সীতাকুণ্ডে এত চোরাই তেল আসে যেভাবে!



চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে মহাসড়কের পাশে মাত্র ২৫ কিলোমিটার এলাকায় চোরাই তেলের দোকান রয়েছে ৪০টি। কম দামে কিনে বেশি দামে তেল বিক্রির লোভেই বসেছে এসব দোকান। এতে একদিকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং মালিকরা। অন্যদিকে রয়েছে নিরাপত্তার চরম ঝুঁকি। তবে অসৎ চালক-হেলপার এবং ব্যবসায়ীদের যোগসাজশে দিনকে দিন রমরমা হয়েছে এ অপকর্ম।

সম্প্রতি এমন একটি দোকান থেকে তেল কেনার সময় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর বিষয়টি আলোচনায় এলেও তেলের চোরাকারবারি বন্ধ হয়নি। প্রকাশ্যে বছরের পর বছর এসব তেল বেচাকেনা চললেও এ নিয়ে মাথাব্যথা নেই কারো। টাকার বিনিময়ে স্থানীয় ‘প্রশাসনকে ম্যানেজ করে’ এসব ব্যবসা চলে বলে অভিযোগ রয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সীতাকুণ্ড উপজেলার দক্ষিণ অংশে মহাসড়কের পরিবহন থেকে চোরাই তেল ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যবসা জমজমাট। শুধু উপজেলার কুমিরা থেকে ফৌজদারহাট-বন্দর সংযোগ সড়কের ২৫ কিলোমিটারেই রয়েছে এরকম ৪০টি দোকান। প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে ভোররাতে এসব দোকানে একের পর এক যানবাহন দাঁড়িয়ে তেল বিক্রি করে। তাদের কাছ থেকে কেনা তেল বিক্রি চলে দিনব্যাপী।

সরেজমিনে মহাসড়কের দুইপাশে দেখা গেছে, কুমিরা থেকে ফৌজদারহাট-বন্দর সংযোগ সড়কে কিছু দূর পরপর এ ধরনের চোরাই তেলের দোকান রয়েছে। প্রতিটি দোকানের সামনে ১-২ জন করে লোক বসা। এ দোকানগুলোর সামনেই তেলের লরি বা অন্যান্য পরিবহন দাঁড়ানোর পর পাইপ দিয়ে জ্বালানি তেল ট্যাংক থেকে বের করে নেওয়া হয়।


বন্দর থেকে আসা পণ্যবাহী গাড়ির চালক-হেলপার এবং বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গাড়ির চালক-হেলপাররা নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাতায়াতের জন্য যে পরিমাণ তেল পান সেখান থেকে ১০-২০ লিটার বা যতটুকু সম্ভব তা গাড়ি থামিয়ে এখানে বিক্রি করে দেন। তারা বাজারমূল্যের চেয়ে অনেক কম দামে তেল বিক্রি করায় অসাধু ব্যবসায়ীরা তা কেনেন। পরে বাজারমূল্যে বিক্রি করলেও ব্যাপক লাভ হয় তাদের।

মাসোহারার বিনিময়ে ব্যবসার পাহারা

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চোরাই তেল ব্যবসায়ী এ প্রতিবেদককে বলেন, বাজারে এক লিটার তেল যদি ১০০ টাকায় বিক্রি হয় তা আমরা কিনে নিই ৫০-৬০ টাকায়। এতে আমাদের অর্ধেক লাভ থাকে। আবার চালক-হেলপাররা কোনো বিনিয়োগ না করে শুধু তেল বিক্রি করেই হাজার হাজার টাকা আয় করছে। তাতে আমরা দুই পক্ষই লাভবান।

তিনি বলেন, মাঝে মাঝে পুলিশের সোর্স আসে। মাসে মাসে তারা দোকান অনুসারে ৩ হাজার, ৫ হাজার কিংবা ১০ হাজার করে নিয়ে যায়। পুলিশও ঝামেলা করে না। আর এখানে কখনো কোনো অভিযানও চালানো হয়নি।

গত ২৬ জানুয়ারি ফৌজদারহাট বাংলাবাজার এলাকার একটি চোরাই তেলের দোকানি তেলের গাড়ি থেকে তেল নেওয়ার সময় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। এতে ওই এলাকার ১৫টি দোকান পুড়ে অন্তত ৩ কোটি টাকার সম্পদহানি হয়। ঘটনার পর মো. শাকিল নামের ওই তেল ব্যবসায়ী পালিয়ে যান।


কুমিরা ফায়ার সার্ভিসের ইনচার্জ মো. আব্দুল্লা আল মামুন এ নিয়ে বলেন, আমরা ৯ ঘণ্টায় ওই আগুন নেভালেও তেল ব্যবসায়ীকে পাওয়া যায়নি।


মহাসড়কের ফৌজদারহাটে অবস্থিত মা ফাতেমা সিএনজি ফিলিং স্টেশনের ব্যবস্থাপক মো. রুবেল বলেন, যেসব ফিলিং স্টেশন ভাড়ায়চালিত লরি দিয়ে ডিপো থেকে তেল কিনে আনেন, তাদের অনেক চালক-সহকারী তেল চুরি করে এ ধরনের অবৈধ দোকানে বিক্রি করেন। এছাড়া কিছু ডাম্প ট্রাক, এক্সক্যাভেটর, বুলডোজার চালকও তেল চুরি করে বিক্রি করেন। এসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন