হাওরাঞ্চল (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি
কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলায় এবার মিষ্টি কুমড়ার বাম্পার ফলন হয়েছে। বিশেষ করে উপজেলার নিকলী সদর, গুরুই,ছাতিরচর,সিংপুর,জারইতলা, কারপাশা, দামপাড়া ইউনিয়নের পতিত জমিতে মিষ্টি কুমড়ার চাষ বেশি হয়েছে। নামে মাত্র সময় ও শ্রম এবং খরচ কম হওয়ার পাশাপাশি ভালো দামও পাচ্ছেন কৃষকরা। ফলে এই বারোমাসী সবজি আবাদের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন কৃষকরা।
নিকলীতে দিন দিন বাড়ছে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ। এবার উপজেলায় বাম্পার ফলনের পাশাপাশি কৃষকরা ভালো দাম পাওয়ায় তাদের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে এখানকার মিষ্টি কুমড়া যাচ্ছে ঢাকা ও ময়মনসিংহের বিভিন্ন জেলা-উপজেলার বাজারে।এই কুমড়ার শাকও বেশ পুষ্টিকর। শীতকালীন ফসলের জন্য অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর এবং গ্রীষ্মকালীন ফসলের জন্য ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত মিষ্টি কুমড়ার বীজ বপন করা হয়।এই এলাকায় মিষ্টি কুমড়া ছাড়াও মৌসুমী সবজি গোলআলু, পটল, শিম, বেগুন, লাউ, ঢেঁড়স, ঝিঙা, বেগুন, চিচিংগা, টমেটো ও করলাসহ বিভিন্ন শাক-সবজির ব্যাপক আবাদ হয়ে থাকে। মৌসুমভিত্তিক নিরাপদ শাক সবজিসহ বিভিন্ন ফসল চাষে কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের নিয়মিত উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।
কৃষি অফিস সূত্র জানায়, এবছর উপজেলায় ১০০ হেক্টর জমিতে বানিজ্যিক ভাবে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ করা হয়েছে। এমনকি প্রতিটি বাড়ির গৃহীনিরা তাদের বাড়ির আঙ্গিনায় পরিবারের চাহিদা মিটাতে ২-৪টি করে মিষ্টি কুমড়ার গাছ রোপন করেছেন।চলতি মৌসুমে উপজেলার অনেক কৃষক মিষ্টি কুমড়া চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। এমন এক কৃষক হলেন গুরুই ইউনিয়নের পালপাড়া এলাকার মো. সুরজত আলীর ছেলে গোলাপ জল। গোলাপ জল এবছর ৯০ শতাংশ জমিতে আবাদ করা গোলআলুর ক্ষেতে মিষ্টি কুমড়ার বীজ বপন করেছিলেন। গোলআলু তুলার পরে কুমড়ার গাছ ছড়িয়ে পড়ে সারা ক্ষেতে। আলু ক্ষেতে কুমড়া চাষ করায় বাড়তি কোন খরচ করতে হয়নি। এই ৯০ শতাংশ জমিতে ১৪ পেকেট মিষ্টি কুমড়ার বীজ, ২ বার হালকা সেচ, একবার নিড়ানি ও সামান্য পরিমাণ জৈব সার দিতে হয়েছে। এতে করে সব মিলিয়ে তার অতিরিক্ত খরচ হয়েছে ১৬ হাজার টাকা। রবিবার পর্যন্ত তিনি ৮৫ হাজার টাকার মিষ্টি কুমড়া পাইকারি বিক্রি করেছেন। আর এলাকার বাজারে আরো অন্তত ২০ হাজার টাকার মিষ্টি কুড়মড়া খুচরা বিক্রি করা হয়েছে বলে চাষী গোলাপ জল জানান। এখনো ক্ষেতে যে পরিমাণ ফলন রয়েছে তা থেকে আরো অন্তত ২৫ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব বলে তিনি মনে করছেন। তিনি বলেন, আলু ক্ষেতে কুমড়ার আবাদ করে অধিক মুনাফা অর্জনের মতো সহজে টাকা আয়ের আর কোন উপায় আছে বলে আমার জানা নেই।
অন্যএক কৃষক জারইতলা ইউনিয়ন ধারীশ্বর গ্রামের মোঃ আবু বাক্কার বলেন, আমাদের অনুর্বর জমি গুলোতে আগে নাবুঝে অনেক কিছু চাষ করতাম, তাতে লাভ কম হতো। কিন্তু কৃষি অফিসের পরামর্শে কয়েক বছর ধরে এসব জমিতে মিষ্টি কুমড়া চাষ শুরু করি। এতে লাভ বেশি হওয়ায় এখন সবাই মিষ্টি কুমড়ার দিকে ঝুঁকেছেন। তাছাড়া উৎপাদিত মিষ্টি কুমড়া বিক্রি করতে আমাদের চিন্তা করতে হয় না। বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা এসে জমি থেকে কিনে নিচ্ছেন। এতে দাম কিছু কম পেলেও, সময় ও শ্রম বেঁচে যাওয়ায় লাভ বেশিই পাচ্ছি বলে মনে করা যায়। সাজনপুর গ্রামের মোকসেদ আলীর ছেলে সবজির পাইকার আব্দুল হালিম জানান, তিনি এখানকার মিষ্টি কুমড়া পাইকারি কিনে নিয়ে রাজধানী ঢাকা এবং ময়মনসিংহের বিভিন্ন বাজারসহ পার্শবর্তী জেলা-উপজেলার বাজারের পাইকার ও খুচরা বিক্রেতার নিকট অল্প লাভে বিক্রি করেন। তাছাড়া মিষ্টি কুমড়ার গাছসহ ২০ কাঠা (১০০ শতাংশ) জমি ৭০ হাজার টাকায় চুক্তিতে মিষ্টি কুমড়া কিনেছেন। এই চুক্তির ক্ষেত থেকে সবমিলিয়ে তার অর্ধলক্ষ টাকা লাভ থাকবে বলে তিনি আশা করছেন। হালিম আরো জানান, তিনি ৭ বছর ধরে মৌসুমী শাক সবজির পাইকারী ব্যবসার সাথে জড়িত। পরিবারের সব খরচ বাদে বছরে অন্তত ২০ হাজার টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকা তার সঞ্চয় থাকে। সঞ্চয়ের টাকায় তিনি ঘর-বাড়ি নির্মাণ করাসহ স্বাভাবিক মূলে ১০ শতাংশ জমি কিনেছেন, বন্ধক রেখেছেন আরো ৩০ শতাংশ আবাদি জমি।উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ সাখাওয়াত হোসেন জানান, এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় উপজেলায় মিষ্টি কুমড়ার বাম্পার ফলন হয়েছে। গত মৌসুমী ৫০হেক্টর জমিতে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ করেছিল।এবার ১০০ হেক্টর জমিতে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ করেছে। বর্তমান বাজারে দাম ভালো থাকায় কৃষকরাও খুশি। মৌসুমভিত্তিক নিরাপদ শাক সবজিসহ বিভিন্ন ফসল চাষে কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের নিয়মিত উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। কৃষকদের দেওয়া হচ্ছে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ।
Tags
কিশোরগঞ্জ