ভারী কুয়াশার মধ্যেই বোরো ধানের বীজতলা পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন ঝিনাইদহের চাষিরা। পৌষের কুয়াশায় বীজতলা নষ্টের ঝুঁকি এড়াতে নানা উপায় অবলম্বন করছেন তারা। কিছু কিছু এলাকায় ধানের চারার সুরক্ষায় পলিথিন ও ছাউনি দিয়ে বীজতলা ঢেকে দিয়েছেন অনেক কৃষক। তবে বেশিরভাগ এলাকায় ঘন কুয়াশার মধ্যেও বীজতলা রক্ষায় নেই কোনো সুরক্ষা।
আকস্মিক বৃষ্টির পূর্বাভাস ও ঘন কুয়াশায় গত এক সপ্তাহ যাবৎ জেলাজুড়ে বোরো ধানের বীজতলার বাড়তি যত্ন নিচ্ছেন কৃষকরা। তারা বলছেন, কুয়াশা তীব্র হলে বীজতলার অঙ্কুরিত চারার বৃদ্ধি কমে যায়। এ ছাড়া কুয়াশার কারণে ধানের চারা বিবর্ণ হয়ে পড়ে। এতে ভালো চারা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
সরেজমিনে দেখা যায়, কৃষকরা পলিথিন দিয়ে বীজতলা ঢাকার কাজে ব্যস্ত। কেউ কেউ বীজতলার বাড়তি পানি নিষ্কাশনের জন্য তৈরি করেছেন ছোট ছোট ড্রেন। এ ছাড়া চারার ডগায় জমে থাকা শিশির ঝরিয়ে দিতে ব্যবহার করছেন পাটকাঠি। আবার কোনো কোনো মাঠে বীজতলা সুরক্ষার নেই কোনো ব্যবসা। সেইসব এলাকায় ঘন কুয়াশায় বীজতলা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সদর উপজেলার নাটাবাড়ীয়া গ্রামের কৃষক আসাদুল বলেন, মাঠে এক বিঘা জমিতে কয়েকজন চাষি মিলে ধানের চারা দেওয়া হয়েছে। কয়েকদিন ধরে ঘন কুয়াশা পড়ছে। এতে ধানের চারা নষ্ট হয়ে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। চারা যাতে নষ্ট না হয়ে যায় এজন্য পলিথিন দিয়ে বীজতলা ঢেকে রাখা ছাড়া উপায় নেই।
একই গ্রামের বাবলু মিয়া বলেন, হঠাৎ করে ঘন কুয়াশা পড়তে শুরু করেছে। এতে বোরো ধানের চারা নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এরপর যদি আবার বৃষ্টি হয় তাহলে ক্ষতি আরও বেড়ে যাবে। এজন্য বীজতলার চারপাশে ছোট ছোট ড্রেন করে রাখা হয়েছে। যেন বীজতলার বাড়তি পানি সহজেই বেরিয়ে যেতে পারে।
কৃষক আজীম উদ্দিন বলেন, যখন মাঠে ধানের চারা দিই, তখন আবহাওয়া ভালো ছিল। এখন চারাগুলো বড় হচ্ছে, কোনো সমস্যা মনে হয়নি। বীজতলার চারা রক্ষার্থে কোনো সুরক্ষা দেওয়া হয়নি। এখন হঠাৎ করেই আবহাওয়া খারাপ হয়ে গেছে।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নুর-এ নবী বলেন, রাতে শীত, দিনে গরম—এমন আবহাওয়া ধানের চারাতে ছত্রাকের আক্রমণ হতে পারে। সেই ক্ষেত্রে চারার ওপরে যে শিশির জমে থাকে, সেই শিশির সকাল হলেই ফেলে দিতে হবে। আবার ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে। এ ছাড়া ধান বীজতলার চারা রক্ষার্থে পলিথিন দিয়ে বীজতলা ঢেকে রাখা যেতে পারে। এতে চারার আর্দ্রতা ও বীজতলার তাপমাত্রা ঠিক থাকে। ফলে চারার বৃদ্ধি ভালো হয়। এবে এখনো পর্যন্ত তাপমাত্রা স্বাভাবিক আছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ষষ্ঠী চন্দ্র রায় বলেন, কৃষক পর্যায়ে আমাদের কর্মীরা ধানের বীজতলার পরিচর্যার জন্য বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিচ্ছেন। আমরা কৃষক পর্যায়ে যাবতীয় তথ্য ও সহযোগিতা পৌঁছে দেওয়ার কাজ আন্তরিকতার সঙ্গে করে যাচ্ছি।