নয়াদিল্লির কাছ থেকে পাওয়া কর ছাড় সুবিধা গোপন করে ভারতীয় ব্যবসায়ী গৌতম আদানির মালিকানাধীন বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান আদানি পাওয়ার মাল্টি-বিলিয়ন ডলারের চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করেছে বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। এই চুক্তি নিয়ে পুনরায় আলোচনার বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আশাপ্রকাশ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) নথিপত্র, উভয় পক্ষের চিঠি পর্যালোচনা এবং পিডিবির ছয় কর্মকর্তার সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে রয়টার্স বলেছে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোনও ধরনের দরপত্র প্রক্রিয়া ছাড়াই চুক্তিটি করেছিলেন এবং এর ব্যয় বাংলাদেশের অন্যান্য কয়লা বিদ্যুৎ চুক্তির তুলনায় অনেক বেশি। যে কারণে চুক্তিটি নিয়ে পুনরায় আলোচনার প্রত্যাশা করছে ঢাকা।
গত আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যু হন শেখ হাসিনা; তার বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধ ও অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার অভিযোগ করেন সমালোচকরা। গত দুই দশকের বেশিরভাগ সময় বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিয়েছেন হাসিনা। একই সঙ্গে তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠ মিত্র ছিলেন। শেখ হাসিনার পতনের পর গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নিয়েছেন শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
কর ছাড় নিয়ে আদানির চুক্তি লঙ্ঘনের বিষয়ে প্রথম প্রতিবেদন প্রকাশ করে রয়টার্স। ব্রিটিশ এই বার্তা সংস্থা ২৫ বছর মেয়াদী চুক্তিটি নিয়ে পুনরায় আলোচনা করার জন্য বাংলাদেশের পরিকল্পনা সম্পর্কেও বিস্তারিত প্রকাশ করছে। রয়টার্স বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে গত নভেম্বরে ২৬৫ মিলিয়ন ডলার ঘুষ দেওয়ার এক মামলায় আদানি ও তার সাত নির্বাহীকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। মার্কিন আদালতের এই ঘটনা বাংলাদেশের সঙ্গে করা চুক্তি পর্যালোচনায় আদানির ওপর চাপ তৈরি করতে পারে।
যদিও যুক্তরাষ্ট্রে ওঠা অভিযোগকে ‘‘ভিত্তিহীন’’ বলে দাবি করেছে আদানি গ্রুপ।
• কর ছাড়
আদানি পাওয়ারের গড্ডা প্ল্যান্টটি আমদানি করা কয়লা দিয়ে চলে এবং এই কেন্দ্রে উৎপাদিত পুরো বিদ্যুৎ বাংলাদেশে রপ্তানি করার কথা। কোম্পানিটি বলেছে, বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তিটি ভারতীয় পররাষ্ট্র নীতির উদ্দেশ্যগুলোকে এগিয়ে নিতে আরও সহায়তা করছে। ২০১৯ সালে নয়াদিল্লি গড্ডার প্ল্যান্টটিকে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের অংশ হিসাবে ঘোষণা করে। এর ফলে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে আয়কর এবং অন্যান্য শুল্ক ছাড়ের মতো প্রণোদনা পায়।
আদানি পাওয়ার ও বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) মাঝে ২০১৭ সালের ৫ নভেম্বর স্বাক্ষরিত চুক্তি ও বাস্তবায়ন চুক্তি অনুযায়ী, বিদ্যুৎ কেন্দ্রের করহার পরিবর্তন হলে সেই বিষয়ে বাংলাদেশকে দ্রুত অবহিত করতে হবে। একই সঙ্গে ভারত সরকারের কাছ থেকে ‘‘কর ছাড় সুবিধাও’’ দেওয়ার কথা আদানির।
কিন্তু আদানি পাওয়ার তা করেনি। গত ১৭ সেপ্টেম্বর ও ২২ অক্টোবর বিপিডিবির পক্ষ থেকে আদানির কাছে দুই দফায় চিঠি দেওয়া হয়। চিঠিতে ভারত সরকারের কাছ থেকে পাওয়া সুবিধার বিপরীতে বাংলাদেশে সরবরাহ করা বিদ্যুতের দামে সমন্বয়ের আহ্বান জানানো হয়। এসব চুক্তি এবং চিঠি সবার জন্য উন্মুক্ত না হলেও রয়টার্স দেখেছে বলে জানিয়েছে।