ব্যবসার জের ধরে সোহেলকে হত্যার পরিকল্পনা হয় ১০/১২দিন ধরে।

পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী (২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারী মাসের ৯ তারিখে সন্ধ্যা সারে ৭টার সময়) গাজীপুর মহানগর কাশিমপুর মেট্রোপলিটন থানার পানিশাইল পলাশ হাউজিং ৯নং রোডের শিবলী খানের বাড়ীর পার্শ্বে নির্মাণাধীন বাউন্ডারি ওয়ালের সামনে পূর্ব হতে ওৎ পেতে থাকা অনুমান ঘাতকরা সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার সময় বিবাদী পারভীন আক্তার এর হুকুমে তার ভাই এবং দ্বিতীয় স্বামী মিনহাজুল সহ আরও বেশ কয়েকজন মিলে এলোপাতাড়ি ভাবে ধারালো দেশীয় অস্ত্র শস্ত্র দিয়ে সোহেলকে কুপিয়ে হত্যা করে পাশের ডোবার ভিতর ফেলে রেখে চলে যায়।


পরে সংবাদ পেয়ে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেন।

এ ঘটনায় নিহত সোহেলের মা বাদী হয়ে কাশিমপুর মেট্রোপলিটন থানায় মামলা দায়ের করেন। পরে সে মামলায় পুলিশ পারভীন আক্তার সহ বাকী আসামীদের গ্রেপ্তার করে রিমান্ড আবেদন করে ১৬৪ ধারা জবানবন্দি নিয়ে আসামিদের আদালতে প্রেরণ করলে আদালত তাদের জেল হাজতে প্রেরণ করেন।

পরে মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে মামলার বাদীর আনীত অভিযোগ তদন্তে পেনাল কোডের ৩৪১/৩০২/১১৪/৩৪ ধারার অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় পারভীন আক্তার দীর্ঘ কয়েক মাস জেল হাজতে থাকার পর প্রথমে উচ্চ আদালত থেকে অস্হায়ী জামিন নেয় এবং পরে নিম্ন আদালত থেকে অস্হায়ী জামিনে এসে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠে নানান ধরনের অপকর্ম, জমি দখল, বাড়ী দখল, বাড়ী নির্মাণে বাধাসহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষের উপরে হামলা মামলায় অতিষ্ঠ হয়ে পানিশাইল পলাশ হাউজিং এর বাসিন্দারা সহ আশে পাশের বাসিন্দারা সোহেল হত্যাকান্ডের ঘটনায় মাষ্টারমাইন্ড পারভিন আক্তারের ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন সোহেলের পরিবার ও পুরো এলাকার বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষজন।

সরেজমিনে গিয়ে এলাকাবাসী ও স্হানীয় সুত্রে জানা যায়, খুনি পারভিন আক্তারের বাবা চাঁন মিয়া দীর্ঘ কয় যুগ পূর্বে তার গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার নিজ এলাকায় খুনের ঘটনায় এলাকাবাসী চাঁন মিয়াকে এলাকা থেকে তাড়িয়ে দিলে গাজীপুরের কাশিমপুরে পলাশ হাউজিংএ এসে সিকিউরিটি গার্ড (নৈশপ্রহরী) চাকুরী নিয়ে পলাশ হাউজিংএ বসবাস শুরু করেন। এক পর্যায়ে তিনিও খুন হন।

এদিকে আমাদের অনুসন্ধানী সাংবাদিকরা জানতে পেরেছে যে, খুনি পারভিন আক্তারের হাত থেকে তার সন্ত্রাসী হামলা থেকে রেহায় পায়নি দেশের প্রখ্যাত নারী অনুজীব বিজ্ঞানী ডঃ ফেরদৌসি, তাঁর উপরও হামলা করেছিল এই পারভীন আক্তার। সেই সময় পারভীন আক্তারের হামলায় আহত হয়ে অনুজীব বিজ্ঞানী ডঃ ফেরদৌসি হাসপাতালে ভর্তিও ছিলেন।

সে ঘটনায় অনুজীব বিজ্ঞানী ড. ফেরদৌসীর করা  মামলায়ও খুনি পারভিন আক্তার জেলও খেটেছেন।  গত এপ্রিল মাসেও প্রবাল হাউজিং এ পারভীন আক্তার ও তার পূর্বের স্বামী এবং বর্তমান স্বামীকে সাথে নিয়ে তার দলবল ফরিদা পারভীন  সাথী নামে একজনের উপর সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে জমি দখলের চেষ্টায় থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে ওই ভুক্তভোগী নারী।

কদিন আগেই পলাশ হাউজিং এর বাসিন্দা একজনের নির্মাণাধীন বাড়ীর কাজ বন্ধ করার বিষয়ে সেই বাড়ীর মালিককেও পিটানোর জন্য তেড়ে গেলে উপস্থিত লোকজন এসে উদ্ধার করতে দেখা যায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের আপলোড করা একটি ভিডিও ক্লিপে এসব ঘটনা দেশবাসী ইতিমধ্যে প্রত্যক্ষ করেছে।


পলাশ হাউজিং এর বাসিন্দা মনোয়ারা খোরশেদের পরিবারকে ও মৌসুমী নীট ফ্যাশনের ব্যাবস্হাপনা পরিচালক হাজী মোশাররফ হোসেন মৃধাকে আসামি করে মিথ্যে অপহরণের মামলা দেন এই পারভিন আক্তার। পরবর্তীতে অপহরণের মামলার ভয়ে ভীত হয়ে এবং খুনি পারভিন আক্তারের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নিজ কাজে লাগানোর জন্য মোশাররফ হোসেন মৃধাও পারভিন আক্তারের সাথে হাত মিলান। এলাকাবাসী আরও বলেন, এই পারভিন আক্তারকে ২০১৩ সালে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করেন এলাকাবাসী।

কিন্তু কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পরে পারভিন আক্তারের নানা ধরনের দাঙ্গা হাঙ্গামা ও অপকর্মে অতিষ্ঠ হয়ে গত ২০১৮ সালের সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে এলাকার ভোটার তার উপর থেকে সমর্থন তুলে নেন। ফলে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়ে মুখ থুবড়ে পড়েন এই পারভীন আক্তার।


জনপ্রতিনিধিত্বর পদপদবী হারিয়ে পারভীন আক্তার আরও বেপরোয়া হয়ে সে তার গুন্ডা বাহিনীকে আরো শক্তিশালী করে গড়ে তোলেন।  এর পর থেকে তার নিজ সন্ত্রাসী বাহিনী ও তার জমি দখল চাঁদাবাজি টিকিয়ে রাখতে কাউন্সিলর পদ হারিয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠে।

২০১৮ সালের সিটি নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর বালু ব্যবসার জের ধরে ২০১৯ সালের শুরুর দিকে সোহেলকে হত্যা করতেও দ্বিধা করেনি এই পারভিন আক্তার। এ হত্যাকাণ্ড গাজীপুর জেলাসহ গোটা দেশে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে।


এদিকে দীর্ঘ ৩ বছর পার হয়ে গেলেও সোহেল হত্যা মামলার চুড়ান্ত রায় ঘোষণা না হওয়ায় পারভীন ও তার লালিত বাহিনী লাগামহীন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে এলাকাবাসীকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। সোহেল হত্যাকান্ডের ফাঁসির রায় দ্রুত কার্যকর হলে পারভীন বাহিনীর হাত থেকে স্থায়িভাবে এলাকাবাসী মুক্তি পাবে বলে অভিমত সচেতন মহলের।

তবে খুনি পারভিন আক্তারের হুমকি ধামকি মামলা হামলার আশংকায় রয়েছেন অসংখ্য পরিবার এমন অভিযোগ পুরো এলাকাজুরে। যেকোনো মুহূর্তে আবারও হামলার মামলার আশংকায় আতংকে জীবন যাপন করছেন অনেক পরিবার।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন