দেলোয়ার হোসেন, পাঁচবিবি (জয়পুরহাট) প্রতিনিধিঃ
এই আইসক্রিম, লাগবে আইসক্রিম..., আর বাক্সের ঢাকনার ধপাস ধপাস শব্দ করে কাস্টমার ডেকে বরফ বা আইসক্রিম বিক্রি করেন আব্দুল নামের এক বরফ ব্যবসায়ী। সাইকেলের পিছনে বাক্স বেঁধেজয়পুরহাটের পাঁচবিবির বিভিন্ন গ্রামগঞ্জ ঘুরে বরফ বিক্রি করে আসছেন তিনি। দাবদাহে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে জনজীবন। তৃষ্ণা মেটাতে চাহিদা বাড়ছে আব্দুল ভাই এর বাক্সের বরফ। আর এই ব্যবসা করে চলে তার সংসার।
সেই ৮০ দশক থেকে আব্দুল ভাই বরফ বিক্রি করেন। প্রায় ৪৩ বছর যাবৎ বরফ ব্যবসায়ী তিনি। এক সময় তার বাক্সের বরফের অনেক চাহিদা ছিল পাশাপাশি কদরও ছিল বেশ। সেই সময় ২৫ পয়সা, ৫০ এবং ১ টাকা দামের বরফ ছিল। স্কুল-কলেজ, হাট-বাজার, গ্রামসহ শহরেও প্রচুর চলত তার বরফ ব্যবসা। তখন ছিল না ফ্রিজ, তার বাক্সেই থাকত বরফ। ঠান্ডা বরফ শুধু তার বরফ বাক্সেই পাওয়া যেত।
যুগ পাল্টেছে। মানুষ এখন আধুনিক হয়েছে। আধুনিক যুগের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির কারণে দোকানে, হোটেল, বাড়িসহ অফিসে থাকে ফ্রিজ। এসব ফ্রিজে থাকে অনেক উন্নত মানের আইসক্রিম। এসব ফ্রিজের কাছে হারিয়ে গেছে বাক্সে বরফ বিক্রি করার প্রচলন।
বর্তমান গ্রামগঞ্জে তার বরফের চাহিদা অনেক। চলছে দীর্ঘদিনের দাবদাহ, এই গরমে অতিষ্ঠ জনসাধারণ তার বাক্সে থাকা বরফ কিনে খাচ্ছেন। তার কাছে আছে ৫ টাকা দামের বরফ। একটু প্রশান্তি পেতে আব্দুল ভাই বরফ চেয়ে খাচ্ছে সবাই।
এনামুল বলেন, ‘প্রচন্ড গরমে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে তাই বরফ কিনে তৃষ্ণা মিটাচ্ছি। এই বরফওয়ালাকে প্রতিদিন আমাদের এলাকায় পাওয়া যায়।’
মোছাঃ রেসমা খাতুন বলেন, ‘এখন তো সব দোকানেই আইসক্রিম পাওয়া যায়। আমরা যখন স্কুল-কলেজে পড়তাম, তখন বাক্সে করে বরফ বিক্রি হতো। তখন চার আনা থেকে আট আনা ও এক টাকার বরফ ছিল। বরফ ব্যবসায়ীদের বাক্সের ঢাকনার শব্দ শুনে আমরা দৌড়ে গিয়ে বরফ কিনে খেতাম। এখন এই দৃশ্য তেমন চোখে পড়ে না। তবে মাঝেমধ্যে এই ব্যবসায়ীর কাছে আগের নিয়মে বরফ পাই। এতে করে পুরনো দিনগুলো সামনে চলে আসে।’
বরফ ব্যবসায়ী আব্দুল ভাই বলেন ‘৪৩ বছর যাবৎ বরফের ব্যবসা করে আসছি। আগে তো সাইকেল ছিল না। পিঠে বাক্স ঝুলে গ্রামগঞ্জে ছুটে বরফ বিক্রি করতাম। বরফ বিক্রি করে ছেলেমেয়েদের মানুষ করেছি। সবার বিয়েশাদি দিয়েছি,। ব্যবসার মায়া ছাড়তে পারি না। তাই এখনও ঘুরে ঘুরে বরফ বিক্রি করে আসছি। প্রচন্ড গরম পড়ছে, তাই বরফের চাহিদাও বেশি।’
তিনি আরও বলেন, ‘২০০ থেকে ২৫০ পিস বরফ বিক্রি হয়। তাতে আমার ৫০০ টাকার মতো লাভ আসে। হিলি বাজারে ফ্যাক্টরি থেকে বরফ তৈরি করি। বরফ তৈরি করতে প্রতি পিস খরচ হয় দুই থেকে আড়াই টাকা। বিক্রি করি প্রতি পিস ৫ আর১০ টাকা। এতে যা লাভ হয়, তাতে সুন্দরভাবে আমার সংসার চলে।’
Tags
বাংলাদেশ