প্রেমে রাজি না হওয়ায় ময়মনসিংহের নান্দাইলে মাদরাসাছাত্রীকে অপহরণের পর তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে ধর্ষণ ও নির্যাতনে অসুস্থ মাদ্রাসা ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) দুপুরে উপজেলার নিজ বাড়িতে তার মৃত্যু হয়।
গত শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) মেয়েটি বলেছিল, ‘স্যার, হের (অভিযুক্ত হোসাইন) চোখ তুইল্যা আমার কাছে দেন। আমি তো মাইর্যাই যাইয়াম তার পরও আমি মরেও শান্তি পাইয়াম।'
এদিকে, অপহরণের পর ধর্ষণ ও নির্যাতনের অভিযোগে গত ৯ সেপ্টেম্বর মেয়েটির বাবা ময়মনসিংহ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে নালিশি মামলা করেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, তার মেয়েকে প্রেমের প্রস্তাব দেন উপজেলার সিংরইল ইউনিয়নের কচুরি গ্রামের মোহাম্মদ হোসাইন। কিন্তু হোসাইনের প্রস্তাবে রাজি না হলে গত ১ জুন ১৪ বছর বয়সি মেয়েটিকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়।
মামলায় আরও অভিযোগ করা হয়, দুই মাস নারায়ণগঞ্জের একটি এলাকায় আটকে রেখে ধর্ষণ ও নির্যাতন করে ডান চোখ ক্ষত করে দেওয়ার পর গত ৬ সেপ্টেম্বর মেয়েটিকে বাড়ির পাশের সড়কে ফেলে যায় অপহরণকারী।
নিহতের বাবা বলেন, আহত অবস্থায় উদ্ধার করে মেয়েকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চোখের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার আগারগাঁও চক্ষু হাসপাতালে পাঠানোর কথা বলেন চিকিৎসকরা। ১৫ দিন চিকিৎসা শেষে মেয়ের ডান চোখ বাঁচাতে কর্ণিয়া তুলে ফেলা হয়। সেই কর্ণিয়া স্বজনরা ফ্রিজের মধ্যে রেখে দেন পরে উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে প্রতিস্থাপনের জন্য। এ অবস্থায় তারা তাদের মেয়েকে বাড়ি নিয়ে আসেন। সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) দুপুরে মেয়েটি মারা যায়।
তিনি আরও বলেন, আমার মেয়েটিকে নির্মমভাবে অত্যাচার করে হত্যা করেছে। আমি এর সঠিক বিচার চাই। হোসাইনকে দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি।
এলাকাবাসী মোহাম্মদ হোসাইন (২২) নামে মামলার এজাহারভুক্ত আসামিকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন।
নান্দাইল মডেল থানার ওসি মো. ফরিদ আহমেদ বলেন, ছাত্রীর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।আগে যে মামলাটি হয়েছিল সেটি হত্যা মামলায় রূপান্তর হলে সে অনুযায়ী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে, গত শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) ওই ছাত্রীর বাড়িতে গেলে দেখা যায়, ঘরের বারান্দায় একটি চেয়ারে মায়ের সহায়তায় বসে রয়েছিল মেয়েটি। ডান চোখ অসম্ভব ফুলে রয়েছে। চোখের নিচে ও নাক দিয়ে রক্ত ঝড়ছে। টিস্যু পেপার দিয়ে রক্ত মুছছে আর যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে মেয়েটি। নির্যাতনের পর থেকে সে কানেও কম শুনছে।
আহত ওই ছাত্রী জানিয়ে ছিল, তাকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে নারায়ণঞ্জের একটি এলাকায় রাখা হয়। সেখানে চার মাস আটকা ছিল। প্রতিদিনই চলত ধর্ষণ। বাধা দিলে চালানো হতো শারীরিক নির্যাতন। একসময় পালিয়ে বাড়িতে আসার চেষ্টা করলে ওইদিন আঙুল দিয়ে ডান চোখ উঠিয়ে ফেলার চেষ্টা চালায় হোসাইন। এভাবে প্রতিদিনই অত্যাচার চালানো হতো। এরপর চোখ থেকে রক্ত ঝরা শুরু করলে চিকিৎসা না করে বাড়ির সামনে ফেলে রেখে যায় হোসাইন। আহত ছাত্রী কান্নাও করতে পারছে না।
এই অবস্থায় সংকটাপন্ন অসহায় তার পরিবার। মারাত্মক আঘাতপ্রাপ্ত মেয়েটির ডান চোখটি তুলে ফেলে আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য পরিবারের কাছে দিয়েছেন চিকিৎসক। চোখটি বাড়ির ফ্রিজে রেখা হয়েছিল।