Daily News BD Online

মহাদেবপুরে মাতাজীহাট খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা দিনের পর দিন অনুপস্থিত


আব্দুল ওয়াদুদ, মহাদেবপুর (নওগাঁ) :


নওগাঁ জেলার মহাদেবপুর উপজেলার মাতাজীহাট সরকারি খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নানান অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তিনি দিনের পর দিন তার কর্মস্থলে অননুমোদিত অনুপস্থিত থাকলেও সংশ্লিষ্টরা তার বিরুদ্ধে কোনই ব্যবস্থা নেননি। এছাড়া বিশেষ দিবস ছাড়া তার অফিসে উত্তোলন করা হয় না জাতীয় পতাকা। অথচ কর্মকর্তা বলছেন তিনি নিয়মিতই অফিস করেন।
সরেজমিনে বুধবার (৩ মে) দুপুরে ওই খাদ্যগুদামে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তার বদলে তার অফিস চালাচ্ছেন উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিসের উপ-খাদ্য পরিদর্শক অসিম কুমার। তিনি জানালেন, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সপরিবারে বগুড়া শহরে বসবাস করেন। সেখান থেকে প্রায়ই এখানে এসে অফিস করেন। কোন কোন দিন অফিসে না আসলেও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের অফিসে মিটিং সেরে অথবা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের অফিসে কাজ সেরে বগুড়া ফিরে যান। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার অনুপস্থিতিতে যাবতীয় কাজ অসিম কুমারই করেন বলেও জানান। যাবতীয় কেনাকাটা, মালামাল গুদামে উঠানো, বিভিন্ন প্রকল্পের ডিও এর মালামাল সরবরাহ সব কিছুই করেন তিনি। এসময় তার অফিসে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের জন্য নির্ধারিত পাইপটি পতাকাবিহীন ফাঁকা দেখা যায়। জানতে চাইলে অসিম কুমার জানান, বিশেষ দিবস ছাড়া এখানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়না।
উপজেলার কয়েকজন মিল মালিক জানান, এই কর্মকর্তা দিনের পর দিন তার অফিসে অনুপস্থিত থাকেন। খাদ্যশস্য সংগ্রহের সময় ছাড়া কোন কোন সময় পুরো মাস অনুপস্থিত থাকেন তিনি। ফলে গুদামে চাল সরবরাহ, বিল উত্তোলন প্রভৃতি সময় বিড়ম্বনায় পড়তে হয় তাদের। স্থানীয় চেয়ারম্যান মেম্বাররাও একই কথা জানান। বিভিন্ন প্রকল্পের বরাদ্দ উত্তোলনের সময় তাঁকে পাওয়া যায়না। এলাকাবাসীর অভিযোগ, তার অনুপস্থিতির বিষয়টি এখন ওপেন সিক্রেট হলেও কর্তৃপক্ষ এব্যাপারে একেবারেই নীরব। উর্ধতন কর্তৃপক্ষের প্রত্যক্ষ মদদেই তিনি দিনের পর দিন অনুপস্থিত থাকলেও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়না।
সংশ্লিষ্টরা জানান, একটি সরকারি খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অবশ্যই গুদামের সংরক্ষিত এলাকায় নির্মিত সরকারি বাসভবনে বসবাস করতে হবে। কর্মস্থলের পাঁচ মাইলের উর্ধে দূরে কোথাও যেতে হলে উর্ধতন কর্মকর্তার নিকট থেকে ছুটি অথবা কর্মস্থল ত্যাগের অনুমতি নিতে হবে। অনুমতি না নিয়ে তিনি কিভাবে প্রতিদিন বগুড়া থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার পথ পারি দিয়ে অফিসে আসেন, আবার চলে যান তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এছাড়া গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পতাকা বিধিমালা ১৯৭২ এ বলা হয়েছে, ‘জাতীয় ও বিশেষ দিবস ছাড়াও প্রতিদিন গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবন এবং অফিস সমূহে যেমন, রাষ্ট্রপতির বাসভবন, সংসদ ভবন প্রভৃতি, সকল মন্ত্রণালয় এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলদেশ সচিবালয় ভবন সমূহ, হাইকোর্টের অফিস সমূহ, জেলা ও দায়রা জজ আদালত সমূহ, বিভাগীয় কমিশনার, ডেপুটি কমিশনার/কালেক্টর, চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদ অফিস সমূহ, কেন্দ্রীয় ও জেলা কারাগারসমূহ, পুলিশ স্টেশন, শুল্ক পোস্ট অফিস সমূহ, প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং এই রকম অন্যান্য ভবনে সরকার কর্তৃক সময় নির্ধারিত ভবন সমূহে সকল কর্মদিবসে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করতে হবে।’ সরকারি দফতরে জাতীয় পতাকা উত্তোলন না করার বিষয়টি ‘অত্যন্ত দুঃখজনক’ উল্লেখ করে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর মাধ্যমে অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার বাহক জাতীয় পতাকার।
জানতে চাইলে মোবাইলফোনে মাতাজীহাট খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উত্তম কুমার নন্দী অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তিনি নিয়মিতই অফিস করেন। তবে তিনি স্বপরিবারে খাদ্যগুদামের সরকারি বাসভবনে বসবাস করেন না বলে স্বীকার করেন।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহাজের হোসেন জানান, উত্তম কুমার নন্দী খাদ্যগুদাম এলাকায় না থাকলেও অফিস করেন। গতকালও তিনি তাকে উপজেলা সদরে দেখেছেন বলে জানান। কর্মস্থল থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে যাবার জন্য তিনি কর্মস্থল ত্যাগের কোন অনুমতি নেননি বলেও জানান। তবে উপজেলা সদরের অফিসের একজন কর্মচারি অসিম কুমারকে কেন মাতাজীহাট খাদ্যগুদামে রাখা হয়েছে তার কোন সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন