ডালিম কুমার দাস টিটু : নারিকেল সুপারি ধান সয়াবিন আর রুপালি ইলিশে ভরপুর, প্রিয় লক্ষ্মীপুরের কয়েকটি ইউনিয়নের জনগনের ভাগ্য থেকে যেন অলক্ষী দূর হচ্ছেনা। নদীর তীরে গড়ে ওঠা এই জেলাটিতে অবহেলিত দরিদ্র মানুষের সংখ্যাই বেশি । নদীর ভয়াল থাবা ছিন্ন ভিন্ন হয়ে গেছে ২ টি উপজেলার মানুষের স্বপ্ন । এ জেলায় মোট ৫৮ টি ইউনিয়ন রয়েছে ৪ টি পৌরসভার সমন্বয়ে রয়েছে ৫ টি উপজেলা । কিন্তু সদর উপজেলা ও কমলনগর উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের মানুষের ভাগ্য অতি নির্মম । দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় তারা আছেন রাজতন্ত্রের মত । দীর্ঘ একযুগেরও বেশি সময় ধরে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ৬ টি ইউনিয়ন এবং কমলনগরের ৩টি ইউনিয়নে নির্বাচন নেই । জনগনের সঠিক সেবা ও গ্রামীন অবকাঠামো উন্নয়নে পিছিয়ে আছে এসকল ইউনিয়নগুলো । নির্বাচন না হওয়ায় ক্ষুব্দ এলাকাবাসী। সঠিক সময়ে ইউনিয়নের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে সদর এবং কমলনগরের ৯ টি ইউনিয়নে নির্বাচন নেই । সদর উপজেলার দালাল বাজার,দক্ষিন হামছাদী,চর রুহিতা,লাহার,ভাঙ্গা খাঁ ও তেওয়ারী গঞ্জ ইউনিয়ন এবং কমলনগর উপজেলার সাহেবের হাট ,পাটওয়ারীর হাট ও কালকিনি ইউনিয়ন চলছে রাজতন্ত্রের মত । ২০১১ সালে নির্বাচনের উৎসব উপভোগ করলেও দীর্ঘ একযুগ ভোট থেকে বঞ্চিত তারা। এর মধ্যে বেশিরভাগ সীমানা নির্ধারণকে কেন্দ্র করে মামলা জটিলতা দেখানো হয়। । এই ইউনিয়নগুলোতে কবে নির্বাচন হয়েছে ভুলতে বসেছে এলাকাবাসী। মামলা জটিলতায় নির্বাচন না হলেও বহাল তবিয়তে আছেন চেয়ারম্যান এবং মেম্বাররা । ৯ টি ইউনিয়নের ৪ লক্ষেরও অধিক মানুষ সরকারের বিভিন্ন সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন । রয়েছেন ২ লক্ষের অধিক ভোটার । তাদের দাবি তারা তাদের ভোটাধিকার চায়। এছাড়াও সেবা নিতে গিয়ে বিভিন্নভাবে হয়রানির শীকার হচ্ছেন অনেকে । বেশিরভাগ সময় চেয়ারম্যানদের পরিষদে না পাওয়ারও অভিযোগ আনেন তারা। তবে এসকল চেয়ারম্যান এর সাথে সাক্ষাৎ করতে গেলে তারা ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননা। নির্বাচন না হওয়ায় চেয়ারম্যান মেম্বাররা উন্নয়নের কথা চিন্তা না করে নিজেদের পকেট ভারি করার অভিযোগও ওঠেছে । ভিজিএফ , ভিজিডি , টিআর , কাবিখা এবং কাবিটাসহ সকল প্রকল্প নামমাত্র দেখিয়ে প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করে । যায জন্য এলাকার উন্নয়ন পিছিয়ে আছে । চেয়ারম্যান এর পাশাপাশি ইউপি সদস্যরাও স্থানীয় নাগরিকদের সেবা দিতে ব্যার্থ হচ্ছেন । দীর্ঘ সময় নির্বাচন বিহীন চেয়ারম্যান এবং মেম্বার থাকার কারনে মূল্যহীন হয়ে পড়ছেন সাধারণ জনগন । ইউনিয়ন পরিষদে বিভিন্ন সেবার জন্য গিয়েও হয়রানির শীকার হতে হয় তাদের । এছাড়াও গ্রামীন অবকাঠামো উন্নয়নে ফিছিয়ে আছে এসকল ইউনিয়নে । ইউনিয়নের বেশিরভাগ রাস্তাঘাট পরিত্যাক্ত অবস্থায় আছে । বর্ষাকালে চলাচলের অনুপযোগী এসকল রাস্তায় চলাচল করতে পারেনা এলাকাবাসী। নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে না পারায় ক্ষুব্দ জনগন । এসকল ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরা নিজেদের নিয়েই ব্যাস্ত থাকেন সবসময় । নির্বাচনের জন্য কোন ধরণের প্রক্রিয়া শুরু হলেও জনপ্রতিনিধিরা পুণরায় মামলা করে নির্বাচনে বাধা সৃষ্টি করার অভিযোগও আনেন অনেকে । বরাদ্দের টাকা জনপ্রতিনিধিরা মিলে ভাগ ভাটোয়ারা করে নেন বলেও অভিযোগ ওঠে ।
কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুচিত্র রঞ্জন দাস বলেন , ইতিমধ্যে ৩ টি ইউনিয়নেরই ওয়ার্ড বিভাজনের গেজেট প্রকাশিত হয়েছে । গেজেট সমূহ নির্বাচন কমিশন বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে । ৩ টি ইউনিয়নের ভোটার বিভাজনের কাজ চলমান রয়েছে । শেষ হলেই শীঘ্রই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন বলেন, জেলার ৯ টি ইউনিয়নে সিমানা সংক্রান্ত জটিলতা ও মামলার কারনে অনেকদিন নির্বাচন বন্ধ রয়েছে । বর্তমানে জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে সিমানা নির্ধারণ হয়েছে গেজেটও হয়েছে । ভোটার তালিকা পুর্ণবিণ্যাসের কাজ শুরু করেছি । তালিকা পুর্ণবির্ণ্যাস শেষ হলে নির্বাচন কমিশনে পাঠাবো তারপর কমিশন চাইলে নির্বাচন দিবে ।
তথ্যমতে , ২০২২ এর ৭ এপ্রিল গেজেট হলেও উপজেলাতে গেজেটের ফাইল চাপা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে, ২০২৩ এর ১৬ ই ফেব্রুয়ারী পুণরায় গেজেট হওয়ার পর সীমাণা নির্ধারণ এবং ভোটার পুণর্বিণ্যাসের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। কবে নির্বাচন হবে কবে নতুন চেয়ারম্যান আসবে কবে উৎসব মূখর পরিবেশের মধ্য দিয়ে নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন সেই অপেক্ষায় এখন স্থানীয়রা।
Tags
বাংলাদেশ