যৌক্তিক কোনো কারণ ছাড়াই সয়াবিন তেলের সংকট

 


কিছুতেই কাটছে না সয়াবিন তেলের সংকট। বাজারের অধিকাংশ দোকানে নেই বোতলজাত সয়াবিন তেল। আবার যে দোকানে আছে কিনতে গেলে জুড়ে দেওয়া হচ্ছে শর্ত। এক সপ্তাহের ব্যবধানে সরকার দুই দফা বৈঠক করেছে ভোজ্যতেল পরিশোধন ও বাজারজাতকারী কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধির সঙ্গে। তাতেও মিলছে না যৌক্তিক কোনো কারণ কিংবা সমাধান।

ঢাকার বড় বাজার মালিবাগ। যেখানে খুচরা দু-ডজনের বেশি প্রতিষ্ঠান আর কোম্পানির ডিলার রয়েছে সাত-আটজন। সেই বাজারে এখন সয়াবিন তেল নেই বললেই চলে। রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) এসব দোকান ঘুরে শুধু দুটি দোকানে তেল পাওয়া গেলো। তাও নিয়মিত ক্রেতার বাইরে সাধারণ ক্রেতাদের কাছে সেই তেল বিক্রি করছেন না বিক্রেতা।

আবার ওই বাজারে যারা তেল বিক্রি করছেন তারা তেলের সঙ্গে চাল, আটা ও চা পাতাসহ নানা ধরনের পণ্য কিনতে ভোক্তাদের শর্ত আরোপ করছেন। খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতারা বলছেন, কোম্পানি ওইসব পণ্য তেল দেওয়ার শর্তে আমাদের দিচ্ছে, যা পুরোপুরি বেআইনি। কোম্পানি তেল না দিয়ে নিজেদের দোষ ঢাকতে কাদা ছোড়াছুড়ি করছে, অন্যদের দোষারোপ করছে। তারা রমজানের আগে দাম বাড়ানোর জন্য এমনটা করতে পারে।- ভোজ্যতেল মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মওলা

এ পরিস্থিতি একমাস ধরে বেশি চলছে ঢাকাসহ দেশের সব এলাকায়। যদিও চার মাস আগে থেকেই শুরু হয় এ সংকট। তেলের সংকট কখনো কম, কখনো প্রকট হচ্ছে, আবার কোথাও কম হলেও কোথাও খুব বেশি। কিন্তু তারপরেও এ পরিস্থিতি খুব বেশি আমলে নেয়নি সরকার। ভোজ্যতেল পরিশোধন ও বাজারজাতকারী কোম্পানিগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। কোম্পানিগুলো সরবরাহ স্বাভাবিক করার প্রতিশ্রুতি দিয়েই খালাস। আর সাধারণ মানুষ তেল না কিনতে পেরে দিন কাটাচ্ছে কষ্টে।

 

তেলের এ সংকটের যৌক্তিক কোনো কারণ দেখাতে পারছে না কোম্পানিগুলো। একেক সময় দিচ্ছে একেক ধরনের তথ্য।

সংকটের শুরু
মূলত বোতলজাত তেলের এই সংকট প্রায় চার মাস ধরে চলছে। নভেম্বরে এ সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছিল। এরপর সরকার সয়াবিন তেল আমদানিতে শুল্ক-কর কমায়। যাতে আগের চেয়ে প্রতি লিটারে ১১ টাকা কম খরচ হচ্ছে তেল আমদানিতে। এরপরও আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির কথা বলে লোকসানের অজুহাত দেখিয়ে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছিল সরবরাহকারী কোম্পানিগুলো। বাধ্য হয়ে গত ৯ ডিসেম্বর তাদের সঙ্গে সভা করে প্রতি লিটারে আট টাকা দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

শুরুতে কোম্পানিগুলো বলেছিল সরবরাহ স্বাভাবিক
গত রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) তেল সংকট পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিল দেশের ভোজ্যতেল সরবরাহকারী কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিরা। ওই সময় কোম্পানির প্রতিনিধিরা দাবি করেন, তেলের কোনো সংকট নেই। বরং আগের চেয়ে সরবরাহ বেশি দেওয়া হচ্ছে।

যদিও সে সময়ও বাজারে পুরোপুরি ভিন্ন পরিস্থিতি ছিল। তেল পাওয়া যাচ্ছিল না অধিকাংশ দোকানে। তারপরেও ওই বৈঠকে সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, টিকে গ্রুপের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো গত বছরের জানুয়ারির তুলনায় এ বছরের জানুয়ারি মাসে প্রায় ২৫ শতাংশ তেলের সরবরাহ বাড়ানোর তথ্য দেন। আর তাদের মুখের কথায় ট্যারিফ কমিশন বৈঠকে দেশে ভোজ্যতেলের সরবরাহ পর্যাপ্ত রয়েছে বলে সিদ্ধান্ত নেয়। অন্য কোম্পানি কী করছে জানি না। সিটি গ্রুপ আগের চেয়ে বেশি তেল বাজারে সরবরাহ করছে।-সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা

কোম্পানি বৈঠকে তেলের সরবরাহ বাড়ানোর কথা বলে সংকটের জন্য বাজারে খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের দায়ী করে। তারা বলে, মাঠ পর্যায়ে কেউ কেউ অতিরিক্ত মজুত করে থাকতে পারে। পাইকারি ও খুচরা বাজারে কেউ কেউ অধিক লাভের আশায় বোতল কেটে খোলা তেল হিসেবে বেশি দামে বিক্রি করছে। অন্যদিকে পার্শ্ববর্তী দেশে মূল্য বেশি হওয়ায় তেল পাচার হওয়ার আশঙ্কার কথাও বলেন কোম্পানির প্রতিনিধিরা।

এসব বিষয়ে জাগো নিউজজের কথা হয় বেশ কয়েকজন খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতার সঙ্গে। তাদের দাবি, কোম্পানি প্রতি বছর রমজানের আগে পণ্যের কৃত্রিম সরবরাহ সংকট তৈরি করে দাম বাড়ায়। এবছরও ব্যতিক্রম হয়নি।

 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন