Daily News BD Online

ফরিদপুরে স্কুলছাত্রকে জীবন্ত কবর দিয়ে হত্যাচেষ্টা

 


ফরিদপুর প্রতিনিধি : ফরিদপুরে জিহাদ মাতুব্বর (১৩) নামে এক স্কুল শিক্ষার্থীকে মেরে জ্যান্ত কবর দিয়ে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে।

রোববার (৮ ডিসেম্বর) দুপুর দেড়টায় ফরিদপুর শহরের একটি পত্রিকার কার্যালয়ে এ ঘটনার বিচারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে তার পরিবার।

এর আগে গত শনিবার রাত ৯টায় ওই এলাকার ওয়াজ মাহফিল থেকে ওই শিক্ষার্থীকে ডেকে নিয়ে ফাঁকা জায়গায় নিয়ে এমন ঘটনা ঘটায়। পুরো ঘটনাটি একজন ভিডিও করে রাখেন। ওই ভিডিওতে এমন নির্মমতার দৃশ্যটি ফুটে উঠেছে।

মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় এমন নির্মম ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে ওই শিক্ষার্থী। সে জেলা সদরের কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের বড় মাধবপুর গ্রামের ব্যবসায়ী মোস্তাক মাতুব্বরের ৪ ছেলেমেয়ের মধ্যে বড়।

এ ঘটনায় হোগলাকান্দি গ্রামের হালিম মোল্যার ছেলে সিফাত মোল্যা (২৪), ইউসুফ শেখের দুই পুত্র মাসুম শেখ (২৩) ও মারুফ শেখ (২০), মোহন শেখের ছেলে শাকিল শেখ (১৯), বড় মাধবপুর গ্রামের ফরিদ মোল্যার ছেলে আরাফাত মোল্যা (২০) ও মৃগী গ্রামের সজলসহ (২২) মোট কিশোর গ্যাংয়ের ছয়জনের নাম উল্লেখ করে কোতোয়ালি থানায় হত্যাচেষ্টার মামলা করেছেন ভুক্তভোগী শিশুটির বাবা।

সংবাদ সম্মেলনে মোস্তাক মাতুব্বর বলেন, গত শনিবার রাতে তার ১৩ বছর বয়সী স্কুলপড়ুয়া ছেলে জিহাদ মাতুব্বর ওয়াজ শুনতে যাওয়ার সময় এলাকার বখাটে কতিপয় কিশোর তাকে ধরে বেদম মারপিটের পর একটি কবরস্থানে নিয়ে কবর খুড়ে জ্যান্ত পুতে হত্যার চেষ্টা করে।

এ সময় ওই কিশোর গ্যাং আমার ছেলেকে দিয়ে আমার কাছে ফোন দিয়ে বলতে বলে ‘তোর আব্বাকে মোবাইল ফোন করে বল আমরা তোকে ধরে নিয়ে এসেছি। তোকে ছাড়িয়ে নিতে হলে ৫ লাখ টাকা দিতে হবে। তোর আব্বা টাকা না দিলে তোকে খুন করে কবর দিয়ে দেব।’ এ কথার বলার পরেই আমার ছেলেকে নির্মমভাবে মারধর করে এবং কবর খুঁড়ে জ্যান্ত কবর দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।

এতে ভয়ে জিহাদ প্রসাব ও পায়খানা করে পরনের প্যান্ট মাখিয়ে ফেলে। পরে লোকজন এগিয়ে এলে তার ছেলে কোনো মতে পালিয়ে রক্ষা পায়। ওই রাতেই ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এনে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনার পর থেকে শিশুটি ভিশন ট্রমায় আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। তিনি অবিলম্বে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি করেন।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে জিহাদ জানায়, সম্প্রতি ওই কিশোর গ্যাংয়ের সিফাত মাদকাসক্ত হয়ে পাগলামি করে। তখন সে প্রাইভেট পড়ার রুমে থেকে বের হয়ে প্রতিবাদ করে। সেদিন প্রাইভেট পড়ে ফেরার সময় সিফাতসহ ৭-৮ জন তাকে বেধরক মারধর করে। এরপর গত শনিবার বাড়ির পাশে ওয়াজ মাহফিল হলে ৫০ টাকা নিয়ে হালিম খেতে যায় জিহাদ। তখন সিফাতের বন্ধু সজল তাকে সিগারেট কিনে এনে দিতে বলে। সজলের কথা অনুযায়ী সিগারেট আনতে যায়। সিগারেট নিয়ে আসার সময় সিফাত, শাকিল, সজলসহ ১০-১২ জন জিহাদের পকেট থেকে সিগারেট বের করে ভিডিও করে। এ সময় তাকে মারতে মারতে পাশে একটি ফাঁকা মাঠের মধ্যে নিয়ে যায়। তখন তাকে নির্মমভাবে পেটানো হয়। এ সময় একজন কোদাল এনে মাটি কেটে গর্ত করে। পরে জোড় করে ওই গর্তের ভেতর পুঁতে ফেলার চেষ্টা করে। তখন সে ভয়ে চিৎকার করতে থাকে।

জিহাদকে ধরে নেওয়ার সময় অন্য এক কিশোর গোপনে পুরো ঘটনার ভিডিও ধারণ করে। একপর্যায়ে ওই কিশোর নির্মমতা দেখে চিৎকার দিলে আশপাশের লোকজন চলে আসে। তখন ওই কিশোর গ্যাং পালিয়ে যায়। ওই ভিডিওতে মাটি খোড়ার দৃশ্যসহ নির্মমতার দৃশ্য ফুটে উঠেছে।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে কোতোয়ালি থানার ওসি আসাদউজ্জামান বলেন, এ ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। পুলিশ জড়িতদের গ্রেপ্তারে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন