Daily News BD Online

নওগাঁয় কিশোরী অপহরণ করে ভারতে পাচার চক্রের সক্রিয় ১ সদস্য গ্রেফতার


এ.বি.এম.হাবিব :

নওগাঁয় কিশোরী অপহরণ করে পার্শবর্তী দেশের বোম্বে পাচার চক্রের একজন সক্রিয় সদস্যকে গ্রেফতার করেছে নওগাঁর পুলিশ।

মামলা ও স্থানীয় সুত্রে জানা যায়,নওগাঁ সদর চকমুক্তার গ্রামের রতন বিবির স্বামী মারা যাওয়ার পর, বালুডাঙ্গা বাসষ্ট্যান্ডের বিভিন্ন হোটেলে পানি ঢোয়ানো ও বাসন মাজার কাজ করে একমাত্র কন্যা মরিয়াম (১১)কে নিয়ে পাশবর্তী চকরামচন্দ্র উত্তর পাড়ায় এক ভাড়াবাসাতে বসবাস করতো। রতন বিবি হতদরিদ্র হওয়ার সুযোগে বালুডাঙ্গা বাসষ্ট্যান্ডের আশে-পাশে বসবাসকারী নারী-শিশু পাচারকারীর সক্রিয় সদস্য মোছাঃ মুক্তি, তার স্বামী বাবু, মোঃ বাপ্পী,মোছাঃ হাসিনা,মোঃ আসলামসহ অজ্ঞাত আরো ৪/৫জন তার সাথে খাতির জমাতে থাকে। এক পর্যায়ে রতন বিবির বাড়ীতেও যাওয়া-আসা শুরু করতে থাকে তারা এবং তার ১১বছরের শিশু কন্যা মরিয়ামকে বিভিন্ন ধরনের খাবারের জিনিস খেতে দেয় ও খুব আদর স্নেহ করতে থাকে। রতন বিবি হতদরিদ্র, সহজ-সরল হওয়ায় এবং মুক্তির আপন বোন ইতির বাড়ী পাশা-পাশি হওয়ায় সে কখনো বুঝতেই পারে নাই, তার সাথে খাতির জমানো ব্যাক্তিরা ভয়ংকর পরিকল্পনা নিয়ে তার সাথে খাতির জমিয়েছে।

এমতবস্থায় গত বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারী) রতন বিবি প্রতিদিনের মত হোটেলের কাজে বাড়ী থেকে চলে গেলে, সেই সুযোগে পাচারকারীরা তার বাড়ীতে গিয়ে তার শিশু কন্যা মরিয়ামকে মোবাইল ফোন মেরামতের কথা বলে ফুসলিয়ে বাড়ী থেকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এ সময় পাশবর্তী বাদশা নামের এক ব্যাক্তি জিজ্ঞাসা করলে, তারা বলে, শহরের মধ্যে মোবাইল ফোন মেরামত করার জন্য যাচ্ছি। এরপর সুন্ধা পরও মরিয়াম ফিরে না এলে, বাবু ও বাপ্পীকে মরিয়ামের বিষয় জিজ্ঞাসা করলে তারা কোন উত্তর না দিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যায়। এরপর রতন বিবির কান্নাকাটি দেখে স্থানীয়রা এসে বিষয়টি জানতে পারে এবং এলাকার লোকজন সকলে মিলে অপহরণকারীদের বাসায় যায় এবং বসষ্ট্যান্ডের বিভিন্ন জায়গায় কয়েকদিন যাবত খুঁজতে থাকে কিন্তু কোথাও তাদেরকে পাওয়া না গেলে অবশেষে গত ১৯ ফেব্রুয়ারী নওগাঁ সদর থানায় একটি জিডি করেন। এরপরও শিশুকন্যা মরিয়ামের কোন খোঁজ  খবর না পেলে রতন বিবি গত ২৫ফেব্রুয়ারী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন। তাতে কোন কাজ না হলে, গত ২৭ ফেব্রুয়ারী নারী-শিশু দমন ট্রাইঃ-১ রতন বিবি বাদী হয়ে একটি মামলা করেন।আদালত মামলাটি এজাহার স্বরুপ গ্রহন করার জন্য নওগাঁ সদর থানায় প্রেরণ করেন। ঐ দিন সকালে ০১৮২৫৪৮৭৬১৭ মোবাইল ফোন নং থেকে রতন বিবির বাড়ীর পাশের জনৈক রেবেকা নামের একজনকে ফোন করে মরিয়মকে বের করে দেবে বলে ১০হাজার টাকা দাবী করে। পরবর্তীতে থানা পুলিশ সুকৌশলে ১নম্বর আসামীকে নওগাঁর নওজোয়ান মাঠে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে ১নম্বর আসামির কাছে থেকে জানা যায়, কিশোরী মরিয়মকে তারা সরাসরি শান্তাহার নিয়ে যায়। এরপর শান্তাহার থেকে যশোর হয়ে বেনাপোলে নিয়ে যায়।  সেখানে মরিয়মকে বিক্রয় করে মুক্তি তার ভাগের টাকা নিয়ে নওগাঁয় ফিরে এসে নওজোয়ান মাঠ এলাকায় গোপনে বসবাস করতে থাকে। আর মরিয়ামকে নিয়ে হাসিনা ভারতের বোম্বে চলে যায়। নিজের শিশুকন্যার এমন খবর শুনে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তার আহাজারিতে নওগাঁর আকাশ ভারী হয়ে যায়। প্রায় আড়াই মাসেও তার মেয়ে উদ্ধার না হওয়ায় দুঃখ, কষ্টে রতন বিবি তার শিশুকন্যার জন্য প্রায় পাগল হয়ে গেছে।

রনত বিবি ও তার আশে-পাশের বাসার মহিলারা অভিযোগ করে জানান,১নম্বর আসামী মুক্তির বোন ইতি, তাদের বাড়িতে গিয়ে মামলা উঠিয়ে নেওয়ার জন্য ও কিছু কাগজ-পত্রে স্বাক্ষর করার জন্য  হুমকি-ধমকি দিতে থাকে এবং ১০হাজার টাকাও দিতে চায়,সেই কথা গুলো শুনে পাশের মহিলারা এসে বাঁধা দিলে,সেখানে তুমুল ভাবে ঝগড়াঝাটির সৃষ্টি হয়বলে জানান। এ বিষয়ে ১নম্বর গ্রেফতারকৃত আসামী মুক্তির বোন ইতিকে জিজ্ঞাসা করলে সে বিষয়টি অস্বীকার করেন।

নওগাঁ সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মো. ফায়সাল বিন আহসানকে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে একটি মামলা হয়েছে, মামলার এক নম্বর আসামীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছেন এবং মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে মেয়েটিকে উদ্ধার করার চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, আশা করা যায় অল্পের মধ্যেই শিশুকন্যাটিকে উদ্ধার করা যাবে বলে তিনি জানান।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন