Daily News BD Online

দৈনিক সংবাদ এর ৭৩ বছরে পদার্পণে সিনিয়র সাংবাদিক সাইদুর রহমান রিমনের স্মৃতিচারণ


নিজস্ব প্রতিনিধি, ঢাকা :
দৈনিক ইত্তেফাকে সাংবাদিকতার সময়ও আমার সর্বোচ্চ আকাঙ্খা ছিল যে, দেশের সবচেয়ে প্রাচীন পত্রিকা সংবাদ এ একদিনের জন্য হলেও চাকরি করবো। দীর্ঘদিন সে আকাঙ্খা অন্তরেই পুষে রাখতে হয়েছে। আমি বাংলাবাজার পত্রিকা, মুক্তকন্ঠ ঘুরে মানবজমিনে দায়িত্ব পালনকালেই সুসংবাদটি পেলাম। তৎকালীন দৈনিক খবরের সিনিয়র রিপোর্টার আমার সহকর্মি বন্ধু মোহাম্মদ ফয়সাল জানালেন, মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল ভাইর নেতৃত্বে সাইফুল আমীন ভাই, বিপ্লব ভাইসহ একটি টিম সংবাদ এর দায়িত্ব নিয়েছেন, তারাই ডেকে পাঠিয়েছেন আমাকে। রীতিমত উড়ে যাওয়ার মতোই হাজির হলাম। ইস্কাটনে আলতামাশ কবির সাহেবের বাসভবন কাম পার্সোনাল অফিসে ফয়সালসহ হাজির হলাম, রিপোর্টিং সম্পর্কে নিজস্ব পরিকল্পনাসহ অনুসন্ধানী ডেস্ক গড়ে তোলার ইচ্ছা পোষণ করলাম। সব শুনে বুলবুল ভাই কিছু বলার আগেই আলতামাশ কবির বললেন, ‘শুরু করেন এখন থেকেই…। সংবাদ এর আধুনিক যাত্রায় শ্রম দিন, ভূমিকা রাখুন।’
২০০৪ সালের মার্চ থেকে বিরতিহীন যাত্রা শুরু করেছিলাম, সাংবাদিকতার ভিন্নধারার যাত্রাই ছিল সেটি। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার আলাদা ডেস্ক গঠনের মানসিকতায় রাত দিন পরিশ্রম শুরু করি, একেকটি রিপোর্টও করতে থাকি মনের মতোই। সবচেয়ে ভালো লাগা ছিল যে, অপেক্ষাকৃত কম সার্কুলেশনের সংবাদে কোনো প্রতিবেদন ছাপা হলেই তোলপাড় শুরু হতো। কী সরকারি কী পাবলিক পর্যায় সর্বত্রই জমে উঠতো আলাপ আলোচনা। এ ব্যাপারে র‌্যাবের একজন উর্দ্ধতন কর্মকর্তা আমাকে বলেছিলেন, ‘বুঝছেন না কেন রিমন সাহেব…সংবাদ হচ্ছে এদেশের সাংবাদিকতার মাদার ইনস্টিটিউট, এখানে কিছু ছাপা হলে তা হজম করা, চাপা দেয়া অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়।’
১৯৮৬ সাল থেকে দেড় যুগের সাংবাদিকতা পেরিয়ে এসেও সংবাদে ঢুকে বুঝতে পারলাম ‘কত অজানা রে, শেখা হয়নি যে কিছুই।’ প্রতিদিন সকাল ৮ টায় বুলবুল ভাইর সভাপতিত্বে রিপোর্টিং টিমের যে মিটিং হতো সেটাই ছিল আমাদের নিত্য শেখার পাঠশালা। বাস্তবেই সে মিটিংয়ের প্রতিটি বিষয়বস্তু আমি নোট করে রাখতাম এবং পরবর্তীতে তা ফাইল করে রাখতাম কম্পিউটারে। এ্খন ইচ্ছা করলে সেগুলোর সমন্বয়ে চমৎকার একটি বই ছাপানোও সম্ভব। সংবাদে কি কি শিখেছি… তা হয়তো ক্রমিক নাম্বার উল্লেখ করে করে বলা সম্ভব হবে না, তবে ‘অমুক বলেন আর তিনি জানান’ এখান থেকেই শেখানো শুরু করেছেন বুলবুল ভাই। চীফ রিপোর্টার সাইফুল আমীন ভাই’র কথা বলে শেষ করা যাবে না। আগের ১৭/১৮ বছর বিভিন্ন পত্রিকায় নানা পদে চাকুরি করেছি শুধু কিন্তু সাইফুল আমীন ভাই’র আওতায় এসে দায়িত্ব পালন কাকে বলে তা হাড়ে হাড়ে বুঝতে শিখেছি। তিনি অফিসের শিষ্টাচার, সময় জ্ঞ্যান, নিউজে কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ তুললেই পরের লাইনেই তার প্রমানাদি উপস্থাপন এবং এর সঙ্গে সঙ্গে অভিযুক্তের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ নিশ্চিত করার বিষয়টি অস্থি মজ্জায় যেন যুক্ত করে দিয়েছেন।
যাহোক যা বলার জন্য লেখাটা শুরু করেছিলাম তা হলো: অনুসন্ধানী ডেস্ক শুরুর পরিকল্পনা নিয়ে সংবাদ এ প্রবেশ করলেও বুলবুল ভাই দায়িত্ব দিলেন সিটি ডেস্কের। বললেন, প্রতিদিন রাজধানীসহ নগর মহানগর মিলিয়ে ৮ পাতার সিটি ডেস্ক সচল করেই অনুসন্ধানী ডেস্কে চলে যেও। সিটি ডেস্ক পরিচালনায় সহকর্মি হিসেবে দেয়া হলো মোহাম্মদ ফয়সাল, রফিকুল ইসলাম মন্টু, ভিএম আরিফ, প্রসুন আশীষ, রোজিনা ইসলামকে। পরবর্তীতে আমি জাহাঙ্গীর শাহ কাজল ও ফখরুল হারুনকে সিটি টিমে যুক্ত করি। আমরা সবাই মিলেমিশে রাজধানীর সেরা আট পাতা বের করতাম বলে আজও দাবি করি। তারচেয়েও বড় গৌরবের বিষয় হচ্ছে, সেদিনের সিটি ডেস্কের আওতায় আধুনিক সাংবাদিকতার যাত্রা করা প্রত্যেক সাংবাদিক বন্ধুই আজ স্বমহিমায় উজ্জ্বল, পেশাদারিত্বে প্রতিষ্ঠিত।
আমার অন্তরে লালিত স্বপ্ন পূরণের সংবাদ এ বিচ্ছিন্নতাবাদী উলফা সিরিজ থেকে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা, ১০ ট্রাক অস্ত্র আটকের নেপথ্য কাহিনীসহ অসংখ্য সাড়া জাগানো প্রতিবেদন করার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। কিন্তু সেগুলোর সবকিছু হুবুহু মনে রাখা সম্ভব হয়নি, তবে সক্ষম হয়েছি শিখতে ও শেখার মানসিকতা ধরে রাখতে। আজ নির্দ্ধিধায় বলতে পারি: সংবাদ এ সেরা সময় কাটিয়েছি। একাধারে শিখেছি, লিখেছি এবং সবকিছু প্রকাশে সাহসের সঞ্চার করেছি।
অনেক স্বপ্ন, বহু স্মৃতি সংবাদকে ঘিরে…সংবাদ আমাদের ছিটেফোটা সাংবাদিকতাতেও মজবুত ভিত গড়ে দিয়েছে, আর তার সফল রুপকার ছিলেন বুলবুল ভাই, সাইফুল আমীন ভাই। প্রয়াত বজলু ভাই আমাদের গুরু ছিলেন তা বলার যোগ্যতা আজও অর্জন করতে পারিনি।
আমাদের সেই সংবাদ মাথা উচিয়ে জাগ্রত থাকুক শতাব্দীর পর শতাব্দী

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন