মোঃ হাবিব মিয়া,হাওরাঞ্চল (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি
কিশোরগঞ্জের নিকলীতে বছরের পর বছর ধরেই পুকুরের নোংরা পানিতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়
দেশসেরা স্বর্নজয়ী সাঁতারুদের। এ উপজেলা থেকে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক জয়ী হয়েছেন ২০ জন সাঁতারু। জাতীয় পর্যায়ে চার’শয়ের অধিক স্বর্নজয়ী সাঁতারু এ উপজেলার।
নিকলী উপজেলার আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পদক প্রাপ্ত সাঁতারুরা হলেন, কারার মিজান, কারার সামেদুল, নাজমুল হক, নিয়ামুল হক, আরিফুল ইসলাম, পারভেজ, টিটু মিয়া, জামরুল, মোঃ তোফায়েল, আমিরুল ইসলাম জয়, রফিকুল ইসলাম, শরিফুল ইসলাম, কাজল মিয়া, ইসলাম, রোমানা আক্তার ও ফারজানা আক্তার, আরো অনেকে।
গেলো দ্বিতীয় যুব গেমস-২০২৩ এর সাঁতার ইভেন্টে মোট ১৬ টি পদকের ১২ টিতেই জয় পেয়েছেন নিকলীর সাতারুরা।
বেশ কয়েকযুগ ধরে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে সাঁতার প্রতিযোগিতায় সুনাম কুড়িয়েও নিকলীর সাতারুরা অবহেলিত থাকায় হতাশ স্থানীয়রা। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের মূখ আরও উজ্জ্বল করতে একটি আধুনিক সুইমিংপুল নির্মান করে এ এলাকার সাঁতারুদের সরকারিভাবে সঠিক তদারকির দাবি স্থানীয়দের।
শুরুটা হয়েছিল নিকলী সদর ইউনিয়নের মীরাহাটি গ্রামের আবুল হাশেমের (৬৫) হাত ধরে। আবুল হাশেম সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় স্থানীয় এক সাঁতার প্রতিযোগিতায় বড়দের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে চ্যাম্পিয়ন হন। তাঁর নাম ছড়িয়ে পড়ল চারদিকে। আবুল হাশেম জানালেন, পরে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে থাকেন। ১৯৭৫ সালে জাতীয় পর্যায়ে একটি রৌপ্য, ১৯৭৭ সালে জাতীয় পর্যায়ে দুটি রৌপ্য এবং একই সালে ঢাকা বিভাগীয় আঞ্চলিক সাঁতার প্রতিযোগিতায় পাঁচটি স্বর্ণ জিতলেন।
নিকলীর মধ্যে আবুল হাশেমই সাঁতার কেটে প্রথম সাফল্য পান। শুরুর দিকে তাঁকে দেখেই স্থানীয় অনেকেই সাঁতারে আসতে থাকলেন। আর ১৯৯৩ সালে কারার মিজান সাফ গেমসে স্বর্ণপদক জেতার পর সেটা কয়েক গুণ বেড়ে যায়।
নিকলী সদরের কারার বাড়ির কারার মিজানুর রহমানকে আবুল হাশিমই প্রশিক্ষণ দিয়ে দেশসেরা সাঁতারু বানিয়েছেন। ১৯৯৩ সালে কারার মিজানুর রহমান সাফ গেমসে স্বর্ণপদক জিতে দেশের বিবর্ণ সাঁতারে আশার এক ক্ষীণ আলো জ্বালিয়েছিলেন। ১৯৮৫ সাল থেকে কারার মিজানুর রহমান বয়সভিত্তিক সাঁতারেও বহুবার স্বর্ণ জিতেছেন। মিজানুর রহমানের চাচাতো ভাই কারার ছামেদুল ইসলামও সাঁতারে তার কাছ থেকেই প্রশিক্ষণ নেন। ২০০১ সাল পাকিস্তানে আয়োজিত সাফ গেমসে সুইমিংয়ে নিকলীর তরুণ সাঁতারু ছামেদুল জেতেন চারটি স্বর্ণপদক। তার আগে ১৯৯৯ সালে নেপালে আয়োজিত সাফ গেমসে জিতেছেন রৌপ্য পদক। ২০০২ সালে বাংলাদেশ গেমসে ১০০ মিটার সাঁতারে মিজানের গড়া (১ দশমিক ০৯ মিনিট) রেকর্ড ভেঙে ফেলেন ছামেদুল। তিনি সময় নিয়েছিলেন (১ দশমিক ০৭ মিনিট)। দেশের কিশোর-তরুণদের সামনে সেই উদাহরণ তৈরি করে দিয়েছেন নিকলীর সাঁতারুরাই।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নানান বয়সী ছেলে-মেয়েরা বিভিন্ন ইভেন্টের সাঁতার প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন পুকুরের ময়লা দুর্গন্ধযুক্ত নোংরা পানিতে। প্রায় প্রতিদিনই এমন দৃশ্যের দেখা মিলে কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলা পরিষদের সীমানার ভিতরের দুটি পুকুরে। এদের বেশিরভাগই জেলা, বিভাগ ও জাতীয় পর্যায়ে স্বর্ন জয়ী সাঁতারু। জানা গেছে, এ দুটি পুকুরে সারা বছরই মাছের চাষ হয়।
নিয়মিত মাছ চাষ করা এ দুটি পুকুরের ময়লা দুর্গন্ধযুক্ত পানিতে সাঁতার প্রশিক্ষণ দিয়ে চর্মরোগসহ পানিবাহিত নানান অসুখে ভোগেন সাঁতারুরা।
সাঁতারু নাদিমুল হক বলেন, জাতীয় পর্যায়ে আমি পঞ্চাশটি স্বর্ণপদক পেয়েছি।
পুকুরের ময়লা পানিতে সাঁতার কেটে আমিসহ আমার সাথের আরও প্রায় দুইশত সাঁতারুর শরীরের বিভিন্ন স্থানে চর্মরোগ দেখা দিয়েছে।
নিকলী সদর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মোঃ হুমায়ুন কবির বলেন, নিকলীতে সরকারীভাবে সাঁতারুদের প্রশিক্ষণের কোন ব্যবস্থা না থাকায় স্থানীয় তিনজন সাবেক সাঁতারু বিনা পারিশ্রমিকেই প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছেন। অচিরেই সাঁতারুদের প্রশিক্ষণের জন্য একটি আধুনিক সুইমিংপুল নির্মাণের পাশাপাশি সরকারিভাবে সাঁতারুদের তদারকির ব্যবস্থাসহ কোচদের সম্মানীর ব্যবস্থা করা জরুরি।
সাঁতার প্রশিক্ষক (কোচ) জলিল ও জুবায়ের বলেন, সেনাবাহিনী-নৌবাহীনিসহ বিভিন্ন বাহীনিতে নিকলীর তিন'শয়ের অধিক সাঁতারু নারী-পুরুষ কর্মরত রয়েছেন। বর্তমানেও জাতীয় পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি পদক জয়ী সাঁতারু নিকলীর। তাই, আমারাসহ আমাদের নিকলীবাসীর প্রাণের দাবি একটি সুইমিংপুলের।
Tags
কিশোরগঞ্জ