মিজানুর রহমান-ভোলা প্রতিনিধিঃ
ভোলা জেলার সাত উপজেলায় বিলুপ্তির পথে ঐতিহ্যবাহী কাচারি ঘর। নব্বই দশকের আগেও সকল গ্রামের অধিকাংশ বাড়িতেই ছিল । আর এই ঘর ছিল গ্রাম বাংলার ইতিহাস,ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও সংস্কৃতির অংশ। কিন্তু কালের বিবর্তনে এই কাচারি ঘর সংস্কৃতি যেন হারিয়ে গেছে। গ্রামের অধিকাংশ বাড়িতে কাচারি ঘর দেখা যায় না। কাচারি ঘর স্থাপিত হয় বাড়ির সামনের দরজায়। এতে বাড়ির সৌন্দর্য বাড়ায়। অতিথি, পথচারী, মুসাফির, সাক্ষাৎ প্রার্থী ও বাড়ির ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখার ঘর হিসেবে ব্যবহার হতো। এখন আধুনিকতার যুগে গ্রাম বাড়ির সৌন্দর্য কাচারি ঘর সচারচর তেমন চোখে পড়ে না। জানা গেছে, এক সময় গ্রাম-বাংলার অবস্থাসম্পন্ন পরিবারের অভিজাত্যের প্রতীক ছিল কাচারি ঘর। চারচালা রঙ্গীন টিন,টালি (চাড়া) অথবা শনের ছাউনি দিয়ে বাড়ির সামনে তৈরি হতো এ ঘর। কাচারি ঘরে থাকতেন আবাসিক গৃহশিক্ষক (লজিং মাস্টার)। সকাল বেলা মক্তব হিসেবেও ব্যবহৃত হতো। এছাড়া সালিশ বৈঠক, খাজনা আদায়, গল্প, আড্ডা, পথচারী ও মুসাফিরদের বিশ্রামগার হিসেবে ব্যবহৃত হতো কাচারি ঘর। তখনকার অনেক পরিবার সকাল, দুপুর, রাতে মুসাফির ছাড়া খাবার খেতেননা। ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতেন মসাফিরের জন্য। এমন পরিবার ছিলেন-কালি বাড়ি রোর্ডের মরহুম হাসান মিয়া, সামছল হক দফাদার, শিবপুরের-মুসলিম হাওলাদার, আলী নগরের মোস্তফা মিয়াজি, ইলিশার-নজির আহন্মেদ পালোয়ান, ধনিয়া- কামাল পাটোয়ারী, ভেদুরিয়া-এ্যাড.মোস্তফা মিয়া, জিয়াউদ্দিন চেয়ারম্যানের, বোরহান উদ্দিনের মিয়া বাড়ি, দৌলতখানের মাকছুদ জমিদার, লালমোহনে ডাঃ আজাহার উদ্দিন, চরফ্যাশনে মিয়াজি পরিবার উল্ল্যেখ যোগ্য। বর্তমানের ডিজাটাল যুগে এসে মুসাফিরদের দেখা যায় রাস্তা-ঘাটে, বিভিন্ন মসজিদ, মার্কেটের বারান্দায় আশ্রয় নেন। এখন আত্নীয় স্বজনের প্রসাদ বাড়ির একাধী গেইট পেরিয়ে আত্নীয়রাও ওই বাসায় প্রবেশ করতে পারেননা। এখন মানুষের বন্ধন অনেক দুরে চলে যেতে বসেছে। ভোলা জেলার অনেক বাড়িতে এখনো ঐতিহ্যবাহী পুরোনো কাচারি ঘর কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ওইটা ব্যবহার হয় গোয়াল ঘর বা রাকড়ীর ঘর হিসেবে। ভোলা সদর উপজেলার কালি বাড়ি রোড়ের তহুরা বেগম বলেন, চারদিকে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগায় গ্রাম বাংলার কাচারি ঘর এখন বিলুপ্ত প্রায়। তারপরও ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য জেলার কয়েকটি গ্রামের বাড়ির সামনে এখনো পুরোনো সংস্কৃতি এ কাচারি ঘর স্মৃতি হিসেবে ধরে রেখেছে। লালমোহনের বাবুল ফরাজী বলেন, আমাদের পূর্ব পুরুষের নানা স্মৃতি বিজড়িত এ কাচারি ঘর সত্যই প্রাচীনকালের ঐতিহ্য বহন করে চলেছে। তবে কালের বিবর্তনে এখন হারিয়ে যেতে বসেছে। ভবিষ্যত প্রজন্ম কাচারি ঘর কি বুঝবেনা।