শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলায় কৃষকদের উৎপাদিত ধান বাজারে বিক্রি করতে ‘ঢলতা’ নামে ২ মণে ৪ কেজি ধান ওজনে বেশি দিতে হয়। ফলে প্রতি মৌসুমে বাজারে কৃষকদের ধান বিক্রি করতে এসে ওজনে ঠকতে হচ্ছে। এর প্রতিকার চেয়ে স্থানীয় কৃষকদের পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। ৭ মে রবিবার সকালে ‘নালিতাবাড়ী কৃষক উন্নয়ন ফোরাম’ কৃষকদের পক্ষে ওই স্মারকলিপি দেয়।
স্মারকলিপি ও স্থানীয় কয়েকজন কৃষকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ২৩ হাজার ৯৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই ধান কাটা শুরু হয়েছে। কেউ কেউ ধান বাজারে বিক্রিও করেছেন। সেই ধান বাজারে বিক্রি করতে এসে স্থানীয় আড়তদাররা ৮০ কেজিতে দুই মণের স্থলে ঢলতা হিসেবে আরও ৪ কেজি ধান বেশি নিচ্ছেন। কষ্টে অর্জিত ধান ওজনে বেশি নেওয়ায় কৃষকরা নিরুপায় হয়ে মেনে নিচ্ছেন। তবে এর প্রতিকার চেয়ে স্থানীয় প্রায় এক ১ হাজার ৫০০ কৃষকের স্বাক্ষরিত একটি স্মারকলিপি গতকাল ইউএনওর কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কৃষকদের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক,ভোক্তা অধিকার, কৃষি বিভাগসহ বিভিন্ন দফতরে এর অনুলিপি দেওয়া হয়েছে।
কৃষকদের অভিযোগ, ২ মণ করে (৮০কেজি) প্রতি বস্তা ধান আড়তে নেয়ার পর পরিমাপের সময় বস্তার বদলে একটি বস্তা দেয়ার কথা থাকলেও বস্তার পরিবর্তে এক কেজি ও তথাকথিত ‘ঢলতা’ নামে আরও ৩ কেজি পাথরসহ মোট ৮৪ কেজি ধান কৃষকদের দিতে হয়। তখন কৃষকরা চক্ষুলজ্জায় এর প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না। স্থানীয় আড়তদারদের সাথে প্রশাসনের কর্মকর্তারা বিষয়টি নিয়ে একটি সমাধানে আসা প্রয়োজন বলে স্থানীয় কৃষকরা মনে করেন।
জামিরাকান্দা গ্রামের কৃষক সেলিম মিয়া বলেন, এক একর জমি আবাদ করে ধান তুলতে প্রায় ৪০ হাজার টাকা খরচ হইছে। এক একরে প্রায় ৬৫ মণ ধান পাইছি৷ অহন বাজারে ধান বেঁচতে আইসাও বিপদে পড়ছি। প্রতি বস্তায় (৮০ কেজি) ৪ কেজি ধান বেশি দেওয়া লাগতাছে। ৭৯০ টাকা মণ হিসেবে ধান বেইচা খরচ তোলাই কঠিন হইয়া পড়ছে। সরকার ধানের ওজন ঠিক কইরা দিলে কৃষকরা বাঁচতো।
এ ব্যাপারে নালিতাবাড়ী কৃষক আন্দোলন ফোরামের সভাপতি মাহমুদুল আহসান বলেন,এই অনিয়মের প্রতিবাদে আমরা শতাধিক কৃষক এক সপ্তাহ ধরে কৃষকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রায় ১ হাজার ৫০০ কৃষকের স্বাক্ষর নিয়েছি।
আমরা ইউএনও স্যারকে ধান ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে বিষয়টি সমাধানের জন্য স্মারকলিপি দিয়েছি। এছাড়া বিভিন্ন দফতরে এর অনুলিপি দেওয়া হয়েছে। নালিতাবাড়ী বাজারের ধান-চাল ব্যবসায়ী মেসার্স খালেদ এন্টার প্রাইজের সত্বাধিকারী আব্দুল বাতেন বলেন, কাঁচা ধান হওয়ায় ৮৪ কেজি (প্রতি দুই মনে) হিসেবে ধান কেনা হচ্ছে। কারণ এই ধান শুকালে ৪/৫ কেজি কমে যায়। তাই বাধ্য হয়েই ধান বেশি নিতে হয়। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খৃষ্টফার হিমেল রিছিল বলেন, কৃষকদের পক্ষ থেকে স্মারকলিপি পেয়েছি।আশা করছি স্থানীয় ধান ব্যবসায়ীদের সাথে আলোচনা করে দ্রুত সমাধানের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।