Daily News BD Online

নাগরপুরে মামলার তদন্ত করতে গিয়ে তরুণীর সঙ্গে প্রেম এবং বিয়ে, অতঃপর...


 নিজস্ব প্রতিবেদক :
টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারে মামলার তদন্ত করতে গিয়ে কলেজছাত্রী রিয়া আক্তারের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) জাহাঙ্গীর আলম। পরে বিভিন্ন কৌশলে ওই ছাত্রীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়েন এবং বিয়ে করেন।


চলতি বছরে ৬ জুন ১৫ লাখ টাকার দেনমোহরে ঢাকার রায় সাহেব বাজারের কাজী মাওলানা মো. সাদেক উল্যাহ ভুইয়া জাহাঙ্গীর-রিয়ার বিয়ের রেজিস্ট্রি করেন। সে সময় নাগরপুর থানার এএসআই হিসেবে কর্মরত ছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। রিয়া আক্তার টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার ডুবাইল গ্রামের রাজাখানের মেয়ে ও করটিয়া সাদত কলেজের শিক্ষার্থী।

সম্প্রতি বদলি হয়ে ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা থানায় আসেন জাহাঙ্গীর। অন্য থানায় বদলি হওয়ার পরই কলেজছাত্রী রিয়াকে স্ত্রী হিসেবে অস্বীকার করেন তিনি। জাহাঙ্গীর গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বলদিঘাট এলাকার সাহাব উদ্দিনের ছেলে।

জানা যায়, রিয়াকে বিয়ে করার আগে থেকেই জাহাঙ্গীর বিবাহিত ছিলেন এবং তার সন্তানও রয়েছে। তবে জাহাঙ্গীর বিয়ের বিষয়টি রিয়ার কাছে গোপন রেখে ছিলেন। প্রতারণা ও তথ্য লুকিয়ে বিয়ে করার বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে টাঙ্গাইল পুলিশ সুপার, ফরিদপুর পুলিশ সুপার ও নগরকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার পাননি রিয়া।

পরে টাঙ্গাইল আদালতে যৌতুক ও নির্যাতন আইনে পুলিশ কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন তিনি। এছাড়া ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি বরাবর আলাদা একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন ওই ছাত্রী।

লিখিত অভিযোগে কলেজছাত্রী রিয়া জানান, দেলদুয়ার থানায় একটি মামলার তদন্ত করতে দেলদুয়ার উপজেলার ডুবাইলে আমাদের বাড়িতে আসে এএসআই জাহাঙ্গীর আলম। ওই সময় আমার সাথে পরিচয় ঘটে। পরে বিভিন্ন কৌশলে আমার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। পরে ঢাকায় একটি কাজী অফিসে নিয়ে বিয়ে করে। এরপর থেকেই আমরা দুইজনে একসাথে বসবাস করেছি। পরবর্তীতে নাগরপুর থানা হতে ফরিদপুরে বদলি হওয়ার পর থেকে কোনো যোগাযোগ করছে না জাহাঙ্গীর এবং তাদের বাড়িতেও আমাকে নিচ্ছেন না। পরে জানতে পারি তার স্ত্রী ও দুই সন্তান রয়েছে। বর্তমানে তাকে তালাক দেওয়ার জন্য মোবাইলফোনে বারবার প্রাণনাশ ও মামলার ভয় দেখাচ্ছে।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী রিয়া আক্তার বলেন, প্রেমের ফাঁদে ফেলে এবং তথ্য গোপন করে বিয়ে করেছে জাহাঙ্গীর। বিয়ের পর একসাথেই ছিলাম কয়েক মাস। ৫ আগস্টের পর অন্যত্র বদলি হওয়ার পরই তার আরেক বিয়ে হওয়ার তথ্য পাই। বদলি হওয়ার পর থেকেই আমার কোনো খোঁজখবর নেয় না। তার স্ত্রী ও সন্তান থাকার পরও প্রতারণা করে আমার জীবন নষ্ট করেছে। আমি তার সাথে সংসার ও স্ত্রীর মর্যাদা চাই। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ দিয়েছি। আদালতেও মামলা দায়ের করেছি। এখন তাকে তালাক দিতে বারবার হুমকি দিচ্ছে। ফলে বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি।

দ্বিতীয় বিয়ের কথা স্বীকারে করেন নগরকান্দা থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, কাজী অফিসে গিয়ে রিয়াকে বিয়ে করেছি ঠিক আছে। আইনিভাবে বিষয়টির সমাধান করা হবে।

ফরিদপুরের নগরকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সফর আলী বলেন, রিয়া নামের ওই নারী থানায় এসেছিলেন। জাহাঙ্গীর তাকে নিয়ে সংসার করবে না বলে জানিয়েছেন। তবে ওই নারী কোনো অভিযোগ দেননি। টাঙ্গাইলে মামলা হওয়ার বিষয়ে কিছু জানা নেই।

নাগরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এইচ এম জসীম উদ্দিন বলেন, এএসআই জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ থাকায় তাকে নাগরপুর থেকে বদলি করা হয়েছে। বদলি হওয়ার পরই জানতে পারি তিনি রিয়া নামের একজন বিয়ে করেছেন। যেহেতু নাগরপুর থানায় তিনি কর্মরত নেই সুতরাং তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন