কটিয়াদীতে চলছে ৪০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী কুড়িখাই মেলা


মোঃ হাবিব মিয়া, কিশোরগঞ্জ  :

 কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে চলছে প্রায় ৪০০ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী কুড়িখাই মেলা। শাহ শামসুদ্দিন বুখারি (রহ.) এর উরস উপলক্ষে সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) থেকে এ মেলা শুরু হয়। চলবে সপ্তাহব্যাপী।

এ মেলায় রকমারি পণ্য ছাড়াও বড় আকারের মাছ দৃষ্টি কাড়ছে দর্শনার্থীদের। এছাড়া বাউল সাধকদের আধ্যাত্মিক গান ও সুরের মূর্ছনায় মেলা প্রাঙ্গণে তৈরি হয়েছে ভিন্ন আবহ। মেলা ঘিরে উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়েছে পুরো এলাকায় জুড়ে।

জানা গেছে, প্রায় ৪০০ বছর আগে কটিয়াদী উপজেলার মুমুরদিয়া ইউনিয়নের কুড়িখাই এলাকায় আস্তানা গাড়েন ১২ আউলিয়ার অন্যতম আধ্যাত্মিক সাধক হজরত শাহ সামছুদ্দীন আউলিয়া সুলতানুল বুখারি (রহ.)। তার মৃত্যুর পর সেখানে গড়ে ওঠে মাজার।

প্রতি বছর মাঘ মাসের শেষ সোমবার থেকে শুরু হওয়া মাজার প্রাঙ্গণে বাৎসরিক উরস উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মুরিদ ও সাধকরা জড়ো হন।


সেই থেকে মাজার সংলগ্ন খোলা ময়দানে প্রতি বছর বসে এই মেলা। মেলায় ঢল নামে লাখো মানুষের। দর্শনার্থী, আগন্তুক, সাধক-ফকির ও বৈষ্ণব-বৈষ্ণবীসহ বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষের প্রাণের স্পন্দনে মুখরিত হয়ে ওঠে মেলা।


মেলায় বসেছে মৃৎ শিল্প, বাঁশ বেত শিল্পের ব্যবহার্য সামগ্রীর পাশাপাশি, বিন্নি খৈ, কদমা (তিলুয়া), বাতাসা, জিলাপি, নানান রকমের মিষ্টির দোকান। রয়েছে নাগর দোলা, যাদু, মোটরসাইকেল খেলার মৃত্যুকূপ, সার্কাস, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদি।

একই সঙ্গে একপ্রান্তে বসেছে দুর্লভ ও নানা প্রজাতির মাছের মেলা। এ মেলায় কোনো কোনো মাছ দেড় থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত মূল্যেও বিক্রি হয়। আর এ মাছের ক্রেতারা হচ্ছেন বিভিন্ন স্থানে বিয়ে দেওয়া কটিয়াদী উপজেলার মেয়েদের স্বামী। তাই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা মাছের পসরা সাজিয়ে বসেন মেলায়। বিক্রিও হচ্ছে বড় বড় রুই, কাতল, বোয়াল, চিতল, আইড়সহ নানা জাতের মাছ। কে কত বড় মাছ কিনবে তা নিয়ে চলে প্রতিযোগিতা।


সাধক লাল মিয়া বলেন, প্রায় ১০ বছর যাবত কুড়িখায় মেলায় আসছি। এখানে এলে অনেক ভক্ত-সাধকদের দেখা পাওয়া যায়। মনটা ভালো হয়ে যায়।

গোলাম রাব্বানী বলেন, দুই বছর আগে এই এলাকায় বিয়ে করেছি। এলাকার রেওয়াজ অনুযায়ী জামাইদের বড় মাছ কিনে শ্বশুরবাড়ি নিয়ে যেতে হয়। তাই মাছ কিনতে এসেছি। একটি বড় কাতল মাছ ২৮ হাজার টাকা দাম করেছি।

মেলা কমিটির সভাপতি ও কটিয়াদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাইদুল ইসলাম জানান, মেলার ঐতিহ্য ধরে রাখতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মেলায় যাতে বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি না হয় বিষয়টি খেয়াল রাখা হচ্ছে।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন