সজল আহাম্মদ খান, আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি :
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার চলতি মৌসুমে ইরি-বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। তবে কেউ করেছেন প্রচলিত ধান আবার কেউ করেছেন উচ্চ ফলনশীল ধান আবাদ। এদিকে প্রচলিত ধান আবাদ করে কৃষকরা যখন খুব বেশী লাভের মুখ দেখতে পারছে না তখন বাংলাদেশ ধান গবেষনা ইনষ্টিটিউটর উচ্চ ফলনশীল (হাইব্রিড) ব্রি ধান আবিষ্কারের ফলে কৃষকদের মাঝে বেশ সারা জাগিয়েছে। উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড জাতের ধানের আবাদে ফলন ভালো ও অন্য প্রচলিত ধানের চাইতে বেশী হওয়ায় দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের মাঝে। সেইসাথে বিক্রিতে ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকরা এখন হাইব্রিড ধানে আশার আলো দেখছেন।
স্থানীয় একাধিক কৃষকা জানায়, আগে যেখানে প্রচলিত ধান আবাদ করে বিঘা প্রতি ১৪ থেকে ১৫ মণ পাওয়া যেতো এখন উচ্চ ফলনশীল ধান আবাদ করায় পাচ্ছেন ২২ থেকে ২৫ মণের উপর ধান পাচ্ছেন। এতে তারা অনেক লাভবান হচ্ছেন। এই ধান মানুষের জিঙ্ক ও প্রোটিন ঘাটতি মোকাবেলা এবং কৃষকদের অর্থনৈতিক সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে বেশ সহায়ক হচ্ছে। উপজেলার সর্বত্র এখন ধান কাটা শুরু হওয়ায় কৃষকরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। পাশাপাশি বসে নেই কৃষানীরা, তারাও মনের আনন্দে ধান শুকিয়ে গোলাই তুলার কাজে তাদেরকে সাহায্য করছেন। চলতি মৌসুমে এ উপজেলার কৃষকরা রোদ বৃষ্টি মাথায় নিয়ে হাল চাষ দিয়ে বোরো ধান আবাদ করেন। নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের ফলে কৃষকরা জমিতে সঠিক সময় পর্যাপ্ত পানি পেয়েছে।
এছাড়া কৃষি অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা মাঠপর্যায়ে থেকে কৃষকদের সব রকম পরামর্শ প্রদান, পর্যাপ্ত সার পাওয়ায় এবার কোনকিছুতেই কৃষকদের বেগ পেতে হয়নি। তাছাড়া এখন পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সর্বত্রই বোরো ধানের ভালো ফলন হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় বোরো চাষ আবাদে প্রায় ৬ হাজার হেক্টর জমিতে লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এরমধ্যে প্রায় ১ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে উন্নত ফলনশীল হাইব্রিড জাতের ধান আবাদ করেন। যা গত বছরের থেকে ১৫০ হেক্টর জমি বেশী আবাদ হয়। তবে এ মৌসুমে সরকার কর্তৃক প্রায় ৩হাজার কৃষকের মাঝে হাইব্রিড জাতের বীজ ও সার দেওয়া হয়। উচ্চ ফলনশীল ধান বীজের মধ্যে রয়েছে ব্রি ৭৫, ৮৪, ৮১, ৬৩,৮৮, ৯৬, সুবর্ণ, হীরা জাগরনীসহ নানা প্রজাতির ধান। ওইসব ধান মানুষের শারীরিক ঘটতি পূরণে যেমন সহায়ক তেমনি অধিক ফলন নিশ্চিত করে বিধায় কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে।
সরেজমিনে পৌর এলাকায় তরাগন, দেবগ্রাম, নারায়নপুর, উপজেলার নূরপুর হীরা- পুর, উমেদপুর, বাউতলা, সাতপাড়া, ধাতুরপহেলা, তুলাবাড়ি, কুসুমবাড়ি, নুনাসারসহ বিভিন্ন স্থানে গিয়ে দেখা যায় স্থানীয় কৃষকরা বোরো ধান কাটা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। পৌর এলাকার কৃষক মো: রফিকুল ইসলাম বলেন, এ মৌসুমে ৮ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেন। এরমধ্যে ৫ বিঘায় রয়েছে উচ্চ ফলনশীল ধান। ফলন বৃদ্ধিতে শুরু থেকেই কৃষি কর্মকর্তারা তাকে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শসহ সহযোগিতা করেন। এ পর্যন্ত উচ্চ ফলনশীল ৫ বিঘা জমির ধান কাটা হয়েছে। প্রতি বিঘায় তিনি ২৩-২৫ মণ ধান পেয়েছেন। দেশীয় যে ধান আবাদ করা হয় সর্ব সাকেলা ১৫ মণের বেশী পাওয়া যাবে না। তিনি বলেন সামনে থেকে সব জমি হাইব্রিড জাতের ধান আবাদ করবেন বলে জানায়। কারণ জমি চাষে খরচ বেড়েছে এ ধান ছাড়া জমি করে লাভবান হওয়া যাবে না।
কৃষক মো: মজনু মিয়া জানান, গত ২ বছর ধরে তিনি জমিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান আবাদ করছেন। সার, বীজ, কীটনাশক ও ডিজেলসহ সবকিছুই দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে লোকশান গুনতে হতো। তাই তিনি হাইব্রিড ধান আবাদ করে তিনি অনেকটাই লাভবান হচ্ছে। এবার তার জমিতে বিঘা প্রতি ২৪-২৬ মণ করে ধান পেয়েছেন বলে জানায়।
কৃষক মো. সবুজ মিয়া বলেন, প্রচতিল ধান আবাদ করলে বিঘা প্রতি ১৩-১৪ মণের বেশী ধান পাওয়া যায় না। তাই উচ্চ ফলসীল ব্রি-৮১,৮৮,৮৪ হাইব্রিড জাতের ধান আবাদ করেন। ধান কাটা শুরু হয়েছে। বিঘা প্রতি ২২ থেকে ২৫ মণ ফলন পাওয়ায় তিনি খুবই খুশি। তিনি বলেন এক সময় ধান চাষে অনেক টাকা লোকশান গুনতে হতো। হাইব্রিড ধান আবাদে ফলন ভালো হওয়ায় এ চাষে বেশ লাভবান হচ্ছেন। কৃষক মো. সিরাজ মিয়া জানায়, গত আমন মৌসুমে ৬ বিঘা জমিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান আবাদ করে প্রতি বিঘায় তিনি ২৩-২৫ মণ ধান পেয়েছেন। তাই এ মৌসুমে ৮ বিঘা জমিতে তিনি উচ্চ ফলনশীল ধান আবাদ করেন। এ পর্যন্ত ৩ বিঘা জমির ধান কাটা হয়।