দেশে সবচেয়ে বেশি তরমুজ উৎপাদন হয় বরিশাল বিভাগে। তবে দিন দিন তরমুজ চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন চাষিরা। তরমুজ চাষ করে বারবার লোকসানের মুখে পড়ায় অনেকে অন্য পেশা চলে গেছেন। কেউ কেউ অন্য ফল আবাদ করছেন।
বরিশাল সদর উপজেলার লাহারহাট সংলগ্ন চরলড়াইপুরের বাসিন্দা মোনছের হাওলাদার এবার বাঙ্গি চাষ করেছেন। তুলনামূলক ক্রেতা চাহিদা কম হলেও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মৌসুমের রসালো এই ফল চাষ করে সংসার চালাবেন। অথচ বছর দুই আগেও পুরোদস্তুর তরমুজ চাষি ছিলেন তিনি।
মোনছের হাওলাদার বলেন, নদীর পলিমাটিতে পত্তন হওয়া চরে তরমুজের ফলন খুব ভালো হতো। ক্ষেতে ১৫-২০ কেজি ওজনের তরমুজও হতো। তারপরও লাভ ঘরে তুলতে পারতাম না। ঋণের টাকা পরিশোধ করতে পারছিলাম না। শেষে বাপ-দাদার ব্যবসা তরমুজ চাষই ছেড়ে দিয়েছি।
তিনি বলেন, পুরোপুরি আড়তদারদের কব্জায় বাজার নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় চাষিরা মূলধন হারিয়ে ফেলছেন। আমি এখনো ৬৭ হাজার টাকা ঋণী। অথচ দুই বছর হলো তরমুজ চাষ ছেড়েছি।
শুধু মোনছের হাওলাদারই নয়, একই গ্রামের আবু, রশিদ, সাদ্দামও ছেড়ে দিয়েছেন তরমুজ চাষ। আব্দুর রশিদ বলেন, ক্ষেতে ফলন ফলাই আমরা, অথচ কত দামে বিক্রি হবে তা নির্ধারণ করেন আড়ৎদারেরা। তাদের কিন্তু কোনো লোকসান নেই। ক্ষেত থেকে পরিবহন খরচ দিয়ে আড়তে পৌঁছে দেই। তারপরও দাম পাই না। দুই মৌসুম আগে আমিও ছেড়েছি তরমুজ চাষ। শেষ বার ক্ষেত থেকে ১১০০ পিস তরমুজ নিয়ে গেলাম বরিশালের আড়তে। সেই তরমুজের দাম দেয় ৭ হাজার। সাড়ে ৬ টাকা প্রতি পিস। এরপরই সিদ্ধান্ত নিই আর তরমুজ চাষ করব না।
তিনি বলেন, দুই লাখেরও বেশি ঋণ ছিলাম। প্রায়ই দিয়ে ফেলেছি। এখন ৪৬ হাজার টাকা পাবে। এসব টাকা আথালের গরু বিক্রি করে পরিশোধ করেছি। এখন অন্যের ক্ষেতে মজুরি করি। এছাড়া উপায় নেই। মাঠের কৃষকদের কথা কোনো সরকারও শোনে না, কোনো নেতাও শোনে না।
গত মৌসুমে এক হাজার কোটির বেশি টাকায় বিক্রি হয়েছে তরমুজ। বিশেষ করে ভোলা ও পটুয়াখালী জেলায় প্রচুর তরমুজ হয়। তবে বিভিন্ন কারণে সঠিক বাজারমূল্য পান না কৃষক। কৃষকরা না বাঁচলে তরমুজের যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে তা টিকিয়ে রাখাটা মুশকিল হবে।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তর বরিশাল বিভাগের উপ-পরিচালক এসএম মাহবুব আলম
তরমুজের জমিতে খিরাই চাষ করেছেন সাদ্দাম হোসেন। তিনি বলেন, আনুমানিক ৪-৫ কেজি থেকে ১৫-১৬ কেজি ওজনের তরমুজের একই দাম। ৪-৫ কেজির কম ওজনের তরমুজ বিনা মূল্যেই আড়তে দিয়ে আসতে হয়। আমরা পিস হিসেবে বিক্রি করলেও বাজারে শুনেছি কেজি দরে বিক্রি হয়।
শুধু চর লড়াইপুরেই নয়, এমন চিত্র বিভাগের অন্যান্য জেলায়ও। মৌসুমের জনপ্রিয় ফল তরমুজের বাজার ভালো থাকলেও দাম না পেয়ে চাষে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন চাষিরা। অনেকেই অন্যান্য ফসলে স্থানান্তরিত হচ্ছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যেও মিলেছে এর প্রমাণ।