বিধবা নারীকে সম্মানজনক জীবনযাপনের সব অধিকার দিয়েছে ইসলাম। মহানবী (স.) একাধিক বিধবা নারীকে বিয়ে করে তাদের প্রতি সামাজিক অবজ্ঞার পথ বন্ধ করে দিয়েছেন। একইসঙ্গে তিনি বিধবার প্রতি সদয় আচরণ করতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, নবী (স.) বলেছেন, ‘বিধবা ও মিসকিনের জন্য খাদ্য জোগাড়ে চেষ্টারত ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারীর মতো অথবা রাতে সালাতে দণ্ডায়মান ও দিনে সিয়ামকারীর মতো।’ (সহিহ বুখারি: ৫৩৫৩)
অন্য হাদিসে এসেছে, ‘রাসুলুল্লাহ (স.) কোনো বিধবা ও অভাবীর সঙ্গে পথ চললে তাদের প্রয়োজন পূরণ করতেন।’ (সুনানে নাসায়ি: ১৪২৫)
ইসলাম বিধবা নারীকে শুধু বিয়ের অনুমতি দেয়নি; বরং উৎসাহিত করেছে। নির্ধারিত সময় ইদ্দত পালন করার পর বিধবা নিজের পছন্দ অনুযায়ী যেকোনো পুরুষকে বিয়ে করতে পারবে। তাকে বাধা দেয়ার অধিকার কারো নেই।
সাধারণত সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে বিধবা নারী তার জীবন ও যৌবন বিসর্জন দেয় অথবা সন্তানের দোহাই দিয়ে তাকে দ্বিতীয় বিয়ে থেকে বিরত রাখা হয়। ইসলাম বিধবা নারীকে সন্তানের ‘একক দায়’ থেকে মুক্তি দিয়েছে। ইসলামি শরিয়তমতে, সম্পদ ও ব্যয় নির্বাহের ক্ষেত্রে পিতার অবর্তমানে দাদা সন্তানের অভিভাবক এবং তার অবর্তমানে ইসলামি রাষ্ট্রের বিচারক অভিভাবক নির্ধারণ করে দেবে। অবশ্য মা সন্তান প্রতিপালন করবে যতক্ষণ না সে অন্যত্র বিয়ে করে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘তুমি সন্তানের ব্যাপারে বেশি হকদার যতক্ষণ না তুমি বিয়ে করো।’ (আবু দাউদ: ২২৭৬)
তবে সন্তান প্রতিপালনের অজুহাতে মায়ের জীবন ক্ষতিগ্রস্ত করার সুযোগ নেই। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘কোনো মাকে তার সন্তানের জন্য এবং কোনো পিতাকে তার সন্তানের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত করা হবে না।’ (সুরা বাকারা: ২৩৩)
বিধবা নারীদের যেকোনো রকম সহায়তা করা অসীম সওয়াবের কাজ। সহায়তার সবচেয়ে বড় মাধ্যম হলো তাকে বিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা। সমাজে অনেকে অতিরিক্ত চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে (শরিয়তসিদ্ধ না হওয়া সত্ত্বেও) গার্লফ্রেন্ড রাখে, রক্ষিতা রাখে, পতিতাকে বেছে নেয়। অথচ এ ক্ষেত্রে একজন বিধবা নারীকে বিয়ে করার মাধ্যমে নিজের অতিরিক্ত চাহিদা মিটিয়ে সওয়াব অর্জন করতে পারে এবং গুনাহ থেকেও নিজেকে বাঁচাতে পারে। সমাজ ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব, যেসব পুরুষরা বিধবা নারীদের বিয়ে করে তাদের ভর্ৎসনা বা বাঁকা চোখে না দেখে তাদের উৎসাহ প্রদান করা।
তবে হ্যাঁ, কোনো বিধবা নারীর যদি বিয়ের বয়স না থাকে অথবা সে বিধবা হওয়ার পরও এতিম সন্তানদের লালন-পালনের উদ্দেশ্যে বিয়ে করতে না চায়, কষ্ট হলেও একাকী জীবনযাপনের পথ বেছে নেয় এবং নিজের চরিত্র, ইজ্জত-আব্রু রক্ষার ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়, তা হলে এমন বিধবা নারীকে বিয়ের জন্য চাপ প্রয়োগ করা যাবে না। এরূপ বিধবা নারীর জন্য বিশ্বনবীর (স.) বাণীতে রয়েছে সান্ত্বনা পুরস্কারের ঘোষণা।
ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি এবং (নিজের যত্ন না নেওয়ায়) চেহারায় দাগ পড়া নারী পরকালে এভাবে থাকব অথবা মধ্যমা আঙুলের চেয়ে বেশি দূরত্ব থাকবে আমাদের মধ্যে। সে হলো সেই নারী, যার স্বামী মারা গেছে এবং তার বংশীয় মর্যাদা ও সৌন্দর্য থাকার পরও সে নিজেকে (বিয়ে থেকে) বিরত রাখে এতিম সন্তানদের জন্য-যতক্ষণ না সন্তানরা (স্বাবলম্বী) পৃথক হয়ে যায় অথবা মারা যায়।’ (আবু দাউদ: ৫২৪৯)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বিধবা নারীদের অবজ্ঞা করা থেকে হেফাজত করুন। বিধবা নারীকে যথাযথ মর্যাদা দিয়ে অসীম সওয়াব লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।