টাঙ্গাইল : অর্থ আত্মসাৎ, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আব্দুস সোবহানের বিরুদ্ধে। আর এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ওই হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সিভিল সার্জনের নিকট একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগের ভিত্তিতে হাসপাতাল পরিদর্শন করে তদন্তের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন সিভিল সার্জন।
অভিযোগে জানা যায়, দুই বছর আগে ভূঞাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন ডা. মোহাম্মদ আব্দুস সোবহান। যোগদানের পর থেকেই হাসপাতালের জন্য সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত অর্থ কোনো কাজে খরচ না করে ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে আত্মসাৎ করে আসছেন।
হাসপাতালের এক্সরে, আল্ট্রাসনোগ্রাম ও ইসিজি পরীক্ষার জন্য রোগীদের মাঝে রসিদ না দিয়ে প্রতিদিন অল্প সংখ্যক এক্সরে, আল্ট্রাসনোগ্রাম ও ইসিজির টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিয়ে বেশির ভাগ টাকা নিজের ব্যক্তিগত কোষাগারে জমা করেন। রসিদ বই এবং রেজিস্টার্ড খাতা যথাস্থানে না রেখে নিজের কাছেই রাখেন তিনি। যে কয়টি পরীক্ষার টাকা সরকারি কোষাগারে জমা করেন তার রসিদ তিনি নিজেই তৈরি করেন। এতে করে বিপুল পরিমাণ অর্থ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।
এ ছাড়া সরকারি বিভিন্ন ট্রেনিং ও প্রোগ্রামের টাকা চেকের মাধ্যমে উত্তোলন করে অল্প কিছু টাকা বিতরণ করে বাকি টাকা নিজের পকেটে তোলেন। পরিষ্কার, পরিচ্ছন্নতা ও ঠিকাদারির বিভিন্ন খাতসহ খাদ্যপণ্যের ঠিকাদারের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেন। ফলে ঠিকাদাররা তাদের ঘুষের টাকার উশুল করতে কম ও নিম্নমানের খাবার পরিবেশন করেন। ফলে রোগীরা বঞ্চিত হচ্ছেন প্রাপ্য খাবার থেকে। ক্ষুণ্ন হচ্ছে হাসপাতালের ভাবমূর্তি।
এদিকে হাসপাতালে কর্মরত বিভিন্ন ডাক্তার, নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তার অনিয়মের প্রতিবাদ করতে গেলে তাদের বিভিন্ন হুমকি-ধমকি ও বদলির ভয় দেখান ডা. আব্দুস সোবহান। দিনের পর এমন চললেও মুখ বুঝে সহ্য করেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। পরে ক্ষুব্ধ হয়ে তারা গত ১০ জুলাই স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আব্দুস সোবহানের বিরুদ্ধে টাঙ্গাইল সিভিল সার্জনের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগ পেয়ে ১১ জুলাই হাসপাতালে যান সিভিল সার্জন ডাক্তার মো. মিনহাজ উদ্দিন। পরে কর্মরত সবাইকে নিয়ে বসেন তিনি।
সিভিল সার্জনের হাসপাতাল থেকে ঘুরে যাওয়ার পর শুরু হয় আরেক নাটক। নিজেকে পরিশুদ্ধ করতে যারা অভিযোগপত্রে স্বাক্ষর করেছেন তাদের নানাভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেওয়া শুরু করেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। ফলে অভিযোগকারীদের মধ্যে বিরাজ করছে আতঙ্ক।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেকেই বলছেন, সিভিল সার্জন চলে যাওয়ার পর তাদের বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেওয়া হচ্ছে। অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় তাদের আতঙ্কে সময় কাটছে।
অভিযোগের বিষয়ে ভূঞাপুর স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আব্দুস সোবহান বলেন, ‘বিষয়টি বসে সমাধান করা হয়েছে। তিনি টাঙ্গাইল যাচ্ছেন। পরে কথা হবে বলে ফোন রেখে দেন।’
টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন ডা. মিনহাজ উদ্দিন বলেন, ‘স্বচ্ছতার সঙ্গে সেবা নিশ্চিত করতে ভূঞাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে বলা হয়েছে। আর আর্থিক অনিয়মের বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’