টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে মোবাইলে জুয়া খেলাকে কেন্দ্র করে সালিশি বৈঠকে কথা কাটাকাটির জেরে মুসলিম উদ্দিন (৩৫) নামে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় নিহত মুসলিমের বাবা ও চাচাসহ ৫-৬ জন আহত হয়েছেন।
শুক্রবার (৪ অক্টোবর) সন্ধ্যায় উপজেলার নিকরাইল ইউনিয়নের পরিষদ সংলগ্ন মাটিকাটা ব্রিজপাড় বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত মুসলিম মাটিকাটা গ্রামের জোয়াহের আলীর ছেলে। তবে মুসলিমের পরিবার ও স্থানীয় লোকজন বলছেন, মুসলিম জুয়ার সঙ্গে জড়িত ছিল না। বালু ঘাটের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে পূর্ব শত্রুতার জেরেই তাকে হত্যা করা হয়েছে।
জানা যায়, মাটিকাটা গ্রামের সুজনের ভাগিনা নয়নের সঙ্গে মোবাইল অনলাইনে জুয়া খেলার মূলহোতা একই গ্রামের রাহিমের সঙ্গে জুয়ার টাকা নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টায় নিকরাইল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মৃত রমজান আলীর বাসায় একটি সালিশি বৈঠক হয়। এ সময় দু'পক্ষের লোকদের কথা কাটাকাটি হয়। এ সময় মুসলিমও সেখানে ছিলেন। কোনো মীমাংসা ছাড়াই সালিশ শেষ হয়। এক পর্যায়ে সবাই সালিশ থেকে বের হয়ে যায়। পরে মাটিকাটা ব্রিজপাড় মোড়ে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে সুজন, রাকিব ও তার বন্ধুরা মুসলিমের ওপর হামলা করে। পরে তার স্বজনরা এগিয়ে আসলে তাদের ওপরও হামলা চালিয়ে এলোপাতাড়ি কোপানো হয়। এতে ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়ে মুসলিম।
পরে স্থানীয়রা আহতদের দ্রুত উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়ার পথে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে মুসলিম মারা যান। এ ঘটনায় আহতদের টাঙ্গাইল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
শনিবার বিকেলে ময়নাতদন্ত শেষে মুসলিমের লাশ গ্রামের বাড়িতে আসে। পরে জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
নিহত মুসলিম উদ্দিনের মামা আশরাফ আলী জানান, আমার ভাগিনা কোনো মোবাইল অনলাইনে জুয়া খেলার সঙ্গে জড়িত ছিল না। পূর্ব শত্রুতার জেরে ও বালুঘাটকে কেন্দ্র করে মুসলিম উদ্দিনকে হত্যা করা হয়।
তিনি আরও বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সকলকে গ্রেপ্তার ও সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দাবি করছি।
নিকরাইল ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আমজাদ হোসেন জানান, মোবাইল অনলাইনে জুয়া খেলা নিয়ে সাবেক চেয়ারম্যান মৃত রমজান আলীর বাসায় একটি শালিস বসে। সালিশের মধ্যে তর্ক-বিতর্কের এক পর্যায়ে সবাই চলে গেলে ব্রিজপাড় এলাকায় মুসলিমকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এতে কয়েকজন আহত হয়। তবে মুসলিম কোন জুয়ার সঙ্গে জড়িত ছিল না। তাকে পূর্ব শত্রুতার জেরে হত্যা করা হয়েছে।
এদিকে ঘটনার পর থেকেই হামলার সিসিটিভির একটি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে স্থানীয় সুজন, রাকিব, রহমান, ফরহাদ, কালামসহ বেশ কয়েকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মুসলিমের ওপর হামলা চালাচ্ছে। এদের মধ্যে ফরহাদ, রহমান রাকিবসহ আরেকজনের হাতে রামদা দেখা গেছে। মুসলিমকে এলোপাথাড়ি কোপাতে থাকে তারা। পরে সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। তবে এখন পর্যন্তও পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
এ বিষয়ে ভূঞাপুর থানার ওসি (অফিসার ইনচার্জ) একে এম রেজাউল করিম বলেন, মাটিকাটা এলাকায় মুসলিম নামে এক যুবককে হত্যা করা হয়েছে। অপরাধীদের ধরতে পুলিশ মাঠে কাজ করছে। মামলা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান তিনি।