Daily News BD Online

বাকেরগঞ্জে পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও নার্সের হাতে প্রসূতির ডেলিভারি, নবজাতকের মৃত্যু


বরিশাল প্রতিনিধি :

বরিশালের  বাকেরগঞ্জে গ্রীণ লাইফ ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে কর্তৃপক্ষের অবহেলায় নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ ওঠেছে। ১০ জুন এ ঘটনায় প্রসূতি মায়ের অবস্থাও আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে দ্রুত বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। বাকেরগঞ্জ পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের বিআইপি কলোনির সামনে অবস্থিত ওই বেসরকারি ক্লিনিকে এ ঘটনা ঘটে। নিয়ামতি ইউনিয়নের মধ্য মহেশপুর গ্রামের সুমনের স্ত্রী ওই প্রসূতির নাম পারভীন।

মাত্র কয়েক জন নার্স, আয়া-বুয়া দিয়ে গ্রীন লাইফ ক্লিনি এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কার্যক্রম। রোগী ভর্তি থেকে শুরু করে ছাড়পত্র দেওয়া পর্যন্ত প্রায় সকল কাজই করতে হয় তাদের। হাতের জোস ভালো, তাই ডেলিভারি কিংবা ছোট খাটো অপারেশনেরও দায়িত্ব পালন করেন তারা। বিশেষ প্রয়োজনে অনকলে সরকারি- বেসরকারি ডাক্তারদের ডেকে নেন কর্তৃপক্ষ।

ডাক্তারদের অনুপস্থিতিতে এসব কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয় ক্লিনিকের (কথিত নার্স) আয়া-বুয়াদের।অনেকের নার্সিং পেশায় কোন সনদ বা ডিগ্রী নেই। তাদের অধিকাংশই হাসপাতালে কাজ করেই নার্স হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। ভর্তি হওয়ার আগে বুঝতে না পারলেও এরপর ঠিকই রোগীরা বোঝেন গ্রীন লাইফ ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার এর কি দশা।

প্রসূতি পারভীনের ভাই বশির জানান, গত রাতে পারভীনের প্রসব ব্যথা দেখা দিলে তাকে বাকেরগঞ্জ গ্রীণ লাইফ ক্লিনিক এন্ড, ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে রাত ৯ টায় নিয়ে যাওয়া হয়। আবাসিক ডাক্তা নামে পরিচিত স্যাকমো সুলাইমান হোসাইন সেখানে প্রসূতিকে ওই ক্লিনিকে ভর্তি হতে বলেন। আমার বোনের অবস্থা দেখে সিজারের পরামর্শ দেওয়া হয়। এবং আমাদের বলা হয়  সিজারের জন্য বরিশাল থেকে ডক্টর হুমায়রা কলি আসবেন। স্যাকমো সুলাইমান হোসাইন কথা মতো প্রসূতিকে ওই ক্লিনিকে ভর্তি করানো হয়। কিন্তু রাত ১০ টায় পারভীনের প্রসব ব্যথা দেখা দেয়। তখন ডা.
হুমায়রা কলি বরিশাল থেকে আসেনি। এক পর্যায়ে ওই ক্লিনিকের স্যাকমো সুলাইমান হোসাইন ও পরিচ্ছন্নতা কর্মী ও কথিত নার্স শাহানাজ পারভীন ডেলিভারি করায়। তাদের অদক্ষতার কারনেই রাতে নবজাতক শিশুটি মারা যায়। একই সাথে পারভীনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক হয়ে পড়ে। তখন রাত ১২ টার পরে পারভীনকে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। এ বিষয়ে আমি বাকেরগঞ্জ থানা পুলিশের কাছে  অভিযোগ করি। ক্লিনিকে রাতেই পুলিশ আসে। প্রভাবশালীদের চাপের মুখে অভিযোগ তুলে নেই। আমার বোনের অবস্থা এখনো আশংকা জনক।

এ বিষয়ে স্যাকমো সুলাইমান হোসাইন জানান, রোগীর অবস্থা দেখে সিজারের পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে রোগীর স্বজনরা নরমাল ডেলিভারির জন্য অপেক্ষায় ছিলেন। নরমাল ডেলিভারি করতে গিয়ে নবজাতক শিশুটি মারা গেছে।

গ্রীণ লাইফ ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টরের পরিচালক কুদ্দুস জানান, তিনি বিষয়টি ভালো জানেন না। তবে শুনেছেন পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও নার্স দায়িত্বে ছিল। বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখছেন।

নার্স শাহানাজ জানান, ডাক্তার বসেন দিনে চেম্বারে। রাত হলে আবাসিক ডাক্তার ছাড়াই নার্স ও টেকনোলজিষ্ট, আয়া-বুয়া দিয়ে চলে ক্লিনিক। আমি ১৭ বছর যাবত নার্স। এরকম দুর্ঘটনা আমার হাতে আর কখনো হয়নি। নার্সিং প্রশিক্ষণ কোথা থেকে দিয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি সরেজমিন ভার্তাকে  জানান, দেড় বছরের প্রশিক্ষণ দিয়েছি। তা অনেক আগের দিনের কথা। তখন প্রশিক্ষণ দিলে সার্টিফিকেট দিত না। আমাদের ভুল হয়েছে নরমাল ডেলিভারির আগে গর্ভাবস্থায় আলট্রাসনোগ্রাফি পরীক্ষা করা হয়নি।

উল্লেখ্য, এর আগে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় গ্রীণ লাইফ ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে  জরিমানা ও সিলগালা করেছিলেন উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবুজার মোঃ ইজাজুল হক।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন