টাঙ্গাইলের ঘাটাইল পাহাড়ি এলাকায় একের পর এক ঘটছে ডাকাতির ঘটনা। অস্ত্র ঠেকিয়ে সংঘবদ্ধ ডাকাতদল লুট করে নিয়ে যাচ্ছে মালামাল। মারধরের শিকার হচ্ছে নিরীহ মানুষ। এমন ডাকাতির ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে লোকজন। গত এক মাসে ঘটেছে পাঁচটি ডাকাতির ঘটনা। ডাকাত আতঙ্কে তাদের নির্ঘুম রাত কাটছে। তবে ওসি জানিয়েছেন একটি ঘটনার বিষয়ে তিনি অবগত, বাকিগুলো জানেন না। কাউকে আটকও করতে পারেনি পুলিশ।
সরেজমিনে জানা যায়, গত ২৪ নভেম্বর উপজেলার লক্ষিন্দর ইউনিয়নের বেইলা গ্রামে বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলামের বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। রাত আড়াইটার দিকে ১০-১৫ জনের একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত দল দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বাড়ির গেইট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে রশি দিয়ে ঘরের সবার হাত-পা বেঁধে ফেলে। ডাকাতরা আলমারি ভেঙে লুট করে নিয়ে যায় সোনার গয়না ১৩ ভরি, রুপা প্রায় ৫০ ভরি, নগদ টাকা দেড় লাখ ও একটি স্মার্টফোন। নগদ টাকাসহ প্রায় ১৯ লাখ টাকার মালামাল ডাকাতরা নিয়ে যাওয়ার পর ভুক্তভোগীদের ডাক-চিৎকারে প্রতিবেশীরা এসে তাদের হাত-পায়ের বাঁধন খুলে দেন। এ ঘটনায় রফিকুল ইসলাম ২৮ নভেম্বর বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন। রফিকুলের ভাষ্য ওসি সাহেবের কাছে মামলার অগ্রগতি জানতে চাইলে তদন্ত কাজ চলমান রয়েছে বলে তাকে জানানো হয়।
১ ডিসেম্বর রাত তিনটার দিকে গেইট, বারান্দার তিনটা তালা এবং ঘরের দরজা ভেঙে ৭-৮ জনের একটি ডাকাত দল উপজেলার দেউলাবাড়ি ইউনিয়নের পাকুটিয়া এলাকায় নিতাই আদিত্যের ঘরে প্রবেশ করে।
নিতাই বলেন, তার মাথায় আঘাত করলে মাথা ফেটে যায়। ডাকাতরা ভেঙে ফেলে তার হাত। পরে তার স্ত্রীর ডাক-চিৎকারে কিছু নিতে না পেরে পালিয়ে যায় ডাকাতদল। আট দিন ময়মনসিংহ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন তিনি। মাথায় দেওয়া হয় চারটি সেলাই। এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন তিনি। তার ভাষ্য, এখনো রাতে ঘুম ভেঙে গেলে আতঙ্কে আর ঘুম আসে না।
উপজেলার শহরগোপীনপুর জোরবহচালা গ্রামের আব্দুল কাদের ৯ ডিসেম্বর তার ফার্মের মুরগি এবং বাগানের কলা বিক্রির ৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ঘরে রাখেন। ওই রাতেই ডাকাতদল হানা দেয় তার বাড়িতে। কাদেরের ভাই সেন্টু মিয়া বলেন, শুধু টাকাই নেয় নাই, তিন ভরি স্বর্ণের গয়নাসহ ৭টি কম্বল, শার্ট, লুঙ্গি সব নিয়ে গেছে ডাকাতরা। থানায় কোনো মামলা বা অভিযোগ করা হয়নি, তবে পুলিশ গিয়ে সবকিছু লিখে নিয়ে এসেছেন বলে জানান সেন্টু।
এদিকে কাদেরের বাড়িতে যে রাতে ডাকাতি হয় একই রাতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে একই গ্রামের সৌদি প্রবাসী রফিকুল ইসলামের বাড়িতে। ভয়ে তার স্ত্রী মর্জিনা বেগম এখন আর বাড়িতে থাকেন না। সাত বছর বয়সী ছোট মেয়েকে নিয়ে বাবার বাড়ি চলে গেছেন। ভয়ে ভয়ে সে রাতের ঘটনার বর্ণনা দিলেন মর্জিনা।
তিনি বলেন, বারান্দার গ্রিলে লাগানো তালা এসিড দিয়ে খুলে ঘরের সিটকিরি ভেঙে প্রবেশ করে ডাকাতদল। তাদের দলে ছিল দশজন। আলমারির চাবি চেয়ে নেয় আমার কাছে থেকে। আলমারি খুলে একলাখ টাকা, আড়াই ভরি স্বর্ণ, পাঁচটা কম্বল এবং একটা স্মার্টফোন নিয়ে যায় তারা। যাওয়ার সময় হুমকি দিয়ে যায় অন্য বাড়িতে তারা ডাকাতি করতে যাবে, ওই রাতে কাউকে ঘটনা জানালে দশ দিন পর এসে তাকে মেরে ফেলবে। মর্জিনা জানান, পরেরদিন সকালে পুলিশ এসে সব লিখে নিয়ে গেছে। থানায় অভিযোগ বা কোনো মামলা তিনি করেননি।
এর আগে ৫ ডিসেম্বর রাত ১টার দিকে ডাকাতির ঘটনা ঘটে শহরগোপীনপুর গ্রামের আমীর হামজার বাড়িতে। হামজা বলেন, ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে ১০/১২ জনের একটি ডাকাতদল। দা, রড, কিরিস ঠেকিয়ে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং দেড় ভরি স্বর্ণ নিয়ে যায়। পরেরদিন ধলাপাড়া পুলিশ ফাঁড়ি থেকে পুলিশ এসে লুট হওয়া মালামালের বিবরণ লিখে নিয়ে যায়।
পূর্ব ঘাটাইলে রয়েছে কলা, ড্রাগন ও পেঁপের অনেক বড় চাষি। রয়েছে বড় ব্যবসায়ীও। প্রবাসীর সংখ্যাও উপজেলার অন্যান্য এলাকার তুলনায় বেশি। ডাকাতির ওই ঘটনা নিয়ে শহরগোপীনপুর এলাকার আষারিয়াচালা বাজারে কথা হয় অনেকের সঙ্গে। তাদের ভাষ্য, চরম নিরাপত্তাহীনতায় আছেন তারা। ডাকাত আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটছে তাদের। এখন জোসনা রাত। কুয়াশাও তেমন নেই। অন্ধকার রাত আর কুয়াশা দেখা দিলেই ভয়টা বেড়ে যায়।
এ বিষয়ে ঘাটাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রকিবুল ইসলাম বলেন, লক্ষিন্দর ইউনিয়নের একটা ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে সে ঘটনায় মামলা হয়েছে। মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে। এ ছাড়া উপজেলায় অন্য কোথাও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে কিনা আমার জানা নেই।