Daily News BD Online

দেবীদ্বার পৌর নির্বাচন : স্বাবলম্বী পৌরসভা গড়তে সাংবাদিক বাশারের ৩৭ প্রতিশ্রুতি


তাছকিয়া রহমান প্রতিভা, দেবীদ্বার (কুমিল্লা) থেকে :

অঙ্গীকারের নামে পৌরবাসীকে ‘স্বপ্নের বিরিয়ানি’ খাওয়াতে চান না মুক্তিযুদ্ধের গবেষক ও প্রবীণ সাংবাদিক এবিএম আতিকুর রহমান বাশার। পৌরসভার বিশাল জনগোষ্ঠীকে ন্যূনতম সেবা দিয়েই যোগ্যতার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে চান তিনি। আসছে কুমিল্লার দেবীদ্বার পৌরসভার নির্বাচন উপলক্ষে এমন মন্তব্য করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সাংবাদিক বাশার। ইশতেহারে ১২টি ইস্যুতে ৩৭ দফা উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করেছেন তিনি। জলাবদ্ধতা নিরসনের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিয়ে ইশতেহারে ব্যতিক্রম হিসেবে রেখেছেন তিনি ১০০ দিনের কর্মসূচি। অতীতের সব ভুল ছুঁড়ে ফেলে দেবীদ্বার পৌরসভাকে বিশ্বমানের পৌরসভা হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয়ও ব্যক্ত করেন স্বতন্ত্র এ মেয়র প্রার্থী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের এ্যকাউন্ট থেকে নিজেই ইশতেহারসহ এ প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করেন। পরে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নেরও জবাব দেন তিনি।

পৌরসভার উন্নয়ন এবং পরিচালনায় আলাদাভাবে আরও কিছু প্রতিশ্রুতি তুলে ধরেন সম্ভাব্য এ মেয়র প্রার্থী। নির্বাচিত হলে তিনি যানজট সমস্যা থেকে উত্তরণ, সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, নালা-নর্দমা, খাল-নদী থেকে দখলদার উচ্ছেদ ও সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ঘোষণা দেন তিনি। দেবীদ্বার পৌরসভাকে স্মার্ট পৌরসভা হিসেবে গড়ে তোলা, হোল্ডিং ট্যাক্স সহনীয় পর্যায়ে রাখা, সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করে চলমান উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রাখা ও পৌরসভাকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করার প্রতিশ্রুতিও দেন সাংবাদিক বাশার। দেবীদ্বার উপজেলা প্রেস ক্লাবে এসব প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করেন তিনি।

পৌর দপ্তরের নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, ২০০২ সালের আগস্ট মাসে দেবীদ্বার উপজেলার এ পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তী সময়ে ২০০৭ সালের ১৮ মার্চ বড় আলমপুর এলাকার বাসিন্দা আবদুল মতিন সরকার পৌরসভার মধ্যে থাকতে চান না এ মর্মে হাইকোর্টে একটি রিট করেন। তাঁর ওই রিট পিটিশন খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। এরপর ২০০৭ সালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে তিনি আপিল করেন। বর্তমানে ওই মামলা নিস্পত্তি হয়েছে।

এ ছাড়া ২০০৯ সালের ১৭ মে দেবীদ্বার থানার লাগোয়া বাসিন্দা আসাদুজ্জামান পাঠান দেবীদ্বার পৌরসভা বাতিলের দাবি জানিয়ে হাইকোর্টে রিট করেন। সম্প্রতি ওই রিট খারিজ করে দেন উচ্চ আদালত। এই রায়ের বিরুদ্ধেও আপিল করা হয়। সেটিও বর্তমানে নিস্পত্তি হয়েছে। মামলা দুটি থাকার কারণে ওই পৌরসভায় এতাদিন নির্বাচন হয়নি। এরপর ২০১১ সালের ১৮ জানুয়ারি, ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর ও ২০২১ সালের ১৬ জানুয়ারী কুমিল্লার সাতটি পৌরসভায় নির্বাচন হলেও দেবীদ্বার পৌরসভায় কোনো নির্বাচন হয়নি।

এদিকে নির্বাচন নিয়ে আর কোন অনিশ্চয়তা থাকায় নির্বাচন করার জন্য পৌর এলাকায় ফেস্টুন ও ব্যানার টাঙিয়েছেন স্বতন্ত্র ও আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রত্যাশীরা। গত বুধবার দুপুরে পৌরসভার খাদ্যগুদাম এলাকা ও মোহনা আবাসিক এলাকায় পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কাসেমের ছবি সংবলিত ফেস্টুন বিভিন্ন খুঁটিতে দেখা গেছে। তিনি বলেন, ‘তফসিল হয়েছে দলের কাছে মনোনয়ন চাইব।’
একই এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতা সাইফুল ইসলামের শত শত পোস্টার টাঙানো আছে। এই পৌরসভায় মেয়র পদে আরও নির্বাচন করতে চান সিনিয়র সাংবাদিক এবিএম আতিকুর রহমান বাশার, উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বাবুল হোসেন ওরফে ভিপি রাজু, পৌর আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি কেফায়েত উল্লাহ ও স্বপন মোল্লা এবং পৌর আওয়ামী লীগের সদস্য কাইয়ুম ভূঁইয়াসহ অনেকে।

স্বতন্ত্রের মধ্যে সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী সাংবাদিক বাশার বলেন, অঙ্গীকারের স্বপ্নের কাচ্চি বিরিয়ানি নয়, পৌরসভার বিপুল জনগোষ্ঠীকে ন্যূনতম সেবা দিতে পারাটাই আসল যোগ্যতা। সবার সহযোগিতা পেলে যোগ্যতার পরীক্ষায় জিতব বলে আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করি।

৩৭ দফা প্রতিশ্রুতির মধ্যে এ সম্ভাব্য প্রার্থী সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন জলাবদ্ধতা নিরসনকে। এই সমস্যা সমাধান ছাড়া দেবীদ্বার পৌরসভাকে মডেল পৌরসভা করা সম্ভব নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এজন্য সরকারের চলমান মেগা প্রকল্পগুলো ঠিকমতো বাস্তবায়নে মনোযোগী থাকবেন তিনি। পৌরসভার দখল হয়ে যাওয়া খাল-নালা-নদী, শিশু পার্ক পুনরুদ্ধার ও পানি নিস্কাশনের উপযোগী করতে সব ত্রুটি ও প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করে তা নির্মূলে আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করবেন বলেও জানান তিনি। তবে বাশারের ইশতেহারে পৌরসভার মশক নিধন নিয়ে পরিকল্পনার কোন ঘাঁটতি ছিল না। এটি নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন তুললে তিনি ‘পৌরবাসীকে নিয়ে সব সমস্যা সমাধান করবেন’ বলে উল্লেখ করেন।

গৃহকর নিয়ে বিতর্ক এড়াতে সাংবাদিক বাশার ডিজিটাল গৃহশুমারির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, বাড়িওয়ালা-ভাড়াটিয়া কেউ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সেভাবে যৌক্তিক হারে গৃহকর নির্ধারণ করা হবে। নাগরিক সেবা চালু রাখতে করদাতাদের স্বচ্ছতা-দায়বদ্ধতাও পূর্বশর্ত বলে তিনি মন্তব্য করেন। অপরিকল্পিত স্থাপনা তৈরি, সড়ক ও ফুটপাত দখল কঠোরভাবে নিরুৎসাহিত করার কথাও জানান বাশার। স্বল্প খরচে শিক্ষার মানসম্মত বিকাশে সর্বোচ্চ মনোযোগ দেওয়ার কথা জানান তিনি। স্বাস্থ্য খাতের আরো উন্নয়নে ধনাঢ্য ব্যক্তি এবং করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে যুক্ত করার ইচ্ছার কথা জানান সাংবাদিক বাশার। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধে স্মৃতিবিজরিত স্থানগুলোতে স্মুতিফলক ও স্তম্ব নির্মান করার ইচ্ছা আছে।

বর্জ্য অপসারণে নজরদারি বাড়ানোর কথা বলেন সাংবাদিক বাশার। তিনি বলেন, পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্যরে ডাম্পিং ইয়ার্ড করে রিসাইক্লিং প্লান্ট তৈরি করব। এছাড়া সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ডিজিটাল ট্রাফিক সিস্টেম ও নিরাপদ পথচারী পারাপারে প্রয়োজনে আন্ডারপাস চালু করতে চান। যানজট নিরসনে সংশ্নিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে বসে যত দ্রুত সম্ভব তা দূর করার দিকে মনোযোগ দেবেন এ সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী।

পৌরসভার সব কার্যক্রমকে ডিজিটাল নেটওয়ার্কের আওতায় আনতে সব উন্নয়ন ও সেবা খাতকে এক ছাতার নিচে আনার ঘোষণা দেন তিনি। নাগরিক তথ্যসেবাসহ সব সেবা কেন্দ্রীয় সার্ভার নেটওয়ার্কের আওতায় আনারও ঘোষণা দেন তিনি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন