মহিলা ওয়ার্ডের ৫ ভর্তি রোগীর স্বজনরা হাত পাখার বাতাসে রোগীদের সেবা দিচ্ছেন।
তাছকিয়া রহমান প্রতিভা, দেবীদ্বার (কুমিল্লা) থেকে :
কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বেহাল অবস্থা। ওয়ার্ডকে গোডাউন বানিয়ে বৈদ্যুতিক পাখা’র ব্যাবস্থা না রেখেই তৃতীয় তলার বারান্দায় সিট পেতে ভর্তি রুগীদের চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। তীব্র গরমে হাসপাতালে জরুরি চিকিৎসা সেবা নিতে আসা ভর্তি রুগীদের পরতে হচ্ছে ভোগান্তিতে, হাত পাখাই যেনো তাদের একমাত্র ভরসা।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সুত্রে জানা যায়, ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রয়োজনীয় চিকিৎসকসহ জনবল তুলনায় অনেক কম। প্রতিদিন আউট ডোরে রোগির পরিমান ৯শত থেকে হাজার ছাড়িয়ে যায়। ৫০ বেডের স্থলে মাঝে মাঝে ফ্লোরিংসহ ৭০ বেড ছাড়িয়ে যায়। চলমান অতিমাত্রায় তাপদাহে ডায়েরিয়া, কাশি ও ঠান্ডাজনিত রোগির সংখ্যা বেড়ে গেছে। সোমবার দিন রাতে অত্যধিক গরম ও অস্বাভাবিক লোডশেডিং এর কারনে পুরুষ ওয়ার্ডে একজন রোগি ছাড়া বাকী সবাই হাসপাতাল ছেড়ে গেছে। তৃতীয় তলার নারী ওয়ার্ডে ৫ জন নারী রোগিকে দেখা যায়, বাকী রোগিরাও হাসপাতাল ছেড়েছেন। যারাই আছেন প্রত্যেক রোগির স্বজনরা হাত পাখায় রোগিকে বাতাস দিচ্ছেন। ১৮টি প্রাইভেট হাসপাতাল এবং ১৮টি ডায়াগনষ্টিক সেন্টারসহ ৩৬টি হাসপাতাল ডায়গনষ্টিক সেন্টারের প্রায় শতাধিক দালাল এবং ১৫-২০টি ঔষধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টিভ’র দৌরাত্মে অতিষ্ঠ রোগি ও স্বাস্থ্য কর্মীরা। ডায়েরিয়া ওয়ার্ড, নারী-পুরুষ ওয়ার্ডসহ গতকালের হিসেবে ৩৪ হলেও মোট রোগী আছে মাত্র ২৮ জন। বৈদ্যুতিক পাখাবিহীন পুরুষ ওয়ার্ডের ১ জন ছাড়া সবাই হাসপাতাল ছেড়েছেন।
প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের দালাল চক্র এবং বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের দৌরাত্মে রোগি, রোগির স্বজন, চিকিৎসক, নার্সসহ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মচারীরা জিম্মী হয়ে থাকতে হচ্ছে। প্রতিবাদ করলেই রোগি ও রোগির স্বজনরা লাঞ্ছিত হতে হয়। অপরদিকে চিকিৎসক, নার্সসহ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মচারীরাও নিরাপত্তাহীনতার কারনে আপোষ করে চলতে হয়। ব্যতয় ঘটলে তারাও লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়।
মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে যেয়ে দেখা যায়, আক্তার হোসেন নামে প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের দালাল চক্রের এক সদস্য রোগি ও রোগির স্বজনদের সাথে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে আছে। উপস্থিত রোগি ও স্বজনরা জানান, হাসপাতালের বহির্বিভাগের ৭নং কক্ষে চিকিৎসা নিতে আসা এক নারীকে চিকিৎসকের দেয়া পরীক্ষা নিরীক্ষা আক্তারের মাধ্যমে করতে বললে ওই নারী রাজি না হওয়ায় উপস্থিত লোকজনের সামনেই সে নারীকে চর- থাপ্পর মেরে লাঞ্ছিত করে। এসময় কর্তব্য চিকিৎসকরা বাঁধা দিলে তাদেরকেও হুমকী দেয়া হয়। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পুলিশ ডেকে এনে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দ্বিতীয় তলার দক্ষিণ পাশের নারী ও শিশু ওয়ার্ডটিকে মালামাল রাখার গোডাউন বানিয়ে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। তৃতীয় তলার পুরুষ ওয়ার্ডে নারী রোগীদের স্থানান্তর করা হয়েছে। ফলে দীর্ঘ প্রায় ৩মাস যাবৎ তৃতীয় তলার সামনের বারান্দায় পুরুষ রুগীদের সিট পেতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তবে এই তীব্র গরমে সেখানে বৈদ্যুতিক পাখার ব্যাবস্থা না থাকায় সেবা নিতে আসা রোগীরা আরো বেশী অসুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরছেন।
পাখা বিহীন পুরুষ ওয়ার্ডে অতিরিক্ত গরমে ১জন ছাড়া বাকী রোগীরা ওয়ার্ড ছেড়েছে। |
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ভর্তিকৃত একাধিক রোগী ও তাদের স্বজনেরা অভিযোগ করে বলেন, হাসপাতালে সুস্থ হতে চিকিৎসা নিতে এসে মনেহয় আরো অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি। একে তো নোংড়া পরিবেশ, তার ওপর বৈদ্যুতিক পাখা’র অভাবে সীমাহীন দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। কেউ কেউ বাড়ি থেকে নিজস্ব ফ্যান এনে একটু স্বস্তি খুঁজছেন। টয়লেটে যাওয়া যাচ্ছেনা পানির অভাবে, পানি পাওয়া গেলেও টয়লেটের নোংড়া অবস্থা এবং ভাঙ্গা দরজার সামনে কাপড় দিয়ে ইজ্জত রক্ষা করে চলতে হচ্ছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভিতরে এমন বেহাল অবস্থা বাইরে থেকে যা বুঝার মতো নয়।
হাসপাতালে নেই পরিকল্পিত লাইটিং ব্যাবস্থা রাতের অন্ধকারে হাসপাতালে ঢুকে নিচতলা থেকে উপর তলায় উঠতে রোগী ও স্বজনদের বাড়ি থেকে বাতি নিয়ে আসতে হয়। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসায় একটি মুক্তিযুদ্ধা কেবিন রাখা হলেও কেবিনটিরও বেহাল অবস্থা লক্ষ করা যায়।
হাসপাতালের বহিঃবিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রুগীদের সাথে কথা বলে জানাযায় তাদেরও রয়েছে নানান ধরনের অভিযোগ। দালাল চক্রে অতিষ্ঠ হয়ে পরেছে হাসপাতালে আগত রোগীরা, কম সময়ে ডাক্তার দেখিয়ে দিবে আস্বাসে টেনে হিচরে নিয়ে চলে তাদের। কোনো কোনো রুগীরা ডাক্তার দেখাতে পারলেও পাচ্ছেনা পর্যাপ্ত ঔষধপত্র, এক ঘন্টার মধ্যেই ফুরিয়ে যায় কিছু কিছু ঔষধপত্র, তবে তা কোথায় যাচ্ছে তার খোজ রাখেনা কেউ। এসব বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কোন নজরদারী নেই বল্লেই চলে।
এবিষয়ে দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নাজমুল আলম বলেন, আমাদের হাসপাতালের উন্নয়নে কাজ চলছে। তাই টেম্পোরারি তৃতীয় তলার বারন্দায় পুরুষ রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হচ্ছে। ঠিকাদার নিয়োগে দেরি হওয়ায় একটু বেশি সময় লাগছে, কিছুদিনের মধ্যেই সকল সমস্যার সমাধান হবে। দালালের বিষয়টি উপজেলা পরিষদের মিটিংয়ে উত্থাপন করেছি, আজ (মঙ্গলবার ৮ মে) আক্তার নামে এক দালালের হাতে রোগির স্বজন লাঞ্ছিত করার ঘটনার প্রতিবাদ করলে চিকিৎসকরাও হুমকীর মুখে পড়ে। পুলিশ এনে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে হয়েছে। কারোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলেও প্রভাবশালীদের সুপারিশ। এসব অনাকাঙ্খিত ঘটনাগুলো সমাধান ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মিলে দালাল নির্মূলে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তিনি আরো বলেন, মহিলা ওয়ার্ডে ৫টি ফেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাকী ওয়ার্ডগুলোর ফেন খুব দ্রুতই ব্যবস্থা করা হবে।