হিমাগারে আলু রাখার সময় দাম ছিল ১৩ থেকে ১৬ টাকা কেজি। তবে হিমাগার থেকে বের করার সময় বীজ আলুর দাম এক লাফে বেড়ে ১০০ টাকায় পৌঁছে যায়। কৃষকরা আশ্চর্য হলেও উপায় না থাকায় বেশি দামেই বীজ আলু কিনতে হয়। আবার আলু রোপণের সময় সারেও দিতে হয়েছে চড়া মূল্য। সবকিছুতে খরচ বেশি হওয়ায় বেশি দামে আলু বিক্রি হবে এমনই আশা ছিল কৃষকদের। তবে সেই আশা হতাশায় পরিণত হয়েছে। আলু চাষে লাভ তো দূরের কথা খরচ উঠানোর চিন্তায় রয়েছেন জয়পুরহাটের চাষিরা। কারণ, এবার আগাম আলুর দাম অন্য বছরের তুলনায় কম। তাই চড়া দাম পাচ্ছেন না চাষিরা। আলু রোপণ ও উত্তোলনের সময় আলু চাষির মুখে হাসি না থাকলেও কিছুটা স্বস্তি মেলাতে পারতো হিমাগারগুলো। তবে সেখানেও এবার চাষিদের কপালে ফেলবে চিন্তার ভাঁজ। কেননা হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করার সময়ও গুণতে হবে বেশি টাকা।
দেশের আলু উৎপাদনের অন্যতম শীর্ষ জয়পুরহাট জেলা এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে তিন হাজার ৪৭০ হেক্টর বেশি জমিতে আলুর চাষ হয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এই মৌসুমে আলু চাষে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৪০ হাজার হেক্টর জমি। আর আলু চাষ হয়েছে ৪৩ হাজার ৪৭০ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে কালাই উপজেলায় ১০ হাজার ৯০৫ হেক্টর, ক্ষেতলালে ৯ হাজার ২২০ হেক্টর, পাঁচবিবিতে ৮ হাজার ৯৪৫ হেক্টর, সদর উপজেলায় ৭ হাজার ৮০০ হেক্টর ও আক্কেলপুরে ৬ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। এবার আলুর চাষ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯ লাখ ৫৬ হাজার মেট্রিক টন।
পাঁচ বছরের তুলনায় এবার আলু চাষে রেকর্ড : চলতি ২০২৪-২৫ মৌসুমে আলু চাষ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গত পাঁচ বছরের তুলনায় রেকর্ড করেছে। গত ২০২০-২১ মৌসুমে এ জেলায় আলু চাষে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৪০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমি। তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ওই মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৮৫ হেক্টর জমি কমে ৪০ হাজার ৩১৫ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ হয়েছিল। আলু উৎপাদন হয়েছে ৮ লাখ ৪৫ হাজার ২৯৭ মেট্রিক টন। পরের ২০২১-২২ মৌসুমে ৪০ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও ৭০ হেক্টর কম জমিতে আলু আবাদ হয়েছিল। আর ওই মৌসুমে ফলন ভালো হওয়ায় ৯ লাখ ২৮ হাজার ১২০ মেট্রিক টন আলু উৎপাদন হয়েছে। ওই মৌসুমে আলু উৎপাদন ভালো হলেও চাষিরা ২০২২-২৩ মৌসুমে অন্যান্য ফসলের চাষ বাড়িয়ে দেন। এ কারণে ওই মৌসুমে ৩৮ হাজার ৩৬৫ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে কৃষি বিভাগ। তবে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৩৮ হাজার ৮৬৫ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ হয়েছিল। আর আলু উৎপাদন হয়েছে ৯ লাখ ২৩ হাজার ২০০ মেট্রিক টন।
তবে ওই মৌসুমে চাষিরা আগাম ও ভরা মৌসুমে আলুর কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়ার কারণে গত ২০২৩-২৪ মৌসুমে আলুর আবাদ সেভাবে বাড়াননি। গত মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩৮ হাজার ৮১৫ হেক্টর জমি। আর আলুর চাষ হয়েছে ৩৮ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে। ২০২২-২৩ মৌসুমের তুলনায় গত মৌসুমে আলুর আবাদ মাত্র ৮৫ হেক্টর জমিতে বাড়লেও উৎপাদন বাড়েনি। গত মৌসুমে আগের বছরের তুলনায় ৮০ হাজার ১২৭ মেট্রিক টন আলুর উৎপাদন কমে ৮ লাখ ৪৩ হাজার ৭৩ মেট্রিক টন আলু উৎপাদন হয়েছে। ২০২৩-২৪ মৌসুমে আলুর উৎপাদন কম হওয়ায় ভরা মৌসুমের তুলনায় আগাম আলুর দাম চড়া হয়। এই আলু হিমাগারে সংরক্ষণের পর থেকে দিন দিন আলুর দাম চড়া হতেই থাকে। এ কারণে গত পাঁচ বছরের তুলনায় এবার রেকর্ড পরিমাণ জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে।