Daily News BD Online

বাজারে সবজিতে কৃষকের লাভ

 


উৎপাদন এলাকায় শীতকালীন একটি ফুলকপির দাম এখন ২-৫ টাকা। কয়েক হাত বদল হয়ে ঢাকায় এসে তা বিক্রি হচ্ছে ১৫-৩০ টাকায়। মাঝে এতগুলো টাকা বেড়ে গেলেও কৃষকের তাতে লাভ শূন্য। উল্টো লোকসান।

হাতবদল না করে কৃষক যদি সরাসরি বিপণন ব্যবস্থায় যুক্ত হতে পারতো কিংবা সরকার বিশ্বের অন্য দেশের মতো চাষের এলাকা ভাগ করা, অগ্রিম দাম নির্ধারণ, সরকারিভাবে বিপণনের দায়িত্ব নিতো তাহলে কৃষক ন্যায্যমূল্য পেতো বলে মনে করছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা।


কৃষি অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছাতে সবজির দাম কয়েকগুণ বেড়ে যায়। মাঝে হাতবদল না হলে কৃষক ভালো দাম পেতো ভরা মৌসুমেও। সেজন্য কৃষকের উৎপাদিত সবজি সরাসরি ভোক্তার কাছে বিক্রির ব্যবস্থা জরুরি। সেটা না হওয়ার কারণে মাঝের বড় একটি চক্র নিজেদের আখের ঠিক রাখতে কৃষক পর্যায়ে পণ্যের দাম অত্যধিক কমিয়ে অধিক মুনাফা করে চলছে। বিশ্বের অনেক দেশেই ভরা মৌসুমে পণ্যের দাম কমে। তবে তার একটি ভারসাম্য থাকে। বাংলাদেশে সেটা নেই। মৌসুমে দাম একদম পড়ে যায়।- কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হর্টিকালচার উইংয়ের অতিরিক্ত পরিচালক কেজেএম আব্দুল আউয়াল


পাশাপাশি কৃষক, পাইকারি বিক্রেতা ও আড়তদারা বলছেন, এমন ভরা মৌসুমে সবজির ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে সবজির মজুত ব্যবস্থা গড়ে তোলা, পরিবহন খরচ কমানো ও সবজির বিকল্প ব্যবহার বাড়াতে হবে। লাভ দূরের কথা খরচ উঠছে না কৃষকের

একমাস আগেও দেশের বাজারে সবজির চড়া দাম ছিল। কিন্তু বর্তমানে শীতকালীন সবজির যে দাম তাতে লাভ দূরের কথা আসল খরচও উঠে আসছে না কৃষকের। অনেক কৃষক ক্ষেত থেকে সবজি তুলতেও নারাজ। এ অবস্থায় ক্ষেতের সবজি পচছে ক্ষেতেই। অনেকে ক্ষেতেই নষ্ট করে ফেলছেন ক্ষোভে।


মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) পাবনার পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি ফুলকপি ৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এক সপ্তাহ আগেও ২৫-৩০ টাকা ছিল। মাসখানেক আগে ছিল ৫০ টাকা পর্যন্ত। বাজারে সরবরাহের তুলনায় এখন চাহিদা কম।

এর চেয়েও খারাপ অবস্থা যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি ও বারীনগর সাতমাইল পাইকারি বাজারে। সেখানে কয়েকদিন ধরে ফুলকপির দাম নেই। গত শুক্রবার সকালে ফুলকপি বাজারে না আনতে চুড়ামনকাটির পাইকারি বাজারে মাইকিং করা হয়। এদিন প্রতি পিস ফুলকপির দাম ছিল ১ থেকে ৫ টাকা।

ওই এলাকার কৃষকের দাবি, সেখানকার পাইকাররা সিন্ডিকেট তৈরি করে বাজারে আসা ফুলকপি কম দামে কিনছেন। বিল্লাল হোসেন নামে একজন কৃষক বলেন, ‘খুচরা বাজারে ফুলকপির এখনো বেশ চাহিদা রয়েছে। ঢাকা বা যশোরের বাজারে এখনো ফুলকপি ১০-২০ টাকা দাম। কিন্তু আমরা পাইকার ব্যবসায়ীদের কারসাজির শিকার হচ্ছি। তারা ফুলকপি মূল্যহীন বলছে, কারণ তারা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কপি কিনতে চাইছে না। যে কারণে আমরা পানির দরে কপি বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছি।’


সবজি উৎপাদনের আরেক শীর্ষ এলাকা জয়পুরহাটের আক্কেলপুর এলাকার কৃষক শাহিন হাওলাদার এবার দেড় বিঘা জমিতে শিম চাষ করেন। ক্ষেত ভরে আছে শিম ও ফুলে। সবজির দাম কমে যাওয়ায় তার শিমক্ষেতের কিছু অংশের মাচা ভেঙে পেঁয়াজ লাগানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন।


শাহিন হাওলাদার জানান, শিম বিক্রির টাকা দিয়ে শ্রমিকদের মজুরি দিতে না পারায় শিম তোলা বন্ধ রেখেছেন তিনি।


কৃষকের উৎপাদন খরচ কত

প্রতি কেজি কৃষিপণ্য উৎপাদনে কৃষকের ব্যয় কত সে হিসাব রাখে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। সংস্থার তথ্যমতে, প্রতিটি ফুলকপির উৎপাদন খরচ ৫ টাকার বেশি। প্রতি কেজি শিম উৎপাদন খরচ সাড়ে ৯ টাকা, বেগুনের ১০ টাকা, টমেটো ৯ টাকা এবং লাউ প্রতি পিস ৬ টাকা।

জাপানসহ বিভিন্ন দেশে উৎপাদনের ব্যাপারে কোটা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। তারা আগাম দামও নির্ধারণ করে দেয়। যদিও আমাদের দেশে এ কাজ করা খুব কঠিন, তারপরও অসম্ভব নয়। মৌসুমের শুরুতেই দামটা নির্ধারণ করে দেওয়া হলে কৃষক লোকসানে পড়বেন না।- বাকৃবির কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. তাজ উদ্দিন


বর্তমান দেশের পাইকারি বাজারের তথ্যও রয়েছে এ সংস্থার হাতে। সে হিসাবে বলা হচ্ছে, প্রতি পিস ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১৬ টাকায়, শিম ২৮ থেকে ৪০ টাকা, মুলা ১০ থেকে ১৬ টাকা, বেগুন ২০ থেকে ৪০ টাকা, টমেটো ৩৫ থেকে ৫০ টাকা ও প্রতি পিস লাউ ২০ থেকে ৪০ টাকা।


তবে এ দামের সঙ্গে কোনো মিল নেই প্রান্তিক উৎপাদন এলাকার দামের।


ঢাকার বাজারের হালচাল

উৎপাদন এলাকায় সবজি মূল্যহীন হলেও শহরের বাজারে কিন্তু একদম সস্তা নয়। এখনো রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি পিস ফুলকপি আকারভেদে ১৫ থেকে ৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া শীতকালীন শিম ৩০-৬০ টাকা, কাঁচা টমেটো ৩০ টাকা, মুলা ২০-৩০ টাকা কেজি।

কারওয়ান বাজারের আড়তদাররা বলছেন, শহরে যতই আমদানি হোক না কেন কোনো সবজির দাম ২০ টাকার নিচে আসে না। ফলে পরিবহন খরচ বাদ দিয়ে এসব সবজির দাম উৎপাদন এলাকায় ১০ থেকে ১২ টাকার মধ্যে হওয়ার কথা।

কারওয়ান বাজার ক্ষুদ্র আড়ত মালিকদের সভাপতি ইমরান মাস্টার বলেন, ‘চাহিদার তুলনায় সরবরাহ এখন বেশি সেটা ঠিক। তবে বাজারে যে দাম নেই এমনটা নয়। হিসাব করলে চাষিদের মুনাফা কম হলেও খরচ ওঠার কথা। তবে ফুলকপি নিয়ে এবার একটু সমস্যা হয়েছে। সব এলাকায় ফুলকপি চাষ হয়েছে এবছর। যে কারণে দাম বেশি কমেছে।’

আরেক আড়তদার মিজান বলেন, ‘বাজারে চাহিদার চেয়ে বেশি ফুলকপি আমদানি হওয়ায় দাম অনেক কমে গেছে। কারওয়ান বাজারে ট্রাক ট্রাক ফুলকপি আসছে। ফলে দূরের এলাকা থেকে যেসব সবজি আসছে তাদের যাতায়াত ভাড়াও উঠছে না।’


মৌসুমে সব দেশে দাম কমে, বাংলাদেশে তলানিতে নামে

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হর্টিকালচার উইংয়ের অতিরিক্ত পরিচালক কেজেএম আব্দুল আউয়াল জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিশ্বের অনেক দেশেই ভরা মৌসুমে পণ্যের দাম কমে। তবে তার একটি ভারসাম্য থাকে। বাংলাদেশে সেটা নেই। মৌসুমে দাম একদম পড়ে যায়।’


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন