নিহত ছোট ভাইয়ের মৃতদেহসহ ক্যামেরাবন্দি হয় বালকটি। ছবি : এনএইচকে |
হৃদয় কাঁপানো ছবিটি কী বার্তা দিচ্ছে'নাগাসাকির দাঁড়ানো বালক' (দ্য স্ট্যান্ডিং বয় অফ নাগাসাকি) হচ্ছে হৃদয় কাঁপানো একটি ঐতিহাসিক ছবি। ১৯৪৫ সালের ৯ আগস্ট জাপানের নাগাসাকি শহরে যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক বোমা ফেলার পর যে বিভৎসতা ছড়িয়ে পড়েছিল তার কয়েকমাস পর ১০ বছরের এই ছেলেটি তার নিহত ছোট ভাইয়ের মৃতদেহসহ ক্যামেরাবন্দি হয়। ন্যাড়া মাথার বিধ্বস্ত শিশুটির চোখ-মুখে ছিল অন্য রকমের দৃঢ়তা। ছেঁড়া-জামা কাপড় পরা শিশুটি খালি পায়ে ছিল। কাঁধ থেকে পিঠে বেল্ট দিয়ে বাঁধা ছোট্ট শিশুটি তার মৃত ভাই। দেখলে মনে হবে ঘুমিয়ে আছে পেছনের শিশুটি। ছোট্ট ভাইটির নিথর দেহ যেনো পড়ে না যায় তার জন্য তাকে পিঠে শক্ত করে বেঁধে নিয়েছে সে।
আপাতদৃষ্টিতে দেখলে ছবিটি মনে হবে অতি সাধারণ এক পাহাড়ী বালকের। নজরকাড়ার মতো তেমন কোনও বিশেষত্ব নেই ছবিটিতে। এক ঝলক তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নেয়া যায়। তবে যখন বলা হবে বালকটির পিঠে বাঁধা রয়েছে তার মৃত ভাই, তখন ছবিটি হৃদয় কাঁপিয়ে দেবে, চোখ ছলছল করতে থাকবে।
১৯৪৫ সালের অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময় বোমা হামলার মাস দুয়েক পরে নাগাসাকি শহরের কোনও এক জায়গায় ছবিটি তুলেছিলেন মার্কিন বিমানবাহিনীতে কর্মরত ফটোগ্রাফার মেরিন সার্জেন্ট জো ও’ডনেল। ১৯৮০ সালে প্রকাশিত হওয়ার পর গোটা বিশ্বে তোলপাড় ফেলে দিয়েছিল ছবিটি।
কিউশু দ্বীপের উত্তরাঞ্চলে একই বছর সেপ্টেম্বর মাসের শেষ দিকে তাকে পাঠানো হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আত্মসমর্পণের পর জাপানের সব রকম যুদ্ধাস্ত্র ধ্বংস করে ফেলার সচিত্র দলিল ধরে রাখার জন্য সেখানে তাকে পাঠানো হয়েছিল। তিন মাসের কিছু কম সময় কিউশু দ্বীপের সাসেবো শহরে তিনি অবস্থান করেছিলেন এবং সরকারি দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি কয়েকবার নাগাসাকিতে গিয়ে বোমা হামলার ক্ষয়ক্ষতির ছবিও তুলেছিলেন। সেই সময় বহু মৃতদেহ সৎকারের প্রয়োজনে জরুরিভিত্তিতে বেশ কিছু শশ্মান তৈরি হয়েছিল। তেমনি একটি শ্মশানের কাছে তিনি এই বালকের দেখা পেয়েছিলেন।
২০০৭ সালে এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছিলেন সেদিনকার সেই কঠিন অভিজ্ঞতার কথা। মৃত ভাই বা বোনকে পিঠে নিয়ে বালকটি অবিচল দাঁড়িয়ে ছিল। তার চোখেমুখে কান্না বা কষ্টের কোনও অনুভূতি ছিল না। সে যেন অতি কষ্টে পাথর হয়ে গিয়েছিল। পারমানবিক বোমা হামলায় সম্ভব পরিবারের সব সদস্যকে হারিয়েছিলো। তাই মৃত ভাইয়ের সৎকারের জন্য তাকেই আসতে হয়েছিল দেহটিকে এভাবেই পিঠে বেঁধে।
সৎকারের ভিড়ে সেই বালকটি মৃতদেহ নিয়ে নীরবে প্রায় ১০ মিনিট দাঁড়িয়েছিল। অপেক্ষা করছিল তার পালা আসার জন্য। এ সময় একজন জাপানি সৈনিক তাকে লক্ষ্য করল এবং তাকে এই মৃত শিশুটিকে নিচে রাখতে বলল যাতে এর মৃতদেহের ভারে সে যেনো ক্লান্ত না হয়।
সেই বালকটি উত্তর দিলো, 'সে ভারী নয়, সে আমার ভাই!' সৈনিকটি বালকটির আবেগের গভীরতা আর তীব্রতা কিছুটা হলেও আছ করতে পেরেছিলেন।
সেই থেকে এই ছবিটি জাপানে ঐক্যের প্রতীক হয়ে উঠে। এটিই আমাদের আদর্শ হতে পারে যে 'সে ভারী নয়। সে আমার ভাই... সে আমার বোন।' যদি সে পড়ে যায়, তবে তাকে উপরে তুলে ধরুন। আপনি যদি ক্লান্ত হয়ে পড়েন তবুও তার প্রতি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিন। এবং যদি সহায়তা করার মতো তার শক্তি না থাকে, যদি সে ভুল করে তবে তাকে ক্ষমা করে দিন। কারণ সে ভারী নয় সে আপনার ভাই...সে আমার বোন। যদি গোটা পৃথিবী তাকে পরিত্যাগ করে তবে তাকে আপনার পিঠের সঙ্গে বেঁধে নিন। বন্ধুত্ব এবং পরিবার মানে একে অপরকে বহন করা; যাই ঘটুক না কেন...
একসময় সাদা মাস্ক পরা শ্মশান কর্মীরা এসে তার কাঁধের বেল্ট খুলে মৃতদেহটি নিয়ে যায়। বালক তাদের সঙ্গে এসে কয়লার আগুনের সামনে এসে দাঁড়ায়। শিশুটির দেহ গ্রাস করে আগুনের শিখা। বালক তখনই ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। ঠোঁটে ঠোঁট চেপে। যতক্ষণ আগুন জ্বলছিল সে ঠায় দাঁড়িয়ে ছিল। তারপর একসময় সে অন্য পথে হাঁটা দেয়। একবারও পেছনে ফিরে তাকায়নি সে।
ছবির ফটোগ্রাফার জাপানি ভাষা জানতেন না। তাই বালকের সঙ্গে কথা বলতে পারেননি। সেই আফসোস ছিল তার জীবনের শেষদিন পর্যন্ত।২০০৭ সালে দেয়া শেষ সাক্ষাৎকারেও তিনি বালকের কথা জানিয়েছিলেন।
তার দেয়া তথ্য নিয়ে অনেকেই সেই শিশুর খোঁজ পরিচয় পাওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সন্ধান মেলেনি তার, তবে পৃথিবীর বুকে ভয়াবহ হিংসার প্রতিচ্ছবি হিসেবে এই ছবি আজও মানুষের বিবেককে জাগিয়ে তোলে।
১৯৪৫ সালের ৬ এবং ৯ অগস্ট দুই জাপানি শহর হিরোশিমা এবং নাগাসাকিতে বি-২৯ বোমারু বিমান থেকে ‘লিটল বয়’ এবং ‘ফ্যাট ম্যান’ নামে দু’টি পরমাণু বোমা ফেলে যুক্তরাষ্ট্র। হিরোসিমার কথা বার বার আলোচনায় আসলেও নাগাসাকি যেন ভুলে যাওয়া এক শহরের মতো।
১৯৪৫ সালে নাগাসাকি শহরে ৯ আগস্ট বেলা ১১টা ২ মিনিটে বোমাটি মাটি থেকে ৫০০ মিটার উপরে বিস্ফোরিত হয়। হিরোশিমায় ফেলা ‘লিটিল বয়’-এর থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী ছিল ‘ফ্যাট ম্যান'। সেই অ্যাটমিক বোমার শক্তি ছিল ২০ কিলোটন অব টিএনটি। তার পরেই, ১৫ অগস্ট, আমেরিকার কাছে নিঃশর্ত সমর্পণ করার কথা ঘোষণা করে জাপান।
বিস্ফোরণের দিন নাগাসাকিতে মুহুর্তের মধ্যে পুড়ে ঝলসে শেষ হয়ে গিয়েছিল ১ লাখ ৩৫ হাজার প্রাণ। আহত আরও ৭৪ হাজার মানুষ। বোমার তেজস্ক্রিয়তায় সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায় শিশুদের মাথার চুল। শিশুরা খাওয়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। যারা অসুস্থ হয়ে পড়েছিল তারা দীর্ঘদিন ধরে যুঝে মৃত্যুমুখী হয়। ১৯৫০ সাল নাগাদ আণবিক বিস্ফোরণে মৃতের সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন লাখে পৌঁছে যায়।
আপাতদৃষ্টিতে দেখলে ছবিটি মনে হবে অতি সাধারণ এক পাহাড়ী বালকের। নজরকাড়ার মতো তেমন কোনও বিশেষত্ব নেই ছবিটিতে। এক ঝলক তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নেয়া যায়। তবে যখন বলা হবে বালকটির পিঠে বাঁধা রয়েছে তার মৃত ভাই, তখন ছবিটি হৃদয় কাঁপিয়ে দেবে, চোখ ছলছল করতে থাকবে।
১৯৪৫ সালের অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময় বোমা হামলার মাস দুয়েক পরে নাগাসাকি শহরের কোনও এক জায়গায় ছবিটি তুলেছিলেন মার্কিন বিমানবাহিনীতে কর্মরত ফটোগ্রাফার মেরিন সার্জেন্ট জো ও’ডনেল। ১৯৮০ সালে প্রকাশিত হওয়ার পর গোটা বিশ্বে তোলপাড় ফেলে দিয়েছিল ছবিটি।
কিউশু দ্বীপের উত্তরাঞ্চলে একই বছর সেপ্টেম্বর মাসের শেষ দিকে তাকে পাঠানো হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আত্মসমর্পণের পর জাপানের সব রকম যুদ্ধাস্ত্র ধ্বংস করে ফেলার সচিত্র দলিল ধরে রাখার জন্য সেখানে তাকে পাঠানো হয়েছিল। তিন মাসের কিছু কম সময় কিউশু দ্বীপের সাসেবো শহরে তিনি অবস্থান করেছিলেন এবং সরকারি দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি কয়েকবার নাগাসাকিতে গিয়ে বোমা হামলার ক্ষয়ক্ষতির ছবিও তুলেছিলেন। সেই সময় বহু মৃতদেহ সৎকারের প্রয়োজনে জরুরিভিত্তিতে বেশ কিছু শশ্মান তৈরি হয়েছিল। তেমনি একটি শ্মশানের কাছে তিনি এই বালকের দেখা পেয়েছিলেন।
২০০৭ সালে এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছিলেন সেদিনকার সেই কঠিন অভিজ্ঞতার কথা। মৃত ভাই বা বোনকে পিঠে নিয়ে বালকটি অবিচল দাঁড়িয়ে ছিল। তার চোখেমুখে কান্না বা কষ্টের কোনও অনুভূতি ছিল না। সে যেন অতি কষ্টে পাথর হয়ে গিয়েছিল। পারমানবিক বোমা হামলায় সম্ভব পরিবারের সব সদস্যকে হারিয়েছিলো। তাই মৃত ভাইয়ের সৎকারের জন্য তাকেই আসতে হয়েছিল দেহটিকে এভাবেই পিঠে বেঁধে।
সৎকারের ভিড়ে সেই বালকটি মৃতদেহ নিয়ে নীরবে প্রায় ১০ মিনিট দাঁড়িয়েছিল। অপেক্ষা করছিল তার পালা আসার জন্য। এ সময় একজন জাপানি সৈনিক তাকে লক্ষ্য করল এবং তাকে এই মৃত শিশুটিকে নিচে রাখতে বলল যাতে এর মৃতদেহের ভারে সে যেনো ক্লান্ত না হয়।
সেই বালকটি উত্তর দিলো, 'সে ভারী নয়, সে আমার ভাই!' সৈনিকটি বালকটির আবেগের গভীরতা আর তীব্রতা কিছুটা হলেও আছ করতে পেরেছিলেন।
সেই থেকে এই ছবিটি জাপানে ঐক্যের প্রতীক হয়ে উঠে। এটিই আমাদের আদর্শ হতে পারে যে 'সে ভারী নয়। সে আমার ভাই... সে আমার বোন।' যদি সে পড়ে যায়, তবে তাকে উপরে তুলে ধরুন। আপনি যদি ক্লান্ত হয়ে পড়েন তবুও তার প্রতি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিন। এবং যদি সহায়তা করার মতো তার শক্তি না থাকে, যদি সে ভুল করে তবে তাকে ক্ষমা করে দিন। কারণ সে ভারী নয় সে আপনার ভাই...সে আমার বোন। যদি গোটা পৃথিবী তাকে পরিত্যাগ করে তবে তাকে আপনার পিঠের সঙ্গে বেঁধে নিন। বন্ধুত্ব এবং পরিবার মানে একে অপরকে বহন করা; যাই ঘটুক না কেন...
একসময় সাদা মাস্ক পরা শ্মশান কর্মীরা এসে তার কাঁধের বেল্ট খুলে মৃতদেহটি নিয়ে যায়। বালক তাদের সঙ্গে এসে কয়লার আগুনের সামনে এসে দাঁড়ায়। শিশুটির দেহ গ্রাস করে আগুনের শিখা। বালক তখনই ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। ঠোঁটে ঠোঁট চেপে। যতক্ষণ আগুন জ্বলছিল সে ঠায় দাঁড়িয়ে ছিল। তারপর একসময় সে অন্য পথে হাঁটা দেয়। একবারও পেছনে ফিরে তাকায়নি সে।
ছবির ফটোগ্রাফার জাপানি ভাষা জানতেন না। তাই বালকের সঙ্গে কথা বলতে পারেননি। সেই আফসোস ছিল তার জীবনের শেষদিন পর্যন্ত।২০০৭ সালে দেয়া শেষ সাক্ষাৎকারেও তিনি বালকের কথা জানিয়েছিলেন।
তার দেয়া তথ্য নিয়ে অনেকেই সেই শিশুর খোঁজ পরিচয় পাওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সন্ধান মেলেনি তার, তবে পৃথিবীর বুকে ভয়াবহ হিংসার প্রতিচ্ছবি হিসেবে এই ছবি আজও মানুষের বিবেককে জাগিয়ে তোলে।
১৯৪৫ সালের ৬ এবং ৯ অগস্ট দুই জাপানি শহর হিরোশিমা এবং নাগাসাকিতে বি-২৯ বোমারু বিমান থেকে ‘লিটল বয়’ এবং ‘ফ্যাট ম্যান’ নামে দু’টি পরমাণু বোমা ফেলে যুক্তরাষ্ট্র। হিরোসিমার কথা বার বার আলোচনায় আসলেও নাগাসাকি যেন ভুলে যাওয়া এক শহরের মতো।
১৯৪৫ সালে নাগাসাকি শহরে ৯ আগস্ট বেলা ১১টা ২ মিনিটে বোমাটি মাটি থেকে ৫০০ মিটার উপরে বিস্ফোরিত হয়। হিরোশিমায় ফেলা ‘লিটিল বয়’-এর থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী ছিল ‘ফ্যাট ম্যান'। সেই অ্যাটমিক বোমার শক্তি ছিল ২০ কিলোটন অব টিএনটি। তার পরেই, ১৫ অগস্ট, আমেরিকার কাছে নিঃশর্ত সমর্পণ করার কথা ঘোষণা করে জাপান।
বিস্ফোরণের দিন নাগাসাকিতে মুহুর্তের মধ্যে পুড়ে ঝলসে শেষ হয়ে গিয়েছিল ১ লাখ ৩৫ হাজার প্রাণ। আহত আরও ৭৪ হাজার মানুষ। বোমার তেজস্ক্রিয়তায় সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায় শিশুদের মাথার চুল। শিশুরা খাওয়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। যারা অসুস্থ হয়ে পড়েছিল তারা দীর্ঘদিন ধরে যুঝে মৃত্যুমুখী হয়। ১৯৫০ সাল নাগাদ আণবিক বিস্ফোরণে মৃতের সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন লাখে পৌঁছে যায়।
Tags
বিশ্ব সংবাদ