নওগাঁয় চাঁদা না দেওয়ায় প্রায় ৮ বিঘা জমিতে ধান রোপনে বাঁধা



এ.বি.এম.হাবিব, নওগাঁ  : 
নওগাঁ সদর উপজেলার হাঁসাইগাড়ী ইউনিয়নে এক গরীব কৃষক চাঁদা না দিতে পারায় তার প্রায় ৮ বিঘা জমিতে ধান রোপন দেয় নাই চাঁদাবাজরা।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, উপজেলার হাঁসাইগাড়ী ইউনিয়নের কুজাগাড়ী গ্রামের প্রায় দেড়শত পরিবারের সদস্য মিলে একটি মসজিদ কমিটি আছে। সেই মসজিদ কমিটির সভাপতি আমজাদ ও সাধারণ সম্পাদক রিংকু উদ্দীন এবং ক্যাসিয়ার নাসির উদ্দীন। নামেমাত্র সভাপতি আমজাদ হাজী থাকলেও মসজিদটি সকল কিছু পরিচালনা করে রিংকু, নাসির,রুস্তম সহ আরো কয়েকজন।

স্থানীয় রহিম মোল্যা জানায়, তার প্রায় ৮/৯ বিঘা ধানের জমি পাশবর্তী মাখনা কমলকোটা মৌজার মাঠে আছে। সেখানে তার জমির সামনে ডহর আছে প্রায় ১৫ কাঠা। সে ওই ডহর জমির মাটি কেটে সমান করে ধান লাগানোর উপযুক্ত করে, প্রতি বছর ধান চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করতো। সেই জমিটি মসজিদের নাম করে রিংকু,নাসির,রুস্তম সহ কয়েকজন মিলে জোরপূর্বক খুন,জখমের হুমকি দিয়ে দখল করে। তাকেও তার ছেলেদের জমি নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে খুন করে লাশ গুম করার হুমকি অব্যহত রাখেছে। পরবর্তীতে রহিম মোল্যা নওগাঁ কোর্টে ১০৭ ধারার নিরাপত্তা চেয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। এ বছরে ধান লাগানোর সময় হলে গত (৬জানুয়ারি) সোমবার রহিম মোল্যার ছেলে বুলবুল হাসান তাদের মায়ের খারিজকৃত জমিতে হাল চাষ করতে থাকা অবস্থায় সাঈদ,রুস্তম,দুলাল,সোহরাব ইউক্যালিপটাসের ডাল,বাহুক,লাঠি,কোদাল হাতে নিয়ে বুলবুকে গালিগালাজ করতে করতে এসে এলোপাতাড়ি ভাবে মারপিট করতে শুরু করে। তার পা থেকে পিঠ ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় চারি দিক থেকে নির্দয়,নিষ্ঠুর ভাবে মারপিট করে। তার চিৎকারে ছানোয়ার,এমরান ও তার বাবা দৌড় দিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করেন। এরপরও সন্ত্রাসীরা কোথাও বিচার চাইতে গেলে,বা তারা যদি জানতে পারে তাহলে বাবা ও ছেলেকে খুন করবে বলে শাসিয়ে যায়। পরবর্তীতে বুলবুলকে উদ্ধার করে নওগাঁ সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে ৩দিন চিকিৎসা শেষে গ্রামবাসীরা কেহই তাদের বিচার করতে পারবে না জানালে নওগাঁ কোর্ট আবারও মামলা করেন।
বুলবুল ও তার বাবা রহিম মোল্যা জানান, এখনো তাদেরকে হুমকি অব্যহত রেখেছে। মাঠে সকলের ধান লাগানো শেষ হয়েছে কিন্তু তাদের প্রায় ৮/৯ বিঘা জমি খালি ফেলে রেখেছে। তারা বলেন, তাদেরকে গ্রামের মধ্যে পেলেই কোন দূর্ঘটনা ঘটাবে, মাঠে ধান লাগাতে যাওয়া তো দুরের কথা। আসামীরা তাদেরকে বলেছে সকল মামলা উঠিয়ে নিতে হবে এবং ৮০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে, নইলে যেখানেই তাদের বাবা ছেলেদের পাইবে খুন করে লাশ গুম করবে বলে হুমকি অব্যহত রেখেছে তাই তারা স্বাধীন ভাবে গ্রামের মধ্যে চলাফেরাও করতে পারছে না বলে জানান। সাংবাদিকরা তথ্য সংগ্রহের জন্য বাদী বুলবুল ও তার বাবা রহিম মোল্যার সাথে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে উক্ত আসামীগন সহ আরো অজ্ঞাত লোকেরা তাদেরকে সাংবাদিকদের সামনেই মারধর করতে উত্তেজিত হয়। সাংবাদিকরা তাদেরকে অনেক কিছু অনুরোধ করে পরিস্থিতি শান্ত করেন। এ বিষয়ে মসজিদের সাধারণ সম্পাদক রিংকু এর সাথে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে, তিনি এ সকল বিষয় অস্বীকার করেন। ভুক্তভোগীরা প্রশাসনের কাছে ন্যায় বিচার ও ধান লাগানোর সময় চলে যাচ্ছে তবু ধান লাগাতে না দেওয়া, হয়রানি, পেরেশানি, অন্যায় ভাবে মারপিট করা,চাঁদা দাবী করাসহ খুন করে লাশ গুম করার হুমকির সঠিক বিচারের আকুল আবেদন করেন। 

এলাকাবাসী জানায়, 
প্রায় দেড়শ পরিবার থেকে মসজিদের নামে প্রায় ১৪ বিঘা ধানের জমি দান করেছে এর সাথে তারা জোরপূর্বকও প্রায় ৬/৭ বিঘা সরকারি খাস জমি দখল করে নিয়ে আছে। এরপর একটি বিল ও পুকুরও দখল করে নিয়ে আছে। এ সবকিছু থেকে যা আয় হয় তা কাউকেই সঠিক ভাবে হিসেব না দিয়ে রিংকু,নাসির,রুস্তম মিলে তাদের মধ্যেই ভাগ ভাটোয়ারা হয়ে থাকে বলে স্থানীয়রা জানায়। স্থানীয়রা জানায়,বর্তমানেও প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা মসজিদের ক্যাস আছে কিন্তু তারা কখনোই তার সঠিক হিসেব কাউকেই দেয় নাই। শুধু বলে মসজিদের কাজ হবে, কাজ হবে বলে কাটিয়ে দেয়। এর কয়েক বছর আগে এই মসজিদ কমিটির নাম দিয়ে এ সকল আসামিরা সরকারি প্রায় কয়েক লক্ষ টাকার গাছ কেটে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এলাকাবাসী জানতে পেরে প্রশাসনকে খবর দিলে, নওগাঁ থেকে ইউএনও এবং এসিল্যান্ড সাহেব তা বন্ধ করে দেন। এখনো সেই গাছ গুলো সেই জায়গাতেই পড়ে আছে। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন