শিক্ষকদের বলা হয় মানুষ গড়ার কারিগর।
আর সেই শিক্ষক যদি হয় দুর্নীতি গ্রস্থ তা হলে শিক্ষা ব্যবস্থা রোষানলে
পড়বে না একথা অস্বীকার করার নয়। সাতক্ষীরা জেলার প্রতিটি উপজেলায় বিভিন্ন
বিদ্যালয়ে নিয়োগ কেন্দ্রিক প্রায়শই প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির
সভাপতি কর্তৃক নিয়োগ বোর্ডের পুর্বে লক্ষ, লক্ষ টাকা উৎকোচ বানিজ্যের
অভিযোগ হরহামেশা। আবার অভিযোগ দিয়ে কিংবা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কে অবহিত
করেও মিলছে না কোন প্রতিকার এমন অভিযোগ রয়েছে কয়েক ডজন। এরই ধারাবাহিকতায়
সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া উপজেলার কামারালি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে ৪টি পদের
বিপরীতে নিয়োগ বোর্ডের পুর্বে প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি কর্তৃক ৫৮ লক্ষ টাকা
উৎকোচ বানিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, কলারোয়া উপজেলার কামারালি
বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের চারটি পদের বিপরীতে গত ইংরেজি ২৯-০৫-২৩ তারিখ
পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন,
কামারালি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪টি পদের বিপরীতে কামারালি বহুমুখী উচ্চ
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্দুস সাত্তার ও অত্র বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং
কমিটির সভাপতি মোঃ রবিউল হাসান এর যোগসাজেসে ৫৮ লক্ষ টাকা উৎকোচের বিনিময়ে
নিয়োগ বোর্ডের পুর্বে ৪জন প্রার্থীকে মনোনীত করেন। জেলার কলারোয়া উপজেলার
তরুলিয়া গ্রামের মৃত কালাম গাজীর ছেলে রাকিব হোসেন কে নিরাপত্তাকর্মী
নিয়োগ বোর্ডের পুর্বে ১৫ লক্ষ টাকা উৎকোচ গ্রহণ করেন প্রধান শিক্ষক মোঃ
আব্দুস সাত্তার। একই উপজেলার গাজনা গ্রামের জর্জ হত্যা সহ নাশকতা মামলার
আসামী রফিকুল ইসলামের ছেলে আব্দুস সালাম কে সহকারী প্রাধান শিক্ষক পদে
নিয়োগ বোর্ডের পুর্বে ১০ লক্ষ টাকা প্রধান শিক্ষক উৎকোচ নেন। একই উপজেলার
ক্ষেত্রপাড়া গ্রামের বাসু ভট্টাচার্যের ছেলে বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য কে
কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর পদে ১৭ লক্ষ টাকা উৎকোচ গ্রহণ করেন প্রধান শিক্ষক
মোঃ আব্দুস সাত্তার। একই উপজেলার কামারালি গ্রামের আলাউদ্দিনের ছেলে ইমরান
হোসেন কে পরিছন্নতা কর্মী পদে ১৬ লক্ষ টাকা উৎকোচ গ্রহন করেন প্রধান শিক্ষক
মোঃ আব্দুস সাত্তার। এদিকে অভিভাবক সদস্য ও স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে
বলেন, কর্তা ব্যক্তিদের গাফিলতির কারনে দিনকে দিন দেদারসে চলছে শিক্ষক ও
সভাপতিদের নিয়োগ বানিজ্য। দুর্নীতিবাজ শিক্ষক ও সভাপতিদের রুখবে কে? তারা
আরও বলেন, যারা রক্ষক তারাই আবার ভক্ষক। সুশীল সমাজের মতে, সাতক্ষীরা জেলার
প্রায়শই প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির
সভাপতি কর্তৃক চলছে অবাধে নিয়োগ বানিজ্য। বর্তমান সমাজে চাকরির ক্ষেত্রে
ঘুষ বানিজ্য যেন রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছে যা খুবই দুঃখ জনক। অভিযুক্তদের
বিরুদ্ধে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ তদন্ত না হওয়ায় পার পাচ্ছে অপরাধীরা। শুধু তাই
নয়? রীতিমতো কর্তা ব্যক্তিদের কে ম্যানেজ করেই চলেছে একের পর এক পাতানো
নিয়োগ বোর্ড। কলারোয়া উপজেলার কামারখালি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪টি পদের
বিপরীতে মনোনীত করা ৪জন প্রার্থীকে সংশ্লিষ্ট বোর্ড কর্তারা আগেভাগেই
প্রশ্ন পত্র ফাঁস করেছেন। এ ঘটনায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এ
বিষয় কলারোয়া উপজেলার কামারালি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ
আব্দুস সাত্তার এর সাথে মুঠো ফোনে আলাপকালে চারজন প্রার্থীর নিকট থেকে
নিয়োগ বোর্ডের পুর্বে ৫৮ লক্ষ টাকা উৎকোচ গ্রহণ করেছেন কিনা জানতে চাইলে
তিনি বলেন, না বিষয়টি অসত্য আমি টাকা নেয়নি।
এ
বিষয় কলারোয়া কামারালি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি
মোঃ রবিউল হাসান এর সাথে মুঠো ফোনে আলাপকালে ৪টি পদের বিপরীতে চারজনকে
মনোনীত করে প্রধান শিক্ষক এবং আপনার যোগসাজশে ৫৮ লক্ষ টাকা উৎকোচ গ্রহণ
করেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, না বিষয়টি সম্পুর্ন মিথ্যা ভিত্তিহীন।
আপনি
ম্যানেজ হয়ে আগামীকাল নিয়োগ বোর্ডের পুর্বে প্রশ্ন পত্র ফাঁস করেছেন কিনা
জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা পরায়ণে কে বা কারা আপনাদের
মিথ্যা তথ্য দিয়েছে। আপনারা আগামী কালকে নিয়োগ বোর্ডের সময় আসেন দাওয়াত
রইলো। এ বিষয় কামারালি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের নিয়োগ বোর্ডের দায়িত্ব
পাওয়া ডিজির প্রতিনিধি মোঃ শাজাহান কবীর এর সাথে মুঠো ফোনে আলাপের
চেষ্টাকালে তিনি আলাপ কলটি গ্রহণ না করাই বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এ
বিষয় কলারোয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মীর মোস্তাফিজুর রহমান এর
সাথে মুঠোফোনে আলাপকালে তিনি বলেন, আমার সামনে অত্র বিদ্যালয়ের প্রধান
শিক্ষক,ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বসে আছে! আপনি আগামীকাল আসেন। নিয়োগ
বোর্ডের পূর্বেই চারজনের কাছ থেকে উৎকোচ গ্রহণ এবং প্রশ্নপত্র ফাঁস এর
বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি মোবাইল ফোনে আপনাকে কিছু বলতে পারব না
তবে আপনি সামনে আসলে বলবো। নিউজ করার দরকার নেই আগামীকাল আপনি স্কুলে
আসেন। সাতক্ষীরা জেলা শিক্ষা অফিসার অজিত কুমার সরকার এর সাথে মুঠো ফোনে
আলাপকালে নিয়োগ বোর্ডের পূর্বে ৪জনের কাছ থেকে ৫৮ লক্ষ টাকা গ্রহণ এবং
নিয়োগ বোর্ডের পূর্বেই প্রশ্নপত্র ফাঁস এর বিষয় জানালে তিনি বলেন, যদি
সহকারী প্রধান শিক্ষক আব্দুস সালাম, কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর বিশ্বজিৎ
ভট্টাচার্য, নিরাপত্তা কর্মী রাকিব হোসেন, পরিচ্ছন্নতাকর্মী ইমরান হোসেন
কে নিয়োগ দেওয়া হয়, তাহলে উক্ত নিয়োগ বোর্ডকে বিতর্কিত বলা যাবে।
এ
বিষয় সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির এর সাথে মুঠো ফোনে
আলাপকালে তিনি বলেন, আমার পক্ষ থেকে একজন পাঠিয়ে দিবো, নিয়ম মাফিক
পরীক্ষা সম্পন্ন হবে।
Tags
বাংলাদেশ