সাইদুল ইসলাম :
রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত শান্তিনগর বাজার নিয়ে সমাজ সেবা অধিদপ্তর, দূর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির লুকোচুরি খেলায় ব্যবসায়ীদের মাঝে অশান্তি দেখা দিয়েছে। বছরের পর বছর চলতে থাকা অশান্তির সংসারে নতুন করে যুক্ত হয়েছে ‘কমপ্রিহেনসিভ হোল্ডিংস’।
- অভিযোগ আছে, বাজারের প্রায় ১৪’শ দোকান মালিকদের নিয়ে কৌশলে ভয়াবহ চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছেন আমিনবাগ কো-অপারেটিভ মার্কেট সোসাইটি লিমিটেড।
- ভোটারদের দাবি, আমিনবাগ কো-অপারেটিভ মার্কেট সোসাইটি লি. এর শীর্ষ নেতারা বিগত ৯ বছর যাবত হযবরল নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা ধরে রেখেছেন।
- বাজারটির ব্যবসায়ী এবং দোকান মালিকদের অভিযোগ, নিজেদের স্বার্থ হাসিলের লক্ষ্যে চলতে থাকা অনিয়মের বিরুদ্ধে দায়সারা প্রতিবেদন দিয়ে দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছেন সমাজ সেবা অধিদপ্তর।
- দূর্নীতি অর্থ আত্মসাৎসহ বেশ কয়েকটি সুনির্দিষ্ট লিখিত অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় দূর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) উপরেও রয়েছে অসন্তুষ্টি।
খোঁজখবর নিয়ে জানাগেছে, বিগত ৯ বছরে ‘আমিন বাগ কো-অপারেটিভ মার্কেট সোসাইটি’ বাজারের জমিতে বহুতল ভবন নির্মাণ এবং ব্যবসায়ীদের পুনর্বহালের বিষয়ে চার চারটি ডেভলপার প্রতিষ্ঠানের সাথে প্রকাশ্যে এবং গোপনে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন।
দোকান মালিক সমিতির তথ্য অনুযায়ী, অগ্নি ঝুঁকিতে থাকা ‘শান্তিনগর বাজার’ সংস্কার এবং একই স্থানে বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য ‘আইডিয়াল হোম বিল্ডার্স’ এর সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন আমিনবাগ সোসাইটি।
পরবর্তীতে পূর্বের চুক্তি বাতিল করে ‘সিদ্দিক বিল্ডার্স’র সাথে নতুন চুক্তি সম্পাদনা এবং সেটিও বাতিল করে ‘নকশি বিল্ডার্স’র সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন।
আবারও কিছুমাস যেতেই সর্বশেষ ‘কমপ্রিহেনসিভ হোল্ডিংস’র সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের রেকর্ড গড়েছেন।
অভিযোগ আছে, একের পর এক চুক্তি বাতিলের পিছনে কোটি কোটি টাকার অবৈধ লেনদেন রয়েছে। যার সুবিধাভোগী ব্যবস্থাপনা কমিটি।
বাজারের দোকান মালিক, শেয়ার হোল্ডার ও
ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপ করে জানাযায়, অধিক সুবিধা সম্পূর্ণ চুক্তিপত্র গুলোর কোনটাতেই ব্যবসায়ীদের সুবিধা-অসুবিধা এবং পূনরায় উক্ত স্থানে ব্যবসা পরিচালনা করে সন্তোষজনক লাভ বা বাজার টিকে থাকার মতো পরিস্থিতি রাখেন নাই আমিনবাগ সোসাইটি।
তাদের অভিযোগ, গত ২৩ অক্টোবর ২০২২ তারিখ বর্তমান কমিটির ১২ সদস্য ধানমন্ডিতে গিয়ে ‘কমপ্রিহেনসিভ হোল্ডিংস লিমিটেড’ -এর সাথে চুক্তি করে কয়েক কোটি টাকা নিয়ে এসেছে আমিনবাগ কো-অপারেটিভ মার্কেট সোসাইটি লিমিটেড; যেটি
উন্নয়ন নীতিমালা ২০১২ পরিপন্থী।
চুক্তির শর্তানুসারে ১০২ কাঠা সম্পত্তির মালিকপক্ষ (আমিনবাগ কো-অপারেটিভ মার্কেট সোসাইটি লিমিটেড) আর্থিক মূল্যমান হিসেবে পাচ্ছে মাত্র ২৮ পার্সেন্ট , অন্যদিকে ডেভেলাপার কোম্পানি (কমপ্রিহেনসিভ হোল্ডিংস লিমিটেড) আর্থিক মূল্যমান হিসেবে পাচ্ছে প্রায় ৭২ পার্সেন্ট।
ইতিপূর্বে করা চুক্তিগুলো পর্যালোচনা করে দেখাযায়,
২০০৫ সালে প্রকাশ্য চুক্তিতে ডেভলপার প্রতিষ্ঠান ‘আইডিয়াল হোম বিল্ডার্স’ থেকে ১০ লক্ষ টাকা গ্রহণ করেন ‘আমিনবাগ কো-অপারেটিভ সোসাইটি লি. পরবর্তীতে সাড়ে তিন (৩.৫) কোটি টাকা পরিশোধ করে চুক্তি বাতিল করেন ব্যবস্থাপনা কমিটি।
২০১০ সালে পুনরায় ‘সিদ্দিক রিয়েল এস্টেট ‘ থেকে প্রকাশ্য চুক্তিতে ৫০ লাখ টাকা গ্ৰহন এবং আড়াই(২.৫) কোটি টাকা র বিনিময়ে চুক্তি বাতিলের মাধ্যমে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটান।
অ্যাডভোকেট হাসান এন্ড অ্যাসোসিয়েটস এর প্রতিষ্ঠাতা ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী খন্দকার হাসান শাহরিয়ারের কাছে এই ধরনের চুক্তির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বারবার চুক্তি করে অধিক পরিমাণে ক্ষতিপূরণ দিয়ে সেই চুক্তি বাতিল করার পিছনে আসলে কি রহস্য আছে সেটি খতিয়ে দেখা অত্যন্ত জরুরী। একই সাথে জমির মালিকদের ক্ষতিগ্রস্ত করে ডেভলপার কোম্পানিকে অধিক পরিমাণে লাভবান করে চুক্তি করাটাও আইন সম্মত হচ্ছে না। এই আমিনবাগ কো-অপারেটিভ মার্কেট সোসাইটি লিমিটেডের কমিটি ভেঙ্গে দেওয়ার ব্যাপারে এবং দুর্নীতি তদন্ত চেয়ে দোকান মালিক, শেয়ার হোল্ডার ও ব্যবসায়ীরা আদালতের দ্বারস্থ হতে পারেন এবং সেক্ষেত্রে আশা করা যায় তারা ন্যায় বিচার পাবেন।
এতোসব অভিযোগের বিষয় জানতে আমিনবাগ কো-অপারেটিভ মার্কেট সোসাইটি লি. এর সভাপতি মো.মজিবুল হকের মুঠোফোনে যোগাযোগ করে তাকে পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে ১৬৩ শান্তিনগর বাজার সুপার মার্কেট এর তৃতীয় তলায় অবস্থিত অফিসে গিয়েও তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
উল্লেখ যে, রাজধানী ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত শান্তিনগর বাজার একটি ঐতিহ্যবাহী বিকিকিনি স্থল।
বেশ কয়েকবছর যাবত একটি চক্র বাজার নিয়ন্ত্রণ এবং ব্যবসায়ীদের হয়রানি করে আসছে। প্রতিবেদনের পরবর্তী পর্বে অর্থ লুটপাট, সুবিধাভোগী এবং বিস্ময়কর চুক্তির সাথে জড়িত ব্যক্তিদের বিস্তারিত প্রকাশ করা হবে।