রশিদুল আলম রশিদ, নওগাঁ প্রতিনিধীঃ
নওগাঁর পতিসরে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬২তম জন্মজয়ন্তী অনুষ্ঠানে অ-ব্যবস্থাপনা ও সাংবাদিকদের অসম্মানিত করার ঘটনায় প্রতিকার চেয়ে বিভাগীয় কমিশনারের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার জিএসএম জাফরউল্লাহ এর হাতে স্মারকলিপি তুলে দেন সাংবাদিক নেতৃবৃন্দরা। বিভাগীয় কমিশনার স্মারকলিপি গ্রহণ করে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিরসনে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দকে আশ্বস্ত করেন।
স্মারকলিপি প্রদানকালে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, নওগাঁ জেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি কায়েস উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক শফিক ছোটন, নওগাঁ জেলা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম নয়ন, জেলা প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফরিদুল করিম, আসাদুর রহমান জয়, মামনূর রশিদ বাবু, এমআর ইসলাম রতন প্রমুখ। দ্রæত সমস্যা নিরসন করা না হলে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার হুঁশিয়ারি দেন সাংবাদিক নেতারা।
উল্লেখ্য, গত ৮ মে সোমবার নওগাঁ আত্রাই উপজেলার পতিসরে তিন দিনব্যাপী রবীন্দ্রজয়ন্তী উৎসবের উদ্বোধনী দিন ছিলো। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ও নওগাঁ জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ওই দিন সেখানে নওগাঁ জেলা শহর ছাড়াও পার্শ্ববর্তী রাজশাহী, নাটোর, বগুড়া ও জয়পুরহাটসহ স্থানীয় বিভিন্ন উপজেলা পর্যায়ের সাংবদিকগণ সমবেত হোন। তাঁরা পতিসর থেকে রবীণ্দ্র জন্মোৎসবের সাংবাদ সংগ্রহ ও পরিবেশন করতে আসেন। কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয় এই যে, আয়োজনে অব্যবস্থাপনার কারণে আগত সাংবাদিকরা অ-সম্মানিত হন। অনুষ্ঠানে ওইদিন আগত সকলের জন্য বসার আসনের ব্যবস্থা থাকলেও সাংবাদিকদের বসার কোনো আসন ছিল না। ফলে বাধ্য হয়েই মাটিতে, গাছের গোড়ায় ও অন্যান্য স্থানে বসে, দাঁড়িয়ে অনুষ্ঠান কাভার করতে হয় গণমাধ্যম কর্মীদের।
তাৎক্ষণিকভাবে সমস্যা সমাধানে নওগাঁ জেলা প্রেসক্লাবের নের্তৃবৃন্দ আয়োজক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এ নিয়ে সাংবাদিকসহ বিভিন্ন মহলে ব্যাপক সমালোচনা ও ক্ষোভ তৈরি হয়। পরবর্তীতে এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি ও আলোচনা সমালোচনা ছড়িয়ে পরে। এমন ঘটনায় গোটাসাংবাদিক মহল হেয় প্রতিপন্ন হয়েছে।
ঘটনার প্রতিকার চেয়ে নওগাঁ জেলা প্রেসক্লাবে ৯ মে মঙ্গলবার রাতে এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় সাংবাদিকদের অ-সম্মানিত করার ঘটনায় নওগাঁ জেলা প্রশাসনকে দায়ি করে প্রতিবাদ ও নিন্দা প্রকাশ করা হয়। একই সাথে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীর সমাপনী অনুষ্ঠানসহ নওগাঁ জেলা প্রশাসনের সকল ধরনের অনুষ্ঠান ও সংবাদ অনির্দিষ্টকালের জন্য বর্জনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গৃহীত এই কর্মসূচী চলমান রয়েছে।
পরবর্তীতে এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় সাংবাদিকদের মধ্যে আরো ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ১১ মে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আবারও নওগাঁ জেলা প্রেস ক্লাবে এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি মো: কায়েস উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় স্থানীয় সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
উক্ত সভা থেকে আগামী তিন দিনের (১২ থেকে ১৪ মে) মধ্যে জেলা প্রশাসককে দুঃখ প্রকাশ, ঘটনার সম্মানজনক সমাধান ও সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহনের দাবি জানানো হয়। সভা শেষে সকলের অবগতির জন্য বিষয়টি বিবৃতি আকারে প্রকাশ করা হয়।
কিন্তু অতীব দু:খের বিষয় এই যে, আজ অবধি জেলা প্রশাসক উদ্ভূত পরিস্থিতি সমাধানে কোন যথাযথ উদ্যোগ নেননি। এতে তিনি সাংবাদিক মহলের কাছে আস্থাহীন হয়ে পড়েছেন।
এদিকে সাংবাদিকদের অ-সম্মান করায় স্থানীয় বিভিন্ন মহলে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানিয়ে নওগাঁ সাংবাদিক ইউনিয়ন, জেলার অপর ১০ টি উপজেলার স্থানীয় প্রেসক্লাব, নাটোর, রাজশাহী, বগুড়া ও জয়পুরহাট জেলা প্রেসক্লাব, বিভিন্ন উপজেলা প্রেসক্লাব, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ নওগাঁ জেলা প্রেসক্লাবের আন্দোলন কর্মসূচীর সাথে একাত্বতা প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন।
এরপরও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংকট নিরসনে নওগাঁ জেলা প্রেসক্লাবের সাথে কোন প্রকার যোগাযোগ করা হয়নি। ফলে বিষয়টি সমাধানে স্থানীয় সাংবাদিকগণের সমন্বয়ে আপনার নিকট দাবি তুলে ধরা হলো।
ঘটনার দ্রুত সুষ্ঠ সমাধান করা না হলে শিগগিরিই জেলা প্রশাসকের অপসারণ দাবিতে প্রগতিশীল সাংবাদিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও সুধীজনদের সাথে নিয়ে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। তাই বিষয়টি অতীব গুরুত্বসহকারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনে দাবি জানান।