Daily News BD Online

গোপালগঞ্জে অনাবাদি জমিতে তরমুজের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি


দুলাল বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ :

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার কাঠি ইউনিয়নের মানিকহার গ্রামে বিভিন্ন আগাছায় ভরপুর ছিল যে সকল অনাবাদি জমি, সেখানে কৃষকরা তরমুজের চাষ করে লাভবান হওয়ায় তাদের মুখে হাসি ফুটেছে। সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, মানকিহার গ্রামে ১৯ হেক্টর  অনাবাদি জমিতে এ বছর তরমু জের চাষ করা হয়। প্রতি হেক্টরে  ৩৮ টন তরমুজ ফলেছে। মোট ৭২২ মে্িট্টক টন তরমুজ উৎপাদন করা হয়েছে। যার বাজার মূল্য ২ কোটি ৮৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা। প্রতিটি তরমুজের ওজন হয়েছে ৫ কেজি থেকে ৮ কেজি পর্যন্ত। আগামী ১০ দিনের মধ্যে এসব তরমুজ বিক্রি শেষ হবে। এতে কৃষকরা প্রায় দেড় কোটি টাকা আয় করবেন বলে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে।  
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি অফিসের কাঠি ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বাসুদেব মধু জানান, ওই ইউনিয়নের মানিহার ব্লকের ১২ হেক্টর অনাবাদি  জমিতে গত বছর তরমুজের চাষ করে কৃষকরা লাভবান হন। তাই এ বছর কৃষক আরো ৭ হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষ বাড়ায়। এখানে চলতি বছরে মোট ১৯ হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষ হয়। আগে এসব জমি অনাবাদি থাকত।  আমরা কৃষকদের এসব জমিতে তরমুজ চাষে উৎসাহ দেই। তারপর তারা গত বছর প্রথম তরমুজ চাষ শুরু করে। এ বছর লাভজনক তরমুজ চাষ সম্প্রসারণ করেছে চাষীরা। এ ব্যাপারে কৃষকদের সব ধরণের সহযোগিতা করা হয়েছে। বর্তমানে বাজারে তরমুজ প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কৃষক প্রতিকেজি তরমুজ ৪০ টাকা কেজি দরে ক্ষেত থেকে পাইকেরদের কাছে বিক্রি করে। সেই হিসেবে কৃষক ২ কোটি ৮৮ লাখ ৮০ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রি করতে পারবে। আগামী ১০ দিন পরে তরমুজ বিক্রি শেষ হলে ওই জমিতে অন্য ফসলের চাষ করাও সম্ভব বলে জানালেন কৃষি কর্মকর্তা।
তরমুজ চাষি নারায়ন বিশ্বাস, সঞ্জয় ও স্বপন বলেন, মানিকহার গ্রামের এ জমি অনাবাদি পড়ে থাকতো। আমরা কৃষি বিভাগের পরামর্শে গত বছর ৬ জন কৃষক সংগঠিত হয়ে অনাবাদি ১২ হেক্টর জমিতে প্রথম তরমুজের চাষ করি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনাবাদি জমি চাষাবাদের আওতায় আনার নির্দেশ দেন। ফলে এ বছর আরো ৭ একর জমিতে তরমুজের চাষাবাদ বাড়াই। মোট ১৯ হেক্টর জমিতে এখন তরমুজের সমারোহ। তরমুজের ফলন ভালো হয়েছে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় তরমুজ বিক্রি করে খরচ বাদে প্রায় দেড় কোটি টাকা আয় করা সম্ভব হবে বলে আশা করছি।
মানিকহার গ্রামের ফিরোজ মিয়া বলেন, এ এলাকার অনাবাদি জমিতে স্বপনসহ ৬ জন কৃষক তরমুজ চাষ করেন। আগে এখানে কোন ফসল হত না। কখনো কল্পনা করতে পারিনি এ জমিতে তরমুজ হবে।  এখন ওই ৬ কৃষক এ জমিতে তরমুজ উৎপাদন করে অন্য চাষীদের চোখ খুলে দিয়েছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের  গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাফরোজা আক্তার বলেন, এ বছর অনাবাদি জমিতে চাষাবাদ বাড়াতে রবি মৌসুমের শুরুতে আমরা কৃষকদের তরমুজ চাষে উদ্বুদ্ধ করি। কৃষক আমাদের আহবানে সাড়া দিয়ে সব ক্ষেত্রেই চাষাবাদ সম্প্রসারণ করেছেন। এরমধ্যে  গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার কাঠি ইউনিয়নের মানিকহার বøকের কৃষক আনাবাদি ১৯ হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষ করেন। ১৯ হেক্টর জমি জুড়ে তরমুজের সমারহ  দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। গোপালগঞ্জের তরমুজের আড়তদার জয়দেব পাল বলেন, বাজারে তরমুজের শেষ সময় পার হচ্ছে তাই সরবরাহ কম বিধায় দাম বেশ চড়া। তরমুজ বিক্রি করে কৃষকরা ভালো দাম পেয়ে লাভবান হওয়ায় আগামী মৌসুমে কাঠি ইউনিয়নের মানিকহার গ্রামে অনাবাদি জমি ছাড়াও অন্য ফসলি জমিতে অনেকেই তরমুজ চাষের ইচ্ছে পোষন করছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন