মোঃ হানিফ মিয়া, রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি :
একই সাগরে দুই নিয়ম। বাংলাদেশীরা ঘাটে নোঙর করে থাকলেও বঙ্গোপ সাগরে মাছ শিকার করবেন ভারতীয়রা। তাই সামুদ্রিক মাছের প্রজনন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকারে দেয়া নিষেধাজ্ঞা কাজে আসছেনা বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এদিকে একেরপর নিষেধাজ্ঞায় নাকাল জেলেরা। কর্মহীন জেলে পরিবার গুলোতে চলছে হাহাকার। নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা কমিয়ে আনার দাবী জেলেদের।
জানাগেছে, সমুদ্রে মাছ শিকারের ওপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা চলছে। ২০ মে থেকে শুরু হওয়া এ নিষেধাজ্ঞা চলবে আগামী ২৩ জুলাই পর্যন্ত। এই সময়কালে সমুদ্রে মাছ শিকারী কোন ধরনের নৌযান চলাচল করতে পারবেনা। তাই ঘাটে বসে আছেন জেলেরা। কিন্তু বঙ্গোপ সাগরে মাছ শিকার করছেন পাশ্ববর্তী দেশের জেলেরা।
জেলেদের অভিযোগ, প্রতিবারই বাংলাদেশে নিষেধাজ্ঞার সুযোগে সমুদ্র দাপিয়ে বেড়ায় ভারত ও মিয়ানমারের জেলেরা। মাছ ধরা বন্ধ থাকায় কর্মহীন বাংলাদেশী জেলেরা খেয়ে না খেয়ে দিন পার করলেও সমুদ্র থেকে মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছেন অন্যরা। তাই শুরু থেকেই এ নিষেধাজ্ঞার বিরোধীতা করে আসছেন জেলে ও মৎস্যজীবিরা।
শেরই বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন ফিশারিজ একোয়াকালচার বিভাগের চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ আলী জানান, একই সাগরে দুই নিয়ম চলতে পারেনা। পার্শবর্তী অন্য দেশের জেলেরা মাছ ধরায়, বঙ্গোপ সাগর জালমুক্ত থাকছেনা। তাই এই নিষেধাজ্ঞার উপকারীতা দেখছেননা তারা। সামুদ্রিক মাছের নিরাপদ প্রজননের জন্য সমুদ্র জালমুক্ত রাখতে পার্শ্ববর্তী দেশ গুলোর সাথে সমন্বয় করে নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা নির্ধারণের পরামর্শ তাদেন।
আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ড ফিশের গবেষক সাগরিকা স্মৃতি জানান, বঙ্গোপসাগর একটা। কিন্তু নিয়ম দুইটা। এটা কিভাবে সম্ভব? বাংলাদেশের জেলেরা মাছ ধরা বন্ধ রাখলেও অন্য দেশের জেলেরা মাছ ধরছে। তাতে সাগর জালমুক্ত থাকছেনা।সাগরে যদি মাছ শিকার চলেই তাতে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে লাভ কি? যদি উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে হয় তাহলে পার্শ্ববর্তী দেশ গুলোর সাথে সমন্বয় করে নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা নির্ধারণ করতে হবে। এছাড়াও সামুদ্রিক মাছের প্রজননের সঠিক সময় চিহ্নিত করতে নতুন করে গবেষণা করা দরকার বলেও জানান এই মৎস বিশেষজ্ঞ।
রাঙ্গাবালী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আনোয়ারুল ইসলাম বাবুল জানান, ভারত ও মিয়ানমারের সাথে একই সঙ্গে নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা নির্ধারণের জন্য উভয় দেশের সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। আগামী দিনে সমন্বয় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানাগেছে, বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞার কারণে বছরের ৩৬৫ দিনের মধ্যে ১৪৭ দিন ঘাটে নোঙর করে থাকতে হয় উপকূলের জেলেদের। নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত জাটকা সংরক্ষণে ৮ মাস, মার্চ-এপ্রিল দুই মাস অভায়শ্রমে এবং সাগরে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা সহ বছরে ১৪৭ দিন সাগর ও নদীতে নিষেধাজ্ঞা থাকে।
এসময় বেকার কাটাতে হয় সাগর উপকূলের জেলেদের। যার কারণে ঋণের বোঝা পিছু ছাড়ছেনা জেলেদের।
Tags
বাংলাদেশ