Daily News BD Online

গোপালগঞ্জে অসময়ের তরমুজের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি



দুলাল বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি: গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অসময়ের তরমুজের চাষ বাড়ছে। কৃষক  এ তরমুজ চাষ করে লাভের মুখ দেখছেন। দিন দিন কৃষকরা তাদের ঘেরপাড়ে অসময়ের তরমুজ চাষে ঝুঁকছেন ।

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাফরোজা আক্তার বলেন, সদর উপজেলায় ৫ বছর আগে অসময়ের তরমুজ চাষ শুরু হয়।

তখন মাত্র ২০ শতাংশ জমিতে এ তরমুজের চাষ করা হয় । তখন প্রতি শতাংশে ১৮০ কেজি তরমুজের ফলন হয়। ১ শতাংশ জমিতে তারমুজ চাষে কৃষকের খরচ হয় ২০০০ টাকা।

আর বিক্রি নেমেছে ৭ হাজার ২০০ টাকা। খরচ বাদে অসময়ের তরমুজ চাষে কৃষক শতংশে ৫ হাজার ২০০ টাকা লাভ করেছেন। তারপর থেকেই প্রতি বছর ঘেরপাড়ের আনাবাদি জমিতে তরমুজ চাষ বৃদ্ধি পেতে শুরু করে।

ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, এ বছর গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় নানা স্থানে ৫ একর জমিতে অসময়ের তরমুজের চাষ হয়েছে। প্রতি একরে ১৮ মেট্রিক টন তরমুজ ফলনের আশা করা হচ্ছে। সেই হিসেবে ৫ একরে ৯০ মেট্রিক টন তরমুজ উৎপাদিত হবে। প্রতি কেজি তরমুজ কৃষক ক্ষেত থেকে ৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। সে হিসেবে এ তরমুজের বাজার দর ৪০ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

রঘুনাথপুর দীননাথ উচ্চ বিদ্যালয়ের গনিত ও বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক নিতাই ভক্ত বলেন, অসময়ের তরমুজ খুবই রসালো। ভেতরের অংশ বেশ লাল । এ তরমুজ প্রচুর মিষ্টি।  তরমুজ খেতে সুস্বাদু। বাজারে এ তরমুজের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাই  কৃষক বাড়তি দামে তরমুজ বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন। তরমুজ চাষে কৃষকরা যেমন লাভবান হচ্ছেন, তেমনি দেশে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার রঘুনাথপুর ইউনিয়ন বøকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রদীপ হালদার বলেন, ৬ বছর আগে ১ জন কৃষক ঘেরপাড়ে অসময়ের তরমুজ চাষ শুরু করেন। তার দেখাদেখি এখন অন্তত ৩০ জন কৃষক ব্লকের সুইট,বেঙ্গল টাইগার ও সোনিয়া জাতের  তরমুজের আবাদ সম্প্রসারণ করেছেন। তাদের তরমুজের ফলন বেশ ভালো হয়েছে। বাজারে তরমুজের দাম ভালো রয়েছে। তাই তরমুজ বিক্রি করে কৃষকরা প্রচুর অর্থ আয় করছেন।

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের তরমুজ চাষি বিধান বিশ্বাস বলেন, আমার ৭০ শতাংশের ঘেরে ২০ শতাংশ পাড় রয়েছে। ৫ বছর আগে এ ঘেরপাড় আনাবাদি পড়ে থাকত। তখন কৃষি বিভাগের পরামর্শে ও কৃষি উপকরণ সহযোগিতা পেয়ে ঘেরপাড়ে তরমুজের চাষ করি। এ চাষাবাদ অব্যাহত রয়েছে।

এ বছরও ঘেরপাড়ের তরমুজের ফলন ভালো হয়েছে। প্রতিটি তরমুজের ওজন দেড় কেজি থেকে আড়াই কেজি সাইজের হয়েছে। ভালো দামে তরমুজ বিক্রি করে লাভবান হতে পারব বলে আশা করছি। বিগত বছর গুলোতেও তরমুজ চাষ করে ভালো টাকা উপার্জন করতে পেরেছি।

একই গ্রামের কৃষক রাজিব বালা বলেন, আমার প্রতিবেশী বিধান বিশ্বাস গত ৫ বছর ধরে তরমুজের চাষ করে আসছে। তার দেখাদেখি কৃষি বিভাগের সহযোগিতা,প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ পেয়ে আমিও ২৫ শতাংশ  ঘেরপাড়ের অনাবাদি জমিতে তরমুজের চাষ করেছি।

এক্ষেত্রে প্রতিবেশী সাবেক শিক্ষক নির্মলেন্দু বিশ্বাস সব ধরণের সহযোগিতা করেছেন। আমার ঘেরপাড়ের তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। আশা করছি ২৫ শতাংশে অসময়ের তরমুজের  অন্তত সাড়ে ৪ টন ফলন পাব।

এ তরমুজ বিক্রি করে ২ লাখ ২ হাজার ৫০০ টাকা পাওয়ার আশা করছি । ৫০ হাজার টাকা খরচ বাদে এ তরমুজ থেকে প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা আয় হবে।

গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আঃ কাদের সরদার বলেন,  আগে কৃষক ঘেরপাড়ে শুধু শাক, সবজির আবাদ করতেন। এখন তরমুজ চাষ করে কৃষক প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা দরে বিক্রি করতে পারেন। তাই কৃষকদের নিয়ে আমরা উচ্চমূল্যের ফসল আবাদ করাচ্ছি। এতে কৃষকরা আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন