হিমাগার সিলগালা, শঙ্কায় দুই জেলার চাষিরা



 দিনাজপুরের বীরগঞ্জে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) সিদ্ধান্তে শাহী হিমাগার সিলগালা করায় চরম বিপাকে পড়েছেন দিনাজপুর ও ঠাকুরগাঁওয়ের আলু চাষিরা। শুধু বীরগঞ্জ নয়, পাশের ঠাকুরগাঁও জেলার কৃষকরাও এ সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। 


১৩ ফেব্রুয়ারি হিমাগারে ভাড়া কমানোর দাবিতে সড়ক অবরোধ করলে উপজেলা প্রশাসনের আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেন আলুচাষিরা। কিন্তু সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও সমস্যার সমাধান না হওয়ায় ২৩ ফেব্রুয়ারি পৌরশহরের বিজয় চত্বরে মানববন্ধন শেষে আলু ফেলে সড়ক অবরোধ করেন তারা।

এই ঘটনায় ইউএনও ফজলে এলাহী দুপুর ১২টার দিকে আলু চাষি ও ব্যবসায়ী সমিতির প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে হিমাদ্রী কোল্ড স্টোরেজ লিমিটেড, শাহী কোল্ড স্টোরেজ-৪, রাহবার কোল্ড স্টোরেজ ও শাহী কোল্ড স্টোরেজ-২ সিলগালা করে দেন। ইউএনও এর এমন হঠকারী সিদ্ধান্তে বিপাকে পরেছেন আলু চাষীরা৷ সংরক্ষণ না করতে পারায় মাঠেই নষ্ট হচ্ছে আলু৷ 


বীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, গত বছর যেখানে হিমাগারের সংরক্ষণ ফি ছিল প্রতি কেজি ৪ টাকা, এবার তা দ্বিগুণ করা হয়েছে, যা অনৈতিক। মালিকপক্ষ আলোচনায় রাজি না হওয়ায় স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ঘটনাটি বীরগঞ্জে হলেও এর প্রভাব ঠাকুরগাঁও জেলার চাষীদের মাঝে পড়েছে।


পাশাপাশি জেলা হওয়ার আলু সংরক্ষণ করতে পারছেন দুই জেলার আলুর চাষীরা। 

ঠাকুরগাঁওয়ের সদর উপজেলার মানিক নামের এক আলু চাষি জানান, ‘আমরা বছরের পর বছর ধরে এই হিমাগারেই আলু রাখি। কিন্তু এখন এটি বন্ধ থাকায় আমাদের বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নেই। মাঠে আলু রেখে দিলে তা শুকিয়ে যাবে, এতে আমরা বড় ক্ষতির মুখে পড়ব।

স্থানীয় কৃষকরা আরো জানান, ‘আমাদের ভুল বুঝিয়ে আন্দোলনে নামানো হয়েছে। মূলত কিছু মধ্যস্বত্বভোগী ও বড় ব্যবসায়ী নিজেদের স্বার্থে এ বিক্ষোভ ঘটিয়েছে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল হিমাগার বন্ধ করিয়ে আমাদের আলু মাঠে নষ্ট করা, যাতে তারা কম দামে কিনতে পারে। দ্রুত হিমাগার খুলে দিতে হবে, নাহলে তাদের আর্থিক ক্ষতির দায় প্রশাসনকেই নিতে হবে।'


শাহী হিমাগারের ম্যানেজার বলেন, 'নোটিশ ছাড়াই হিমাগার সিলগালা করা হয়েছে।


ইউএনও ও পুলিশের উপস্থিতিতে আমাদের অফিস কক্ষ ও প্রধান ফটকে তালা মেরে দেওয়া হয়। এ সময় কিছু ব্যবসায়ী আমাদের হুমকি ও গালিগালাজ করলেও প্রশাসন নীরব ছিল।’

শাহী গ্রুপের চেয়ারম্যান আরমান হোসেন বলেন, 'কী কারণে আমাদের হিমাগার সিলগালা করা হয়েছে, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের তথ্য দেওয়া হয়নি। আমাদের হিমাগারে কোনো অবৈধ জিনিস ছিল না যে সিলগালা করতে হবে। সিলগালা করার ফলে যারা আমাদের কাছ থেকে স্লিপ নিয়েছিল তাদের আলু ক্ষেতের মধ্যে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। প্রশাসন দ্রুত হিমাগার খুলে না দিলে আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হব।’


ব্র্যাকের ডিস্ট্রিবিউশন অফিসার লিটন খন্দকার বলেন, ‘আমরা শাহী হিমাগারে আলুর বীজ সংরক্ষণ করি। এটি বন্ধ থাকলে আমাদের বীজ নষ্ট হয়ে যাবে। মাঠের আলু দ্রুত সংরক্ষণ করতে না পারলে চাষিরা ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে।'


উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফজলে এলাহী বলেন, ‘জেলা প্রশাসনের নির্দেশে হিমাগার সিলগালা করা হয়েছে। তবে কৃষকদের যাতে ক্ষতি না হয়, সেই বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা চলছে।’


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন